চাপের মুখে ইরানের কঠিন শর্ত মেনে নিল যুক্তরাষ্ট্র?

মোঃ তানভীর খান
মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্ব কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে আবারও উঠে এসেছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র। সাম্প্রতিক সময়ে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লেও হঠাৎ করেই কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি লক্ষ করা গেছে। সূত্র বলছে, ইরান যে কঠিন শর্ত দিয়েছিল, তা আংশিকভাবে মেনে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যদিও বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনও আসেনি।
২০১৫ সালে সই হওয়া ঐতিহাসিক ‘জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন’ (JCPOA), যা ইরান পারমাণবিক চুক্তি নামে পরিচিত, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সেই সিদ্ধান্তের পর থেকেই ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। এরপর ট্রাম্প ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ’ নীতির মাধ্যমে ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন, যার ফলে দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়ে।
২০২৫ সালের শুরু থেকে ইরান বারবার ঘোষণা দিয়ে আসছে, তারা চুক্তিতে ফিরতে চায়, তবে সেটা হবে তাদের শর্ত অনুযায়ী। তেহরানের দাবি, চুক্তি নবায়নের আগে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে এবং পূর্বের প্রতিশ্রুতিগুলো মানতে হবে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, “চাপ নয়, সমতা ও সম্মানই ইরানের কূটনীতির শর্ত।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান জানিয়েছেন, তারা পরোক্ষভাবে হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগে রয়েছে। তবে যেকোনো চুক্তির জন্য আগে 'বাস্তবিক পদক্ষেপ' দেখতে চায় ইরান।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুরু থেকেই বলেছেন, তিনি ইরানের সঙ্গে পুনরায় চুক্তিতে ফিরতে চান, তবে তার প্রশাসন চায় “দীর্ঘমেয়াদি এবং শক্তিশালী চুক্তি”। ইরানের শর্ত মেনে নেওয়া না হলেও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার ইঙ্গিত দিয়েছে। বিশেষ করে মানবিক খাতে ত্রাণ, ওষুধ এবং খাদ্যসামগ্রী আমদানিতে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ওমান এবং কাতারের মধ্যস্থতায় ওয়াশিংটন ও তেহরান গোপন আলোচনায় বসেছে, যেখানে ইরানের বেশ কিছু দাবির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা—বিশেষ করে ইসরায়েল-গাজা সংঘর্ষ, লেবাননে হিজবুল্লাহর তৎপরতা এবং হুতি বিদ্রোহীদের হামলার কারণে যুক্তরাষ্ট্র চায় না ইরানের সঙ্গে আরও একাধিক ফ্রন্টে উত্তেজনা তৈরি হোক। ওয়াশিংটনের একটি থিংক ট্যাংক ‘মিডল ইস্ট পলিসি কাউন্সিল’-এর বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু স্মিথ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এখন ‘ব্যবহারিক সমঝোতা’ খুঁজছে। তারা জানে, চাপ প্রয়োগের নীতি ব্যর্থ হয়েছে, এখন দরকার বাস্তবসম্মত কূটনৈতিক সমাধান।”
যদিও কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণা দেয়নি, তবে উভয় দেশের রাষ্ট্রদূতদের একাধিকবার ইউরোপে দেখা গেছে, বিশেষ করে সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ায়। সূত্র বলছে, এখনো চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি, তবে অন্তর্বর্তী সমঝোতায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা জোরালো।
একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, নতুন চুক্তিতে ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ৬০% থেকে কমিয়ে আনতে সম্মত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের নিয়ন্ত্রণে আরও কিছু সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র কয়েকটি প্রধান নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা ভাবছে।
তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরও যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান যদি পারস্পরিক স্বার্থে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে, তবে তা কেবল দুটি দেশের জন্য নয়, বরং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের জন্য শান্তির বার্তা বয়ে আনবে। তবে এই শান্তি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা নির্ভর করবে উভয় দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আস্থার ওপর।
আপনি চাইলে এর সঙ্গে একটি ইনফোগ্রাফিক, টাইমলাইন, বা ব্যাকগ্রাউন্ড সেকশনও সংযুক্ত করে একটি পূর্ণাঙ্গ ফিচার বানানো যেতে পারে। বললে আমি তাও তৈরি করে দিতে পারি।