মানিকগঞ্জ জেলা থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রাম। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে সাতটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা নিয়ে বালিয়াটি জমিদার বাড়িটি এখনো গৌরবের সাক্ষী হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এমন দৃষ্টিনন্দনকে স্বচোখে দেখতে ভ্রমণ বিষয়ক সাংবাদিক সংগঠন গাঙচিল সাংবাদিক ফোরামের একদল চৌকস সাংবাদিক টিম গত শুক্রবার হাজির হন বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে।
আর এ টিমের নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি নাছিমা সোমা। যার নেতৃত্বে এ যাবত দেশের বেশ কিছু ঐতিহাসিক ও পর্যটন সম্ভাবনাময় স্থানগুলোতে পরিদর্শন করেছে। বালিয়াটি জমিদার বাড়ি ভ্রমণে সংগঠনের অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন, নির্বাহী সভাপতি খায়রুল আলম, সহ-সভাপতি হরলাল রায় সাগর, সাহিদুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম জহিরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ জামান সৈয়দী, ইউসুফ আলী বাচ্চু, সাখাওয়াত হোসেন মুকুল, জাফরুল আলম, হারুন অর রশিদ, সুমন মোস্তফা, আবদুল ওয়াদুদ, হেদায়েত উল্লাহ মানিক, মনসুর আহমেদ, নির্মল কুমার বর্মন প্রমুখ।
সরেজমিনে জানা গেছে, ঊনবিংশ শতকে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী প্রাসাদের চত্বরটি প্রায় ১৬ হাজার ৫৫৪ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। জমিদার বাড়ির প্রবেশ ফটকের দুই পাশে স্থাপিত রয়েছে দুটি সিংহের মূর্তি। সমস্ত জমিদার চত্বর উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এবং জমিদার বাড়ির মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই সুপ্রশস্ত সবুজের ঢাকা আঙ্গিনা চোখে পড়ে। আঙ্গিনায় গড়ে তোলা হয়েছে সুন্দর ফুলের বাগান।
এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন দেশীয় ফলের গাছ। যার মধ্যে- আম, কাঁঠাল, পেঁপে, লিচু, কালো জামসহ নানা ফলমূলের সমারোহ। এককথায় জমিদার বাড়ির প্রাচীরের ভেতরটা যেন ফুলেফলে আর নানা গাছগাছালে পুরো প্রাসাদের সৌন্দর্যকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। জমিদার বাড়িটিতে পাশাপাশি চারটি বহুতল ভবন রয়েছে। এই ভবনগুলোর পেছনেই আছে পুকুর ও জমিদার অন্দরমহল।
প্রাসাদের কক্ষ সংখ্যা ২০০টি এবং প্রতিটি কক্ষেই সুনিপুণ কারুকাজ লক্ষ্য করা যায়। চুন-সুরকি, লোহার পাত আর কাদামাটিতে নির্মিত ভবনগুলোর প্রতিটি দেয়াল প্রায় ২০ ইঞ্চি পুরু। অনন্য নির্মাণ কৌশল আর কারুকার্য পূর্ণ বালিয়াটি জমিদার বাড়ী তৎকালীন জমিদারদের অভিজাত্যকেই ফুটিয়ে তুলেছে।
দেখা যায়, সাত ঘাট বিশিষ্ট পুকুর। কথিত আছে, জমিদার গোবিন্দ রাম সাহার সাত স্ত্রীর জন্য সাতটি ঘাট তৈরি করেছিলেন। রয়েছে পানি তোলার জন্য ২টি কূপ। দৃষ্টিনন্দন এই বাড়ির বিভিন্ন ভবন একেক জন উত্তরাধিকারীদের মাধ্যমে পৃথক পৃথক সময়ে নির্মিত হয়েছে। বাড়িটি বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের মাধ্যমে সংরক্ষণ ও পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আর জমিদার বাড়ির কেন্দ্রীয় ব্লকে রংমহল খ্যাত ভবনে যাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে। রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি উনিশ শতকের স্থাপত্যকৌশলের একটি অন্যতম নিদর্শন হয়ে আছে। প্রায় দুশ’ বছরের পুরাতন জমিদার বাড়িটি থেকে তৎকালীন সময়ের মানুষের জীবন-জীবিকা, চাল-চলন, আনন্দ-বিনোদন আর শৌখিনতার পরিচয় পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে সংগঠনের সভাপতি নাছিমা সোমা বলেছেন, গাঙচিল সাংবাদিক ফোরাম একটা ভ্রমণ বিষয়ক সাংবাদিক সংগঠন। দেশের পর্যটন শিল্পের প্রচার ও প্রসারে লিখনির মাধ্যম দেশ বিদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই সংগঠনের মূল কাজ।