বিদেশে পাঠানোর নামে কোটি টাকার প্রতারণা: কুখ্যাত সানি আহমেদ এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত প্রতারক সানি আহমেদ প্রতারণার নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মানুষের স্বপ্নকে পুঁজি করে গড়ে তুলেছেন এক ভয়ঙ্কর প্রতারণার সাম্রাজ্য। বিভিন্ন অঞ্চলের সহজ-সরল মানুষদের বিদেশে পাঠানোর নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তিনি আজও বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সানি আহমেদ কিছুদিন আগেই পর্তুগাল থেকে দেশে ফিরেছেন। অথচ তার বিরুদ্ধে একাধিক প্রতারণার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার বা আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যমতে, এই প্রতারকের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ১৫ জনেরও বেশি ভুক্তভোগী সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন। তাদের অভিযোগ অনুযায়ী, সানি আহমেদ ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও কানাডায় চাকরি দেওয়ার নামে জনপ্রতি ৮ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। কিন্তু বহুদিন পেরিয়ে গেলেও কেউই বিদেশে যেতে পারেননি এবং অর্থ ফেরতও পাননি।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে আছেন চাঁদপুরের আব্দুল আহাদ, যিনি ১৪ লাখ টাকা দিয়েছেন সানির হাতে। রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন দিয়েছেন ৮ লাখ টাকা, এবং গাজীপুরের ইসমাইল হোসেন শান্ত দিয়েছেন ১১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। প্রত্যেকেই অভিযোগ করছেন, টাকার বিনিময়ে কাগজপত্র প্রস্তুত করা হলেও ভিসা বা টিকিট কিছুই তারা পাননি। বরং সময় গড়াতে থাকলে সানি ফোন বন্ধ করে দেন কিংবা হুমকি দিতে থাকেন।
এদের একজন, ইসমাইল হোসেন শান্ত বলেন, “এই টাকাগুলো জমি বন্ধক দিয়ে জোগাড় করেছি। এখন আমি পথে বসেছি। সানি শুধু টাকা নেননি, আমাদের ভবিষ্যতটাও কেড়ে নিয়েছেন।”
অভিযোগ রয়েছে, সানি আহমেদ কৌশলে প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থেকে নিজেকে একজন সফল ‘কনসালটেন্ট’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তার নামে কোনো লাইসেন্সকৃত ট্রাভেল এজেন্সি বা বিদেশে কর্মী প্রেরণের অনুমোদন নেই। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তিনি নিজেকে ‘ইউরোপিয়ান মাইগ্রেশন এক্সপার্ট’ বলে দাবি করেন, যা মুলত প্রতারণার একটি কৌশলমাত্র।
ভুক্তভোগীরা ইতোমধ্যে একাধিকবার থানায় জিডি ও মামলা করার চেষ্টা করেছেন, তবে রহস্যজনক কারণে এখনও পর্যন্ত সানির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং অভিযোগ উঠেছে, সানি আহমেদ প্রতিবার অভিযোগ উঠলে কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে আবার নতুন কৌশলে প্রতারণা শুরু করেন।
জনগণের দাবি, দ্রুত এই প্রতারকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে তার সম্পত্তি জব্দ ও ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে এমন প্রতারকদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ সাধারণ মানুষের স্বপ্ন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমরা অভিযোগ পেলে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করবো। কেউ যদি প্রতারিত হন, তাদেরকে থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দিতে অনুরোধ করছি।”
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—প্রতিনিয়ত এমন প্রতারণার ঘটনা ঘটে চললেও, কেন অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে? জনমনে এই প্রশ্নই এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।