২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ❑ ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১১ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি ❑ সোমবার

সত্যিকার অর্থেই পাট নিয়ে কাজ করা একটু কঠিন; তারপরও আশাবাদী: ইসরাত জাহান চৌধুরী

অনলাইন ডেস্ক, অধিকরণ ডট কম

অধিকরণ অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

বিজ্ঞাপন

নাসরীন গীতি

পাট নিয়ে বাংলাদেশে অনেক রাজনীতি আছে। তৈরি হচ্ছৈ অনেক সিন্ডিকেট। ফলে এখানে সত্যিকার অর্থেই কাজ করা একটু কঠিন। বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ইসরাত জাহান চৌধুরী দৈনিক অধিকরণকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। তবে এই পাট ও পাটপণ্যের সুন্দর ভবিষ্যত নিয়েও আশাবাদী তিনি।

বিজ্ঞাপন

নিম্নে তাঁর একান্ত সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো:

দৈনিক অধিকরণ: ‘নারী ব্যবসায়ি’- অনেকেই ব্যবসায়ীর আগে ‘নারী’ শব্দটি ব্যবহার করেন। শুধু ব্যবসায়ি নয় কেন? বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?

ইসরাত জাহান চৌধুরী: ব্যাপারটা আমার কখোনই ভালো লাগে না। কারণ আমি যেখানে গিয়েছি, সেখানেই দেখেছি, (আসলে যত যাই বলি না কেন আমাদের সমাজটা তো পুরুষতান্ত্রিক) ওনারা আসলে বিশ্বাস করতে চান না যে, আমরা এটা করতে পারি। তারা মনে করেন, আমরা একটা গন্ডির মধ্যেই থাকি। যেমন- মেয়েরা করবে পার্লার বা বুটিকের বিজনেস। এর বাইরে তারা কোনো ব্যবসা করতে পারে এটা পুরুষদের মাথায় আসে না আরকি। এইজন্যই ‘নারী’ শব্দটি বসে যায়।

দৈনিক অধিকরণ: পাট ও পাটজাত পণ্য নিয়ে ছুটছেন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও। শুরুটা কিভাবে?

বিজ্ঞাপন

ইসরাত জাহান চৌধুরী: কেনো শুরু, সেটা আগে বলি। আমি একজন ব্যাংকার ছিলাম। কিন্তু বিজনেস নিয়ে স্বপ্ন ছিলো কলেজ লাইফ থেকেই। কিন্তু কিভাবে ব্যবসা শুরু করবো, সফলতা কিভাবে আসবে- এই বিষয়গুলো মিলাতে পারছিলাম না। পরবর্তীতে চাকরিতে যাই। আর সেখানে জানেন, চ্যালেঞ্জ নিতে নিতে আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা অনেক বেড়ে যায়। তো একটা পর্যায়ে, আমার কন্যা হলো। তখন এমন একটা পরিস্থতি হলো যে, ওকে পুরোটা সময় আমারই দেখতে হবে। আমার বাচ্চার এগারো মাস বয়সে আমাকে ব্যাংকের চাকরিটা ছাড়তে হয়েছে। কারণ আমার বিকল্প ছিলো না। প্রায় বছর চারেক পর, আমার মনে হলো, এখন আমাকে কাজে ফেরা উচিত।

দৈনিক অধিকরণ: বাংলাদেশই নয়, পুরো ভারতীয় উপমহাদেশেই বোধ হয় নারীদের চাকরি করি আর ব্যবসায়ই করি, দিনশেষে পুরোপুরিভাবে সংসারও সামলাতে হয়?

ইসরাত জাহান চৌধুরী: এটা একদম ঠিক বলেছেন। কারণ হচ্ছে আমাদের আসলে খুব বেশি প্রমাণ করতে হয়। আমার মনে হয়, আসলে গোড়ায়ই গলদ। ছেলে-মেয়ের বিভেদটা না করে পরিবারেই যদি ছোটবেলা থেকে শেখানো হয় যে, একটা ছেলে বা মেয়ে আলাদা ব্যাপার নয়। কারণ যখন একটা ছেলে বা মেয়ে পড়াশোনা করে, একটা স্বপ্ন নিয়েই তারা এগিয়ে যাচ্ছে। ঐ মেয়েকেও ব্যাপক পরিশ্রম করে, কখনো ঐ ছেলেটার চেয়ে বেশি পরিশ্রম করে পড়াশোনা করতে হয়। আর এখন মেয়েরা পড়াশোনা করে কিন্তু শুধু বিয়ের জন্য নয়, কিছু একটা করার জন্য। নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য। মাত্র ২০ শতাংশ নারী হয়তোবা বিয়ের জন্যই পড়ালেখা করে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু কি হচ্ছে? বাস্তবে একটা ছেলেকে কেউ বলছে না, তুমি চাকরিটা ছাড়ো, বাচ্চাটা পালো। কিন্তু মেয়েকে সবাই বলছে; বাচ্চা, সংসারের জন্য চাকরি ছাড়তে হচ্ছে।

দৈনিক অধিকরণ: ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সংসার– সব কিছু কিভাবে নিজের আয়ত্ত্বে এনে পরিচালনা করেন?

