টেস্টে সৃষ্টি হলো সর্বোচ্চ বাউন্ডারির রেকর্ড

প্রকাশঃ Jul 9, 2025 - 11:41
টেস্টে সৃষ্টি হলো সর্বোচ্চ বাউন্ডারির রেকর্ড

আজকের এই দিনে (৯ জুলাই) ক্রিকেটের ইতিহাসে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। কিছু ঐতিহাসিক মাইলফলক সৃষ্টি হয়েছিল এদিন। আজ থেকে ৬০ বছর আগে এক ইংরেজ ব্যাটার টেস্ট ক্রিকেটে গড়েছিলেন সর্বোচ্চ বাউন্ডারির কীর্তি। আজকের টি-টোয়েন্টির যুগে কোনো মারকুটে ব্যাটার এই কীর্তি ভাঙতে পারেননি এখনও।আজকের এই দিনে জন্ম নিয়েছেন বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারও। সব মিলিয়ে আজকের দিনে ক্রিকেট ইতিহাসে কী কী ঘটেছিল, তার খানিকটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হলো১৯৬৫: জন এড্রিচের সেই রেকর্ড গড়া ইনিংস আজ থেকে ৬০ বছর আগে, ১৯৬৫ সালের ঘটনা। হেডিংলিতে মুখোমুখি ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড। ওই টেস্টে ইংলিশ ব্যাটার জন এড্রিচ এক অবিশ্বাস্য রেকর্ড গড়েন। তিনি খেলেন ৩১০ রানের অপরাজিত একটি ইনিংস।

যেখানে তিনি সর্বাধিক বাউন্ডারি মারার রেকর্ড গড়েন।টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এক ইনিংসে বাউন্ডারি থেকে তার চেয়ে বেশি রান আর কেউ সংগ্রহ করতে পারেনি এখনও পর্যন্ত। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার উইয়ান মুলডারের সামনে সুযোগ (৪৯ চার ও ৪ ছক্কা, মোট ৫৩টি বাউন্ডারি) ছিল; কিন্তু তিনি নিজেই সে উচ্চতায় পৌঁছার আগে ইনিংস ছেড়ে দেন।হেডিংলির ওই ম্যাচে এড্রিচের ব্যাট থেকে আসে ৫২টি চার এবং ৫টি ছক্কার মার। অর্থ্যাৎ ৩১০ রানের মধ্যে ২৩৮ রানই আসে চার এবং ছক্কা থেকে। যা তার পুরো ইনিংসের ৭৭ ভাগ। একবার কল্পনা করুন, সেই ৬০ বছর আগেও কি ধরনের মারকুটে ব্যাটার ছিলেন এড্রিচ!পুরো ম্যাচে তিনি ক্রিজে অটল থেকে ইংল্যান্ডকে এক ইনিংস ও ১৮৭ রানের ব্যবধানে জয় এনে দেন। ওই ম্যাচে নিউজিল্যান্ড দুই ইনিংস মিলে এড্রিচের এক ইনিংসের তুলনায় মাত্র ৪৯ রান বেশি করতে পেরেছিল।নিউজিল্যান্ডের তুলনামূলক দুর্বল বোলিং আক্রমণের নেতৃত্বে ছিলেন ডিক মটজ, ব্রুস টেলর, রিচার্ড কোলিঞ্জ এবং ব্রায়ান ইউইল। এদেরকে তিনি নির্মমভাবে শাস্তি দেন।১৯৮২: ভারতের বিপক্ষে ইয়ান বোথামের রেকর্ড গড়া ইনিংসসর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার ভাবা হয় ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথামকে। ১৯৮২ সালের এই দিনে তিনি তার সেরা এবং বিধ্বংসী ইনিংসটি খেলেন।ওভালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে কিংবদন্তি ইংলিশ অলরাউন্ডার বোথাম তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ২০৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংসটি খেলেছিলেন। এই ইনিংস যেন এক ওয়েস্টার্ন সিনেমার দৃশ্য, যেখানে বোথাম ভারতীয় বোলারদের তছনছ করে দিচ্ছিলেন।উইজডেন অ্যালম্যানাকের ভাষায়, ‘তিনি অসাধারণ উগ্রতার সঙ্গে ড্রাইভ করেন এবং দিলীপ দোশির একটি বলে তার সোজা ছক্কা প্যাভিলিয়নের ছাদে গর্ত তৈরি করে ইতিহাসে চিহ্ন রেখে যায়।’

