২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ❑ ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি ❑ রবিবার

সোনারতরী

অনলাইন ডেস্ক, অধিকরণ ডট কম

অধিকরণ অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

বিজ্ঞাপন

জাহান আরা হক :

সোনারতরী এক চিরায়ত আবেদনবাহী কবিতা সোনারতরী’রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সোনারতরী কাব্য গন্থের নাম-কবিতা। শতাধিক বছর ধরে এটি একটি আলোচিত কবিতা যা নানামুখি ও নতুন নতুন তাৎপর্যে অভিষিক্ত। অনেকের ধারণা এটি একটি প্রকৃতি নির্ভর কবিতা, আবার অনেকে মনে করেন এর পেছনে অন্য কোনো গূঢ় রহস্য আছে। মহৎ সাহিত্যের একটি বিশেষ গুণ হলো কালে কালে নতুন দৃষ্টিভঙ্গী ও বিবেচনার আলোকে তার শ্রেষ্ঠত্ব নিরূপিত হয়।

বিজ্ঞাপন

বাংলা কবিতার ইতিহাসে‘সোনারতরী’ তেমনি সুন্দর ও চিরায়ত আবেদনবাহী কবিতা। ‘সোনারতরী’একটি রূপক কবিতা। কোনো দৃশ্যমাণ বস্তুকে সামনে রেখে যখন কোনো ভাবসত্য বা জীবনদর্শনকে রূপায়িত করা হয় সেটাই হয় রূপক। সোনারতরী মহাকালের রূপক। কৃষক-রবীন্দ্রনাথ অর্থাৎ স্র্রষ্টা যিনি সৃষ্টি করেন তার সৃষ্টি কর্ম, সেটা শিল্প হতে পারে অথবা স্থাপনা বা সংগঠন। রবীন্দ্রনাথ আধুনিক বাংলা কবিতার প্রাণপুরুষ। আধুনিক বাংলা কবিতা তাঁর হাতেই বিকশিত হয়।

এর আগে আধুনিকতার সূচনা হয়েছিল মধুসূদনের হাত ধরে, পরে রবীন্দ্রনাথের কাছে তা বিকশিত হয়। সাহিত্য সাধনার একটা বৃহৎ অংশ জুড়ে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দ হতে ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দ এই সময়কাল রবীন্দ্র যুগ হিসেবে পরিচিত। এই সময়ে অন্য কবিরা লিখলেও তাদের লেখাতেও রাবিন্দ্রিক প্রভাব লক্ষ করা যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রোমান্টিক কবি। সৌন্দর্যতৃষ্ণা ও মানবধর্মের জয় ও দুটোই তার লেখার বৈশিষ্ট্য। তিনি সাহিত্যের সব শাখায় বিচরণ করেছেন। গল্প উপন্যাস নাটক কবিতা, শুধু মহাকাব্য ছাড়া। তিনি চিত্রশিল্পী ও অনুসন্ধিচ্ছু পরিব্রাজক ছিলেন।তিনি দক্ষ সম্পাদক,শিক্ষাসংগঠক ও চিন্তক। তার প্রমাণ নিজের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। নিজে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না নিলেও প্রতিষ্ঠান গড়ায় দক্ষ ছিলেন তিনি। তাঁর প্রথমকাব্য বনফুল ১৮৭৬ সালে প্রকাশিত হয়, ১৫ বছর বয়সে। এরপরে গীতাঞ্জলি ও অন্যান্য কাব্যের কবিতার সমন্বয়ে স্বঅনুদিত হয় সঙ অফারেন্স গ্রন্থের জন্য ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। তাঁর লেখার প্রধান বৈশিষ্ট্য সীমার মাঝে অসীমের কল্পনা, তাই তিনি বলেছেন‘সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর’।

সোনারতরী কবিতায় তার উপস্থিতি লক্ষ্ করা যায়। একজন কৃষক তার দ্বীপসদৃশ ধান ক্ষেতে বসে আছেন। ধান কেটে আঁটি বেধে। চারদিকে বৈরীপরিবেশ, ঝড়, ধারালো স্রোতের জলরাশি। একা বসে আছে সোনার তরীর অপেক্ষায়- কখন সোনার তরী আসবে তাঁর ধান গলো নিয়ে যাবে। সঙ্গে তাঁকেও। এক সময় তরী এলো,পাড়ে ভীড়লো, কৃষক তাঁর সমস্ত ধান সোনার তরীতে উঠিয়ে দিল। আর আছে? আর নেই দিয়েছি ভরে……। এখন আমারে লহো করুণা করে। কিন্তু মাঝি কখন সোনার ধান দিয়ে তরী ভরে নিয়ে গেছে তোমাকে নেয়ার জায়গা নেই। ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই ছোটো সে তরী আমারই সোনার ধানে গিয়াছে ভরী এই বলে মাঝি সোনার তরী নিয়ে তরতর বেগে চলে গেল। শূণ্য নদীর পাড়ে বসে রইল কৃষক একলা।

সোনার তরী কবিতায় প্রকৃতির পাশাপাশি অন্তর্লিন হয়ে আছে একটি জীবনদর্শন। মহাকালের চিরন্তন স্রোতে একলা মানুষ অনিবার্য বিষয়কে(মৃত্যু) এড়াতে পারেনা। জীবন এক সময়ে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু বেঁচে থাকে সৃষ্টকর্ম।

বিজ্ঞাপন

কৃষকরূপী রবীন্দ্রনাথ এর সৃষ্টি কর্ম পৃথিবীতে স্থান পেলেও ব্যক্তি কবির স্থান সেখানে হয়নি। এক অপূর্ণতার বেদনা নিয়ে আসন্ন ও অনিবার্য মৃত্যুর প্রতিক্ষা করতে হয় তাঁকে। তাই বলা যায় সোনার তরী কবিতায় রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছেন মহৎসৃষ্টির স্থান হয় জগতে কিন্তু ব্যক্তি সত্ত্বা ও তার শারীরিক অস্তিত্বকে নিশ্চিত ভাবে হতে হয় মহাকালের নিষ্ঠুর করাল গ্রাসের শিকার।

বিজ্ঞাপন

সংবাদটি শেয়ার করুন

নিউজলেটার সাবসক্রাইব

জনপ্রিয়

আপনার জন্য আরো কিছু সংবাদ
সম্পর্কিত

পর্যটন ব্যবসা এগিয়ে নিতে নেপাল-বাংলাদেশ এলায়েন্স গঠন

কাঠমান্ডু (নেপাল) সংবাদদাতা নেপাল বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ অ্যাসোসিয়েশন (এনবিএফএ) গতকাল সকালে...