২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ❑ ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১১ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি ❑ সোমবার

যদি আমার পোলাডার আলগা দুইডা হাত লাগান যাইত

অনলাইন ডেস্ক, অধিকরণ ডট কম

অধিকরণ অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে ডান পা দিয়ে লিখে শিক্ষাজীবন চালিয়ে যাচ্ছে মো. হোসেন (১৩)। দুই হাতবিহীন পা দিয়েই চলছে জীবনসংগ্রাম ও শিক্ষাসংগ্রাম। লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ আর মনের জোরের কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও হার মেনেছে। অভাবের সংসারে দুহাতবিহীন ছেলেকে পড়ালেখা করাতে হাল ছাড়েনি পরিবার।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চরমানিকা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড চার্চ কলোনিতে বসবাস করে হোসেন। দরিদ্র কৃষক শাহাবুদ্দিন ও রহিমা দম্পতির ছেলে হোসেন। সে উপজেলার উত্তর চরমানিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চরকচ্ছপিয়া গণস্বাস্থ্য পাঠশালায় প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত মো. হোসেন। ১০ আগস্ট সকালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নির্মাণাধীন দোতলা ভবনে উঠে খেলাধুলা করার এক পর্যায়ে ভবনের পাশে অরক্ষিত বৈদ্যুতিক খুঁটির ১১ হাজার ভোল্টের তারের সঙ্গে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় হোসেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেওয়া হলে জীবন রক্ষার্থে দুই হাত কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা।

বিজ্ঞাপন

হোসেনের মা রহিমা বেগম বলেন, দুর্ঘটনার পর হোসেন এলাকার অন্য ছেলেদের সঙ্গে স্কুলে যেত। স্কুলে যাওয়া-আসার এক পর্যায়ে শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় সে ডান পা দিয়ে লেখা শুরু করে। এভাবে সে পঞ্চম শ্রেণি পরীক্ষায় পাস করে। তাকে যখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে নিয়ে গেলাম, তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাকে ভর্তি করতে চাননি। তিনি প্রথমে বলেছেন যে যার হাত নেই, সে লিখবে কীভাবে? পরে হোসেন দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে পা দিয়ে লিখে পঞ্চম শ্রেণি পরীক্ষায় পাস করেছে, এ কথা শুনে প্রধান শিক্ষক তাকে ভর্তি করেন। আমার হোসেন পড়াশোনায় অনেক মেধাবী। পড়াশোনার প্রতি তার অনেক আগ্রহ রয়েছে। আমি চাই সে বড় হোক। হোসেন বলে, বাবা-মা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় আমি পড়াশোনা করতে পারছি। আমার চলাফেরায় অনেক কষ্ট হয়। দুই পা দিয়ে পড়াশোনা করছি, কৃত্রিম দুটি হাত হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কাজ করতে পারতাম। আমি উচ্চশিক্ষা অর্জন করে চাকরি করে মা-বাবার পাশে দাঁড়াতে চাই। দিনমজুর বাবার কষ্ট দূর করতে চাই।

হোসেনের বাবা শাহাবুউদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনার পর তাকে ঢাকায় নেওয়া হলে জীবন বাঁচানোর জন্য দুহাত কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসা করাতে আমার প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আমি একজন গরিব কৃষক। দিন আনি দিন খাই। ছেলের এই দুর্ঘটনায় জমিজমা বিক্রি কইরা চিকিৎসা চালাতে হইছে। এখন আমি শূন্য। হোসেনের আশা পূর্ণ করব, সেই ক্ষমতা আমার নাই।

তিনি আরও বলেন, হোসেনরা পাঁচ ভাই-বোন। অভাবের সংসারে তাগো পড়াশোনা করানোর খরচ জোগাতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়। টিভি চ্যানেলে দেখি কত মানুষের আলগা (কৃত্রিম) হাত-পা লাগায়। তা দিয়াই স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করে। যদি আমার পোলাডার আলগা দুইডা হাত লাগান যাইত, তয় সে আগের মতো চলাফেরা ও পড়াশোনা করতে পারত। দুর্ঘটনার পর এ পর্যন্ত গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ হোসেনের খোঁজখবর নেয়নি। দুর্ঘটনার পর ভবনের ছাদে ওঠার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। কিন্তু নির্মাণাধীন দোতলা ভবনের অরক্ষিত বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে হোসেন দুই হাত হারালেও কর্তৃপক্ষ আজও দেখতেও আসেনি। কোনো সাহায্য-সহযোগিতা বা অনুদান দেয়নি বলে জানান হোসেনের দিনমজুর বাবা শাহাবুদ্দিন।

উত্তর চর মানিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন বলেন, হোসেন মেধাবী ছাত্র। দুই পা দিয়ে লিখলেও অনেকের চেয়ে তার লেখা অনেক সুন্দর। আমাদের বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক হোসেনের প্রতি আন্তরিক। হোসেন পারিবারিক ও মানসিকভাবে সাহস পেলে ভবিষ্যৎ জীবনে ভালো কিছু করতে পারবে।

বিজ্ঞাপন

হোসেনের বিষয়ে জানতে তার বাবা শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন তার ০১৭১০৯৩৯১৬৫ এই নম্বরে এবং ও হোসেনের মা রহিমা বেগমের ০১৭৪৫০৫৭২৭২ (নগদ) এই নম্বরে।

বিজ্ঞাপন

সংবাদটি শেয়ার করুন

নিউজলেটার সাবসক্রাইব

জনপ্রিয়

আপনার জন্য আরো কিছু সংবাদ
সম্পর্কিত