এছাড়া, তার একটি জোরালো শট সিলি পয়েন্টে থাকা সুনিল গাভাসকারের বাঁ-পায়ের হাড় ভেঙে দেয়। মাত্র ২২০ বলে খেলা এই ডাবল সেঞ্চুরি তখন টেস্ট ক্রিকেটের দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ে। যদিও বর্তমানে এটি সেরা দশেও নেই।এটি ছিল বোথামের ৫১তম টেস্টে দশম সেঞ্চুরি। তবে, তার পরবর্তী ৫১ টেস্টে তিনি মাত্র চারটি সেঞ্চুরি করতে পারেন।

২০২৩: হেডিংলিতে ইংল্যান্ডের রুদ্ধশ্বাস জয়২০২৩ সালের অ্যাশেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্ট ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় হেডিংলিতে। এই ম্যাচে ইংল্যান্ড রান তাড়া করে এক রোমাঞ্চকর জয় তুলে নেয়। যা ছিল ওই সিরিজে ইংল্যান্ডের প্রথম। ক্রিস ওকস এবং মার্ক উডের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ইংল্যান্ড ২৫১ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় ছিনিয়ে আনে।ম্যাচের শুরুতে মার্ক উডের প্রথম ইনিংসে ৫/৩৪ মিচেল মার্শের সেঞ্চুরিকে ম্লান করে দেয় এবং অস্ট্রেলিয়া প্রথম দিনের চা-বিরতির আগেই ২৬৩ রানে অলআউট হয়। ইংল্যান্ড দ্রুত প্রত্যাঘাত শুরু করলেও, দ্বিতীয় দিনের সকালে আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়ে চার উইকেট হারায় এবং বেন স্টোকসের ৮০ রান সত্ত্বেও ২৩৭ রানে গুটিয়ে যায়।প্যাট কামিন্স ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবার ছয় উইকেট তুলে নেন। তৃতীয় দিনে বৃষ্টির বাধার মধ্যেও ট্রাভিস হেডের ৭৭ রান অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে রাখে; কিন্তু উড, ওকস, স্টুয়ার্ট ব্রড এবং মঈন আলির নিয়মিত আঘাতে অস্ট্রেলিয়া ২২৪ রানে থেমে যায়।

২৫১ রান তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ড ১৭১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়লেও, হ্যারি ব্রুকের আক্রমণাত্মক ৭৫ এবং ওকসের সঙ্গে তার ৫৯ রানের জুটি জয়ের পথ প্রশস্ত করে। শেষ পর্যন্ত ওকস এবং উড ইংল্যান্ডকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।চতুর্থ টেস্টে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে মারনাস লাবুশেনের দৃঢ় সেঞ্চুরি সত্ত্বেও ইংল্যান্ড সিরিজ সমতায় আনার পথে ছিল, কিন্তু শেষ দুই দিনের বৃষ্টি ম্যাচ ড্র-তে শেষ করে, ফলে অস্ট্রেলিয়া অ্যাশেজ ধরে রাখে।১৯৩০: দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যতিক্রমী ব্যাটার রয় ম্যাকলিনের জন্মদিনআজকের এই দিনে, ৯ জুলাই ১৯৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি ব্যাটার রয় ম্যাকলিন, যিনি তার নির্ভিক ব্যাটিং শৈলির জন্য বিখ্যাত।

যুদ্ধোত্তর দক্ষিণ আফ্রিকার বেশিরভাগ ব্যাটারের বিপরীতে, ম্যাকলিনের আক্রমণাত্মক স্ট্রোক-প্লে তাকে অনন্য করে তুলেছিল।৪০ টেস্টে ১১টি শূন্য রানের ইনিংস থাকলেও, একবার ক্রিজে সেট হলে তিনি উইকেটের উভয় পাশে, বিশেষ করে স্কোয়ারে, ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতেন।১৯৫৫ সালে লর্ডসে তার ১৪২ রানের ঝোড়ো ইনিংস ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের মোট রানকেও (১৩৩) পেছনে ফেলে দেয়। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকা সেই ম্যাচে হেরে যায়। কারণ, দ্বিতীয় ইনিংসে তারা অলআউট হয়েছিল ১১১ রানে।১৯৬১ সালে তিনি উইজডেন ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন। ক্রিকেটের পাশাপাশি ম্যাকলিন নাটালের হয়ে রাগবিও খেলেছেন।