ইসরাত জাহান চৌধুরী: বছর চারেকের বিরতির পর যখন আবার কাজে ফিরলাম, তখন একটা চাকরিই করতাম। তখন দেখলাম যতখানি মনোযোগ দেই, দক্ষতা দিয়ে শ্রম দেই; এই অ্যাফোর্টটা যদি আমি আমার কোনো কাজে দেই তাহলে হয়তো বেশি কিছু পাবো। তখনই সিদ্ধান্ত নেই যে, আমি আর চাকরি করবো না। ব্যবসাটাই করবো।

আর একটা বিষয় হলো, আমাদের যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, শক্তিটা সেখান থেকেই আসে। সেজন্যই বিষয়টা বলা। আমি আসলে কাজের মধ্যে থাকতেই ভালবাসি। কারণ ছোটবেলা থেকেই দেখেছি মাসহ পরিবারের সবাই কোনো না কোন কাজ করেন। সুতরাং আমার বসে থাকার সুযোগ নেই। আমার ব্যবসাটা দ্বিতীয় সন্তান। ঘর আর সন্তানকে যেভাবে দেখি, ব্যবসাটাকেও সেইভাবেই লালন করি।

দৈনিক অধিকরণ: কারখানাতে কত শ্রমিক কাজ করেন? আর তাদের কতখানি সময় দিতে হয় এবং আপনাকেই বা কারখানার পিছনে কি পরিমাণ সময় বা শ্রম দিতে হয়?

ইসরাত জাহান চৌধুরী: করোনাকালের পর কারখানার কাজের কৌশলে একটু পরিবর্তন এনেছি। এখন চুক্তিভিত্তিক কাজই বেশি করাচ্ছি। আমরা তো পাট নিয়ে কাজ করি। অন্তত ৫০ ধরনের আইটেম নিয়ে কাজ হয়। কিছু কাজ করাই ঢাকার বাইরেও। সরাসরি তাদের কাছে চলে যাই। ঘরে বসে যেসব নারীরা কাজ করেন, তাদের কাছ থেকে আমরা নানা পণ্য তৈরি করে নিয়ে আসি। কুটিরশিল্পের আওয়তায় আমাদের ঐতিহ্যবাহী পাটপণ্য যারা তৈরি করেন, তারা তো অনেকেই হারিয়ে যাচ্ছেন। তো এই হারানো ঐতিহ্যগুলো ফিরিয়ে আনার এই কাজটি আমি উপভোগই করি। কারখানা ও কারখানার বাইরে সবমিলিয়ে আমার ৫০ কর্মী কাজ করেন। আলহামদুলিল্লাহ।

দৈনিক অধিকরণ: পাটপণ্যের কাঁচামাল পাটের সহজলভ্যতা কী আছে?

ইসরাত জাহান চৌধুরী: আসলে পাট নিয়ে আমাদের দেশে প্রচুর রাজনীতি আছে। যাঁরা এই পাট নিয়ে কাজ করে, তারা বিষয়টি জানেন। গত কয়েক বছর ধরে এটা নিয়ে বাজে ধরণের সিন্ডিকেট হচ্ছে। পাটের দর নির্ধারণ করা নেই। কাঁচামালে বাজারদর মাঝে মাঝেই বিপাকে ফেলে। যেমন- হঠাৎ বাইরের অর্ডার চলে এলে, সহজে পাটের ফেব্রিক বা সুতা পাওয়া যায় না। দামটাও বেড়ে যায়। সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশে পাট নিয়ে কাজ করা একটু কঠিন।

এটা একটা দু:খজনক ব্যাপার এইজন্য যে, সোনালী আঁশ পাট আমাদের দেশেই জন্মে। আমাদের কৃষকরাই এটি উৎপন্ন করে। এখানেই এর সহজলভ্যতা হওয়ার কথা। আর আমাদের এই অর্থকরী ফসল পাটকে ব্যবহার করে যদি এর বাজার সম্প্রসারণ করা যায় এবং দামটা নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়, তাহলে আমার মনে হয় বাংলাদেশে আর কিছু লাগবে না। শুধু এই পাট বেঁচেই বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যাওয়ার কথা। কিন্তু সমস্যা হলো, ভেতরে এতো রাজনীতি!

