১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ❑ ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৩রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি ❑ রবিবার

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে

অনলাইন ডেস্ক, অধিকরণ ডট কম

অধিকরণ অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

বিজ্ঞাপন

ভয়াবহ হচ্ছে ডেঙ্গু। অক্টোবরে এসেও ঊর্ধ্বমুখী প্রকোপ। ঢাকার পাশাপাশি বাইরেও বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রকোপ সাধারণ মানুষকে হতবিহবল করে তুলছে। প্রতিদিনই সংবাদ মাধ্যমে চোখ রাখলেই বুঝতে পারা যায় দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে নিয়ম করে। প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবরও সংবাদ মাধ্যমে আসছে। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে নতুন করে ৩৪৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে বর্তমানে ২ হাজার ১৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ডেঙ্গুকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং মারাত্মক মশাবাহিত রোগ হিসেবে চিহিৃত করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে, সাথে গরমও বেশি। এই রকম পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু বাড়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। এ রকম পরিস্থিতে অতিরিক্ত সর্তকতা নেয়া অত্যাবশ্যক।

২০১৯ সালে এই ডেঙ্গু নিয়ে খুব ভুগতে হয়েছিলো পুরো জাতিকে। তখন ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার দেশজুড়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়েছিলো। ডেঙ্গু এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে যে, সারা দেশে মানুষ চরমভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। প্রথমে রাজধানী ঢাকায় এবং পরে ক্রমেই প্রায় সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগে ওই বছর সারা দেশে আক্রান্ত হয়েছিলো কয়েক লাখ মানুষ। আর মারা যায় অন্তত ৩০০ জন। রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কোনোভাবেই প্রতিরোধের উপায় করতে না পেরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র। একপর্যায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে সিঙ্গাপুর সফরে যান। তারা মশার বন্ধ্যাত্বকরণের জন্য বিশেষ প্রযুক্তি আমদানি করবেন বলে তখন শোনা গিয়েছিলো। কিন্তু সেগুলো কার্যত কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞাপন

দেশে সারা বছর ডেঙ্গু রোগী খুব কম পাওয়া গেলেও বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু রোগী হু হু করে বাড়তে থাকে। বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো বৃষ্টি। অপরিকল্পিত নগরায়ন, মানুষের অসচেতনতা ঢাকাসহ বাংলাদেশের সব শহরে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা জন্মানোর উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করেছে। আধুনিক জীবনযাপনের সাথে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাবারের প্যাকেট, পানির জারসহ বিভিন্ন ধরনের পাত্র। আর এই পাত্রই ডেকে আনছে ডেঙ্গু। নগরীর বিভিন্ন স্থানে আনাচে কানাচে পড়ে থাকা বিভিন্ন ধরনের পাত্র এডিস মশা প্রজননের জন্য উপযুক্ত স্থান। ২০২২ সালের প্রাক-মৌসুম জরিপে ঢাকা শহরের ৪.৫৩ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে। গত দুই বছরের চাইতে এবছর মৌসুমে ডেঙ্গু বেশি হওয়ার। তেমনি লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি বর্তমান সময়ে।

গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর সিটি করপোরেশনকে ডেঙ্গু ভাইরাসের বড় ধরনের প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে করপোরেশনকে অবিলম্বে ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণেরও পরামর্শ দিয়েছেন তারা। কিন্তু করপোরেশন থেকে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কোন ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষনীয় নয়।

কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে অনেক স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এই জলাবদ্ধ জায়গায় ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা জন্মাতে পারে। তাই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে এখনই যথাযত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে প্রতিটি ওয়ার্ডকে দশটি ব্লকে ভাগ করে দশটি টিম গঠন করে এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে পুরস্কারের ব্যবস্থা করে তাদের উৎসাহিত করা যেতে পারে।

আশা করব, বিগত বছরের মতো ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আগেই সংশ্লিষ্ট সংস্থা, কর্তৃপক্ষ, কর্মকর্তারা সচেতন হবেন এবং নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করবেন। নগরবাসীর জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দেয়ার অধিকার কারো নেই। তারা যাতে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযতভাবে পালন করে নগরবাসীর জীবন রক্ষা করেন এমনই প্রত্যাশা রইল।

বিজ্ঞাপন

সংবাদটি শেয়ার করুন

নিউজলেটার সাবসক্রাইব

জনপ্রিয়

আপনার জন্য আরো কিছু সংবাদ
সম্পর্কিত