ট্রাম্পের শুল্কের চাপ: আমদানি খরচে ঊর্ধ্বগতি, মার্জিনে ধস, সংকটে মার্কিন রেস্তোরাঁ শিল্প

প্রকাশঃ Jul 3, 2025 - 18:29
ট্রাম্পের শুল্কের চাপ: আমদানি খরচে ঊর্ধ্বগতি, মার্জিনে ধস, সংকটে মার্কিন রেস্তোরাঁ শিল্প

ব্রাজিলিয়ান কফি বিন, ফরাসি শ্যাম্পেন আর চীনা চা—এই ধরনের পানীয়গুলো সাধারণত মার্কিন রেস্তোরাঁগুলোর লাভের মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বিশ্বব্যাপী শুল্ক নীতির কারণে গত তিন মাসে আমদানি খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। এতে একদিকে ব্যবসার লাভের মার্জিন কমছে এবং অন্যদিকে ক্রেতাদের জন্য মূল্যবৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে।

হোয়াইট হাউসের খুব কাছেই অবস্থিত 'ক্লাইডস রেস্টুরেন্ট গ্রুপ', যারা স্থানীয় উৎস থেকে মাংস ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য সংগ্রহে গর্ববোধ করে, তারাও বাধ্য হয়েছে মেনুর দাম বাড়াতে। 

প্রতিষ্ঠানটির কর্পোরেট বেভারেজ ডিরেক্টর জন ফিলকিন্স এএফপিকে জানান, ‘বাস্তবতা হল, কিছুটা খরচ আমাদের অতিথিদের দিকেই ঠেলতে হচ্ছে। গ্লাসে ওয়াইন, স্পিরিটস বা খাবারের কিছু আইটেমে ৫০ সেন্ট থেকে ১ ডলার পর্যন্ত দাম বেড়েছে।’

তিনি আরও জানান, কফি ও চায়ের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। সেইসঙ্গে কাগজজাত পণ্য ও খাদ্যসামগ্রীর দামেও ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে।

১৯৬০-এর দশকে ওয়াশিংটনে যাত্রা শুরু করা ক্লাইড’স। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিসহ ও তার আশপাশে এক ডজনের বেশি রেস্তোরাঁ রয়েছে।

তাদের একটি রেস্তোরাঁ হ্যামিল্টন শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত, যেখানে পানীয়ের দাম কিছুটা বেড়েছে।

মালিকপক্ষ দাম বৃদ্ধিকে সীমিত রাখার চেষ্টা করলেও, ফিলকিন্স বলছেন এটি কঠিন হয়ে পড়ছে।

জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরে আসার পর ট্রাম্প নতুন করে শুল্ক আরোপ করায় ব্যবসায়ীরা সরবরাহ চেইনের বিঘ্ন এবং অতিরিক্ত ব্যয়ে জর্জরিত।

এপ্রিল মাসে প্রেসিডেন্ট তার সবচেয়ে বিস্তৃত শুল্ক ঘোষণা করেন, যার আওতায় অধিকাংশ বাণিজ্য অংশীদারের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এটি আগামী সপ্তাহ থেকে আরও উচ্চ হারে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

ফিলকিন্সের মতো নেতারা আগামী বুধবারের দিকে নজর রাখছেন, যেদিন থেকে উঁচু হারে শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে।

প্রতিটি বাণিজ্য অংশীদার অনুযায়ী আলাদা হার নির্ধারিত হয়েছে—যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের জন্য হার ২০ শতাংশে উঠবে এবং জাপানের জন্য এটি ২৪ শতাংশে পৌঁছাবে, যদি তারা চুক্তির মাধ্যমে হার কমাতে না পারে।

ফিলকিন্স সতর্ক করে বলেন, শুল্ক দীর্ঘদিন বহাল থাকলে ছোট ব্যবসায়ী, আমদানিকারক ও স্বাধীন রেস্তোরাঁর সংখ্যা কমে যেতে পারে।

তিনি বলেন, আশা করছি, আমরা এমন পর্যায়ে আর শুল্ক দেখব না । রেস্তোরাঁ শিল্প সাধারণত কম নগদ প্রবাহ ও কম মুনাফার উপর চলে।

তিনি বলেন, সাধারণত রেস্তোরাঁর মুনাফার হার এক অঙ্কের মধ্যেই থাকে । উদাহরণস্বরূপ, যদি ওয়াইন বাই দ্য গ্লাসের মুনাফার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারিয়ে যায়। সেটি বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।

ফিলকিন্স বলেন, ক্লাইড’স কফির জন্য ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়া থেকে বিন সংগ্রহ করে এবং তাদের চা আসে ভারত ও চীন থেকে। গত ছয় মাসে আমরা কফি ও চায়ের খরচে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি দেখেছি। এর কারণ হচ্ছে, সরবরাহকারী ও পরিবেশকেরা শুধু ১০ শতাংশ শুল্কই নয়, বিনিময় হারজনিত অতিরিক্ত খরচও দিচ্ছে।

চীন থেকে আমদানির ক্ষেত্রে বর্তমানে ৩০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য যদিও ওয়াশিংটন ও বেইজিং সাময়িকভাবে একে অপরের উপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক কমিয়েছে।

চুক্তি না হলে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত পণ্যে বুধবার থেকে ৩২ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে, এবং ভারতের জন্য এই হার হবে ২৬ শতাংশ। মদ, বিয়ার ও ওয়াইন ক্ষেত্রে, আমরা যে ওয়াইন আমদানি করি তার বেশিরভাগই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আসে। 

ফিলকিন্স বলেন, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন ও পর্তুগাল থেকে আসা পণ্যে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। তবে তার কোম্পানি চেষ্টা করছে যাতে সব বাড়তি খরচ গ্রাহকের ওপর না পড়ে।

বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ভোক্তারা বেশি খরচ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না উল্লেখ করে ফিলকিন্স বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি কোভিড-১৯ মহামারির পর তুলনামূলকভাবে ভালো পারফর্ম করেছে। কারণ, শক্তিশালী শ্রমবাজার ভোক্তাদের খরচ চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। তবে এখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান কমছে।

এই গ্রীষ্মে অর্থনীতিবিদরা দেখছেন শুল্ক যদি সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিতে অবদান রাখে, তাহলে পরিবারগুলো আরও সতর্ক হয়ে খরচ করবে।

ট্রাম্পের ঘন ঘন শুল্ক ঘোষণা, পরিবর্তন ও স্থগিতাদেশ আর্থিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে এবং ব্যবসাগুলো বিনিয়োগ পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে বাধ্য হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ফিলকিন্স শুল্ক কমানোর প্রত্যাশা করছেন।

ফিলকিন্স বলেন, পরবর্তী আট দিনে কী হতে যাচ্ছে তা আমাদের পক্ষে বলা কঠিন। আমরা কেবল অনুমানের ওপর ভিত্তি করে সব সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।’