ঈদের ছুটি শেষে নগরে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। কর্মস্থলে ফিরতে পদে পদে বিড়ম্বনায় পড়ছেন নগরবাসী। একদিকে ভাড়া বেশি, অন্যদিকে অধিক ভাড়ার আশায় পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে সড়কে লেগে থাকছে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজট। ঈদের আগে সিএনজি অটোরিকশায় বাঁশখালী থেকে চট্টগ্রাম আসতে ভাড়া লাগতো ২০০ টাকা। ঈদের চারদিন পর মানুষের কর্মস্থলে ফেরার ব্যস্ততার সুযোগে ২০০ টাকার ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা। এই সড়কে চলাচলরত বাসগুলোতেও মানুষের উপচেপড়া ভিড়। বিকেল চারটার পর থেকে বাস সংকটের কারণে টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয় কাউন্টারে।
এ সুযোগে চারগুণ ভাড়া বাড়িয়ে দেয় সিএনজি অটোরিকশার চালকেরা। দেখার যেন কেউ নেই। সড়কে পুলিশের উপস্থিতিও তেমন নেই। বাঁশখালী-চট্টগ্রাম সড়কে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ ঘন্টার যানজটে নাকাল জনজীবন। এ সড়কের পাশেই বাঁশখালী থানা। সিএনজি অটোরিকশা চালকেরা অতিরিক্ত ট্রিপ পরিচালনার জন্য এলোপাতাড়ি গাড়ি চালিয়ে যানজটের সৃষ্টি করছে। কিন্তু এ নিয়ে পুলিশের কোনও তদারকি না থাকায় ক্ষুব্ধ হাজারও যাত্রী।
যাত্রীরা বলেন, শুধু চালকদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে হাজার হাজার মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। থানার সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজট লেগে থাকছে আর পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখছে। অতিষ্ঠ হয়ে অনেক সময় যাত্রীরাই লাঠি হাতে গাড়ির লাইন ঠিক করছে। শুধু বাঁশখালী সড়কের এ অবস্থা নয়, হাটহাজারী-চট্টগ্রাম, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-ফেনী, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি, চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কেরও একই চিত্র। এসব সড়কে অবশ্য ট্রাফিক পুলিশের সরব উপস্থিতি দেখা যায়।
সিএনজি অটোরিকশা চালক আব্দুল হামিদ বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমরা কিছু টাকা আয় করি। বাকি সময় দিনের আয় দিনে চলে যায়। ঈদের আগে বাঁশখালী থেকে চট্টগ্রাম দিনে দুইবার আপ-ডাউন করতাম। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে চারবার যাওয়ার চেষ্টা করছি। নগরের নতুন ব্রিজ এলাকায় প্রবেশমুখে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, পটিয়া, চন্দনাইশ, কক্সবাজার, চকরিয়া থেকে ঘরমুখো মানুষের চাপের কারণে প্রায় প্রতিদিনই ব্যাপক যানজটের মুখে পড়ছেন মানুষ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের কারণে চাপ রয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যাতে তারা নিরাপদে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। তারপরও উল্টোপথে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন অমান্য করার কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। সেটিও আমরা অল্প সময়ের মধ্যে নিরসনের চেষ্টা করি।
সিএনজি অটোরিকশা করে বাঁশখালী থেকে চট্টগ্রাম আসা জোবায়ের চৌধুরী বলেন, বন্ধুর বাসায় দাওয়াত ছিল। সকালে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে বাঁশখালী যেতেই দুপুর গড়িয়েছে। পরে দাওয়াত শেষে বিকেলে চারগুণ ভাড়া দিয়ে চট্টগ্রাম আসতে রাত সাড়ে ১১টা বেজেছে। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে সড়কে যানজট হচ্ছে, ভাড়াও নিচ্ছে বেশি। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে ঈদের দিন থেকে এ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক। এসব দুর্ঘটনায় হতাহতদের বেশিরভাগই ঈদে ঘুরতে বের হয়েছিলেন। বাস, পিকআপ, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি, মুখোমুখি সংঘর্ষে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। শুক্রবার (৬ মে) দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিঠাছড়া বাজারের বাইপাস এলাকায় রাস্তা পার হতে গিয়ে বাসের ধাক্কায় মোমিন উল্লাহ (৭৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। একইদিন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ভাইয়ার দীঘি এলাকায় সৌদিয়া পরিবহনের সঙ্গে সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে রনধীর বড়ুয়া (৬৮) নামে একজন নিহত হন। এসময় অটোরিকশা চালকসহ তিনজন আহত হন। এছাড়া মিরসরাইয়ে চট্টগ্রামমুখী একটি বাস উল্টে ৩ জন নিহত হয়েছেন।