২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ❑ ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি ❑ শনিবার

শিবসা নদীর চর ভরাটিয়া জায়গা দখলের মহোউৎসব

অনলাইন ডেস্ক, অধিকরণ ডট কম

অধিকরণ অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

বিজ্ঞাপন

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি:

খুলনার পাইকগাছায় চলছে শিবসা নদীর চর ভরাটিয়া জায়গা দখলের মহোউৎসব। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে দুই একটি অভিযান পরিচালিত হলেও তাহা সামান্য। আবার অনেক সময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজ বন্ধ করে দিলেও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা বদলি হওয়ার সুযোগে আবারও দখলদাররা তাদের কার্যক্রম অব্যহত রাখে। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে পাইকগাছা মৎস্য আড়ৎদারী সমিতির বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে শিবসা নদীর চরভরাটিয়া জায়গায় তারা পাকা ঘর নির্মাণ করছে। গত প্রায় ৬ মাস ধরে মৎস্য আড়ৎদারী সমিতি ওই স্থাপনা তৈরী করছে বলে স্থানীরা জানিয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এদিকে শিবসার চর ভরাটিয়া জায়গায় দখল করে পাকা স্থাপনা তৈরী করায় এলাকায় নানান গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, এক সময়ের খরস্রোত শিবসা নদী কালের বিবর্তে এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। একসময় এই নদীতে ষ্টিমার, ল চলাচল করতো। পাইকগাছা থেকে খুলনায় যাতয়াতের মাধ্যম ছিল এই নদী পথ। খুলনা থেকে কম খরচে নৌকায় করে মালামাল আসত পাইকগাছাতে। অথচ এখন সেই নদী দিয়ে মানুষ পায়ে হেঁটে পার হয়। পাইকগাছা শিববাড়ি ব্রিজ হতে হাড়িয়া নদীর মুখ পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত নদী একেবারে ভরাট হয়ে গেছে। এখন এই এলাকা দিয়ে কোন পানি সরবরাহ হয়না বলে পানি কমিটির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।

এদিকে এই শিবসা নদীর পাড়ে ২০০০ সালে ক্রয়কৃত জমিতে গড়ে ওঠে পাইকগাছা মৎস্য কাটা। সেই সময় থেকে তারা সেখানে তাদের কাটার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। পরবর্তিতে কাটার জায়গা আরো বৃদ্ধি করার লক্ষে শিবসা নদীর চর ভরাটিয়া জায়গায় পাকা স্থাপনা তৈরী কাজ শুরু করে মৎস্য আড়ৎদারী সমবায় সমিতি কর্তৃপক্ষ। গত প্রায় ৬ মাস আগে থেকে নদীর ভরাট হওয়া জায়গায় পাঁকা স্থাপনা তৈরীর সময় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম কাজ বন্ধ করে দেন। সে সময় নির্বাহী অফিসার জানান, স্বাভাবিক জোয়ারের সময় পানি যে পর্যন্ত উঠবে সেই পর্যন্ত নদীর জায়গা। কোনভাবে নদী জায়গা দখল করে পানির প্রবাহ বন্ধ করা যাবে না। পরবর্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বদলির সুবাদে নতুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোগদান করার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এবং বিগত ৭ জানুয়ারীর জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে পুজি করে মৎস্য আড়তদারী সমবায় সমিতি কর্তৃপক্ষ আবারো কাজ শুরু করেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। যদিও বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে স্থাপনা তৈরীর কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

পাইকগাছা মৎস্য আড়ৎদারী সমবায় সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন ও সম্পাদক মিঠু নায়েব জানান, আমরা জমি কিনে মৎস্য আড়ৎ তৈরী করেছি। শিবসা নদী দখল বিষয়ে তারা বলেন, আমরা নদীর জায়গা দখল করিনি। ২০০০ সালে সমিতির নামে জমি রেজিস্ট্রি করে আমরা কাটা পরিচালনা করে আসছি। শিবসা নদীর তীরের জমি হওয়ায় সে সময় আড়ৎ মালিকরা উচু জমিতে আড়ৎ নির্মান করে বাকি জমি নিচু হওয়ায় কারনে পতিত থাকে। সেখানেই আমরা ঘর তৈরী করছি। ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তা লতিফা আক্তার সরকারী সার্ভেয়ার নিয়ে জরিপ করে দেখেছেন। যেখানে আমরা ঘর তৈরী করছি তার পরেও আরো ৪০ ফুট জায়গা পাবো। পাইকগাছা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী রাজু আহম্মেদ হাওলাদার জানান, আমাদের ওয়াপদা বাদে সব জমি ভূমি অফিসের। তারপরেও আমরা দেখেছি এবং উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

গদাইপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা লতিফা আক্তার জানান, আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যারের নির্দেশে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। স্যারের নির্দেশে আমি কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। পরে জরিপ করে দেখেছি তাদের কাগজ অনুযায়ী এখনও তারা আরো জায়গা পাবে। তবে ব্যক্তি মালিকনা জমি যদি ভাঙ্গনে নদীতে চলে যায় তাহলে নদী ভরাট হলে ওই জমি নিতে হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পরেননি তিনি। পাইকগাছা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছুটিতে থাকায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমীন এ প্রতিনিধিকে বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছি। এখন কাজ বন্ধ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জরিপ করে দেখে আমাদের জমি হলে পাঁকা স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়া হবে। কেহ নদী দখল করে স্থাপনা তৈরী করতে পারবে না বলে উপজেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে পাইকগাছা উপজেলা পানি কমিটির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মলঙ্গী জানিয়েছেন, শিবসার চর ভরাটিয়া জায়গা কেহ দখল করতে পারবে না। নদীর প্রবাহ বন্ধ রেখে কেহ জায়গা দখল করলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল দখলদারদের উচ্ছেদ করার জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, ইতিপুর্বে আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম সকল দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য। নদীর চলমান প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য যা যা করার দরকার আমরা পানি কমিটির পক্ষ থেকে সেগুলি করার চেষ্ঠা করবো। পাইকগাছা-কয়রার সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান বলেন, নদীর চর ভরাটিয়া জায়গা কেহ দখল করে রাখতে পারবে না। আমি দীর্ঘ দিন ধরে খাল-বিল নদ-নদী নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। নদীর প্রবাহ কেহ বন্ধ করে রাখতে পারবে না, তাই তিনি যত শক্তিশালী ব্যক্তিই হোন না কেন।

বিজ্ঞাপন

সংবাদটি শেয়ার করুন

নিউজলেটার সাবসক্রাইব

জনপ্রিয়

আপনার জন্য আরো কিছু সংবাদ
সম্পর্কিত

পর্যটন ব্যবসা এগিয়ে নিতে নেপাল-বাংলাদেশ এলায়েন্স গঠন

কাঠমান্ডু (নেপাল) সংবাদদাতা নেপাল বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ অ্যাসোসিয়েশন (এনবিএফএ) গতকাল সকালে...