কার্বন বাজারের স্বচ্ছতা বাড়াতে UNFCCC-এর নতুন মানদণ্ড অনুমোদন

মোঃ আতিকুল ইসলাম
জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন (UNFCCC) সম্প্রতি প্যারিস চুক্তির অধীনে পরিচালিত আন্তর্জাতিক কার্বন বাজার ব্যবস্থার জন্য দুইটি নতুন মানদণ্ড অনুমোদন করেছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে, জলবায়ু প্রকল্পগুলোর নির্গমন হ্রাসের হিসাব আরও স্বচ্ছ, নির্ভরযোগ্য ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিসম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে জাতিসংঘ কর্তৃপক্ষ।
UNFCCC-এর অধীনে গঠিত ‘Article 6.4 Supervisory Body’ সম্প্রতি অনুমোদন করেছে—
- বেসলাইন নির্ধারণ পদ্ধতি: একটি প্রকল্প না থাকলে পরিবেশে কতটা নির্গমন হতো, তার বৈজ্ঞানিক অনুমান নির্ধারণের মানদণ্ড।
- কার্বন হ্রাস পরিমাপ পদ্ধতি: বাস্তবায়িত প্রকল্পটি নির্গমন কতটা কমিয়েছে, তার নির্ভুল হিসাব নির্ধারণের মানদণ্ড।
এই মানদণ্ড দু’টি গ্লোবাল কার্বন ক্রেডিট বাজারে ব্যবহৃত হবে, বিশেষ করে Paris Agreement Crediting Mechanism (PACM)-এর আওতায়।
নতুন এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো, কার্বন ক্রেডিট বাজারকে ভবিষ্যতের বিনিয়োগের জন্য আরও গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে হাজারো প্রকল্প দাবি করে, তারা নির্গমন হ্রাস করছে। কিন্তু অনেক সময়েই এগুলোর মধ্যে যথেষ্ট স্বচ্ছতা ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ থাকে না। নতুন মানদণ্ডের ফলে একদিকে যেমন প্রকল্পগুলোকে কঠিন মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে, অন্যদিকে কার্বন ক্রেডিট ক্রেতারা নিশ্চিত হবেন তারা প্রকৃত নির্গমন হ্রাসের বিপরীতে অর্থ প্রদান করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মানদণ্ড উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এক নতুন সুযোগ হয়ে উঠতে পারে। কারণ উচ্চ মানসম্পন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক কার্বন বাজারে অংশ নিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে। একই সঙ্গে জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারবে।
তবে বাস্তবায়নের পথে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকছেই। প্রযুক্তিগত দক্ষতার ঘাটতি, প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি, এবং বিভিন্ন দেশের আলাদা নিয়ন্ত্রক কাঠামো এই পদক্ষেপের বাস্তব সফলতায় প্রভাব ফেলতে পারে। UNFCCC জানিয়েছে, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তারা প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহায়তা ও অর্থায়ন সহায়তা বাড়াবে।
UNFCCC-এর এই নতুন সিদ্ধান্তকে অনেকেই ‘টাইমলি ও গেম-চেঞ্জিং’ উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। জলবায়ু নীতিতে কার্যকরতা বাড়াতে এবং কার্বন বাজারকে বিশ্ববাসীর আস্থার জায়গায় উন্নীত করতে এ ধরনের বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।