COP30 সম্মেলনে নতুন ‘জাতিসংঘ জলবায়ু পরিষদ’ গঠনের প্রস্তাব

Apr 16, 2025 - 20:37
COP30 সম্মেলনে নতুন ‘জাতিসংঘ জলবায়ু পরিষদ’ গঠনের প্রস্তাব

মোঃ আতিকুল ইসলাম

২০২৫ সালের COP30 জলবায়ু সম্মেলন উপলক্ষে বৈশ্বিক জলবায়ু শাসনব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছে স্বাগতিক দেশ ব্রাজিল। দেশটির পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে—বিদ্যমান UNFCCC কাঠামোর বাইরে গিয়ে গঠন করা হোক একটি নতুন ও স্বাধীন ‘জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন পরিষদ’। জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় এটি হবে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর নীতি নির্ধারণী অঙ্গসংস্থা।

আসন্ন COP30 সম্মেলন ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে ব্রাজিলের বেলেম শহরে, অর্থাৎ অ্যামাজনের কেন্দ্রবিন্দুতে অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ও সম্মেলনের মনোনীত সভাপতি রাষ্ট্রদূত আন্দ্রে কোরেয়া দো লাগো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপনের ঘোষণা দেন।

UNFCCC (United Nations Framework Convention on Climate Change) ১৯৯২ সাল থেকে আন্তর্জাতিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আলোচনার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে আসছে। তবে ব্রাজিল সরকার মনে করছে, এই কাঠামোটি বর্তমানে পর্যাপ্ত কার্যকর নয়। বিশেষ করে, উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অনীহা, জলবায়ু অর্থায়নে স্বচ্ছতার অভাব এবং বাধ্যতামূলক কোন নজরদারি ব্যবস্থার অনুপস্থিতি এর প্রধান দুর্বলতা।

ব্রাজিলের প্রস্তাবিত ‘জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন পরিষদ’ হবে একটি স্থায়ী, স্বতন্ত্র ও সিদ্ধান্তগ্রহণে সক্ষম সংস্থা। এর প্রস্তাবিত কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে—

  • দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে বাধ্যবাধকতা আরোপ
  • প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন
  • জলবায়ু অর্থায়ন মনিটরিং
  • অভিযোজন ও প্রশমন কার্যক্রমে বৈশ্বিক সমন্বয়
  • নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ ও শাস্তিমূলক সুপারিশ প্রদান


ব্রাজিল বলছে, এটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মতো একটি “জলবায়ু নিরাপত্তা” ফোরাম হবে, যেখানে সদস্য রাষ্ট্রের জবাবদিহি নিশ্চিত করা যাবে।

এই প্রস্তাব ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। জলবায়ুবিষয়ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিও, বিজ্ঞানী ও উন্নয়নশীল দেশগুলো এটি ‘সময়োপযোগী’ এবং ‘দীর্ঘদিনের দাবি’ হিসেবে প্রশংসা করলেও, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ এর কাঠামো ও এখতিয়ার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা UNFCCC-এর ভেতর থেকেই সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন।

ব্রাজিল নিজেকে গ্লোবাল সাউথ তথা উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রতিনিধিত্বকারী নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। প্রেসিডেন্ট লুলা বলেন, “জলবায়ু ইস্যুতে আমরা এখন আর প্রতিশ্রুতির রাজনীতি চাই না—আমরা বাস্তবায়ন চাই।” অ্যামাজন রক্ষার অতীত রেকর্ড এবং পরিবেশ সংরক্ষণে বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে ব্রাজিল আন্তর্জাতিকভাবে নিজের নেতৃত্ব জোরদার করছে।

এই প্রস্তাব যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি জলবায়ু শাসনব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। বিশ্ব এখন তাকিয়ে রয়েছে—জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলো কীভাবে এই প্রস্তাবকে গ্রহণ করে, এবং COP30 সম্মেলন আদৌ একটি বাস্তবধর্মী পদক্ষেপের সূচনা ঘটাতে পারে কিনা।