১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ❑ ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি ❑ শনিবার

কিশোর গ্যাং : সামাজিক অবক্ষয় ব্যাধি

অনলাইন ডেস্ক, অধিকরণ ডট কম

অধিকরণ অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

বিজ্ঞাপন

কয়েকদিন ধরে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য একটা খবর হলো দেশের বিভিন্ন স্থানে কিশোর গ্যাংয়ের কর্মকাণ্ড। কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিদিনই দেশজুড়ে ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, জমিদখল, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, ধর্ষণ এবং খুন-খারাবি ইত্যাদি অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এদের অত্যাচার নির্যাতনে সমাজ বিষিয়ে উঠেছে।মূলত, সারা দেশে কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ এক রূপ ধারণ করেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোররা ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে খুনাখুনিসহ নানা অপরাধে কিশোর-তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে। মাদক ব্যবসা ও দখলবাজিতেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, মাদক ও প্রেমঘটিত বিরোধের জেরে যেভাবে অহরহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে তারা, এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

তাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় আইনানুযায়ী তাদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের যথাপোযুক্ত শান্তি দেয়া হয় না। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই তারা চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, যৌন হয়রানি, মাদক ব্যবসায়সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাদের বিস্তর নেটওয়ার্ক। ছুরি, রামদা, হকিস্টিক, বন্দুকসহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। এলাকার বসবাসকারী জনসাধারণের জন্য দিনদিন ত্রাস হয়ে উঠছে এরা। এদের দৌরাত্মে সাধারণের দিন কাটছে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায়।

বিজ্ঞাপন

অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে খেলার মাঠ, পুকুর, নদী-নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় শিশু-কিশোররা খেলাধূলার সুযোগ হারিয়ে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে গিয়েই গ্যাং সৃষ্টি করেছে। আগে অঞ্চলভিত্তিক, পাড়ায় পাড়ায় বিভিন্ন টুর্নামেন্ট ও খেলাধুলার প্রতিযোগিতার আয়োজন হতো, যাতে সবার মধ্যে সৌহার্দ্যরে বন্ধন এবং সুস্থ প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি হতো। সেই সুযোগ এখন একেবারে ফুরিয়ে গেছে। ফলে আগে যেখানে সুস্থ বিনোদন ও সাংস্কৃতিক চর্চা হতো এখন সেখানে অপসংস্কৃতি জায়গা দখল করে নিয়েছে। শিল্প-সংস্কৃতির নামে আমরা নগ্নতা আর বেহায়াপনাকে আধুনিকতা হিসেবে প্রমোট করা হচ্ছে। আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাও এই কিশোর গ্যাং সৃষ্টির পেছনে কম দায়ী নয়। পরীক্ষাকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা শিশু-কিশোরদেরকে যেকোনো মূল্যে ‘জিপিএ-৫’ পাওয়ার দিকে পরিচালিত করে। তাত্ত্বিক এই শিক্ষাব্যবস্থায় না আছে কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার দিকনির্দেশনা, না আছে কোনো মূল্যবোধের আদর্শে নিজেকে তৈরি করার বাস্তবমুখী গাইডলাইন। ফলে যারা মেধাবী তারা শুধু টাকা উপার্জনের রোবোটিক যন্ত্রে পরিণত হচ্ছে আর বাকিরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পথভ্রষ্ট হচ্ছে।

সমাজে বৈষম্য, দারিদ্র্য, পারিবারিক বিশৃঙ্খলা, একাকিত্ব, শিক্ষকের বঞ্চনা, খারাপ ফলাফল, সহপাঠীর বিদ্রুপ, হিরোইজম দেখানোর প্রবণতা, মাদকাসক্তি, অশ্লীল ও সহিংসতানির্ভর ছবি, আপত্তিকর ভিডিও গেম, ভিনদেশি কালচারসহ বিভিন্ন কারণেও গ্যাং কালচারের সৃষ্টি হচ্ছে। এখনই যদি এই কিশোর গ্যাং কালচার থেকে সমাজকে মুক্ত করা না যায়, তাহলে আগামী প্রজন্মকে অপরাধমুক্ত রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

বিশেষজ্ঞদের মত, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয়ে কিশোরদের একত্রিত করে কতিপয় ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের অপরাধে সম্পৃক্ত করছেন। সহজ ও অল্প খরচে কিশোরদের দিয়ে তারা অপরাধ করানোর সুযোগ নিচ্ছে। অস্ত্রবাজি, মাদক ও হত্যাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তারা কিশোরদের ব্যবহার করে। এছাড়া কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কিশোর গ্যাং তৈরি করছে। এছাড়াও আমাদের দেশে শিশুদের লালনপালন করার ক্ষেত্রে পরিবারগুলো শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অন্যান্য বিষয়ে যথাযথভাবে দায়িত্বপালন করছে না। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা অপরাধে জড়ায় এমন একটি কথা সমাজে প্রচলিত আছে। এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এখন উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাও অপরাধে জড়াচ্ছে। সঠিক ও সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে কিশোরদের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা তৈরি হচ্ছে। এগুলো প্রশমিত না হওয়ায় তারা নানা ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে। এসব কারণ বিশ্লেষণ করে সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ না নিলে কিশোর অপরাধ কমানো সম্ভব নয়।

বিজ্ঞাপন

সংবাদটি শেয়ার করুন

নিউজলেটার সাবসক্রাইব

জনপ্রিয়

আপনার জন্য আরো কিছু সংবাদ
সম্পর্কিত