দৈনিক অধিকরণ: পাট ও পাটপণ্য দিয়েই আবার অর্থকরী ফসলের সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব?

ইসরাত জাহান চৌধুরী: পাটের ভবিষ্যত অনেক ভালো। পাটের উৎপাদন হচ্ছে। কি্ন্তু সিস্টেমে অনেক গলদ আছে। সেই সাথে পাটের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করাটাও জরুরি। পাটপণ্য তৈরিতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। যেক’টি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, তার বেশিরভাগই শপিং ব্যাগসহ কয়েকটি নির্ধারিত আইটেমের উপর। অথচ ১৮২ টির মতো পাটপণ্য আমরা রফতানিই করি। পাশাপাশি দেখুন, গার্মেন্টস সেক্টরের প্রায় প্রতিটি বিষয়েরই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। গার্মেন্টস সেক্টরের অনেক আগে থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য নিয়ে বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে নিজেকে তুলে ধরেছিলো। ভারতে পাট নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশে ছোটখাট প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছাড়া তেমন কিছুই নেই।

দৈনিক অধিকরণ: পাট ও পাটপণ্যের বাজারজাতকরণের সমস্যা কোথায়?

ইসরাত জাহান চৌধুরী: আমাদের এই খাতে বাজারজাতকরণ একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে এই খাতের ছোট উদ্যোক্তদের জন্য বিষয়টি খুবই নাজুক। সবার জন্য তো সম্ভব না বায়ার ধরে/খুঁজে আনা। এ করছে, আমারও করতে হবে- এই হুজুগে হয়তো অনেকেই পাটপণ্য নিয়ে ব্যবসায় ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু কিছুদিন চালানোর পর আর পারে না। কারণ তারা বায়ারের কাছে পৌঁছাতে পারে না।

আরেকটা সমস্যা হলো- অনেকে মনে করেন, পাটপণ্যের দাম বোধ হয় খুব কম। পাটের ফেব্রিক যারা বানান, তাদের সংখ্যা খুব কম। হাতে গোণা কয়েকজন এই পাটের সুতা তৈরি করে। যার ফলে এটাও ব্যয়বহুল হয়। এখানে যদি একটা দাম নির্ধারণ থাকতো এবং ফেব্রিক তৈরির কারখানা বা ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেতো, সেক্ষেত্রে পাটপণ্যের বাজারজাতকরণ সহজ হতো। ফেব্রিকটা সস্তায় পেলে, আমরা পণ্যগুলোও সস্তায় দিতে পারতাম।

দৈনিক অধিকরণ: বাংলাদেশের জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক হিসেবে সবাইকে একসাথে নিয়ে কিভাবে কাজ করেন?

ইসরাত জাহান চৌধুরী: আমাদের অ্যাসোসিয়েশনটি সবচেয়ে পুরোনো সংগঠন। পার্সোনালি আমি চাচ্ছি, ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের নিয়ে একসাথে কাজ করতে। আমরা সবাই জানি, পাটপণ্য রফতানিতে ২০ শতাংশ ভর্তুকি পাই। কিন্তু এর অন্যতম শর্তের কথা অনেকেই জানেন না। তা হলো- আপনি সেক্ষেত্রে মিল অ্যাসোসিয়েশনের মেম্বার হতে হবে। আর এই মেম্বারশিপের জন্য আপনাকে দুই লাখ টাকা এবং ২০টা লুম লাগবে। তো আমরা চাচ্ছি, এই গ্যাড়াকল মুক্ত হয়ে ছোট উদ্যোক্তারা যেনো এই ভর্তুকি পান। এই বিষয়টি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ঝুলছে। তারপরও আমরা আশাবাদী।

দৈনিক অধিকরণ: ছোট উদ্যোক্তাদের এইসব সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কী সমন্বয়ের কাজটি করছে?

ইসরাত জাহান চৌধুরী: আমরা তো করেই যাচ্ছি। আসলে কি জানেন, আমাদের দেশে সমন্বয়ের এতো অভাব! যদি প্রত্যেকে যার যার কাজটি করতো এবং অন্যদের কাজটিও যদি তাকে করতে দেই, সেখানেই সবাই উপকৃত হতো।

দৈনিক অধিকরণ: পাটজাত পণ্যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে আপনার সংগঠন ও আপনার ব্যক্তিগত ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

ইসরাত জাহান চৌধুরী: বাজারজাতকরণে রফতানির কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দেশে মোড়কজাতকরণে আমাদের ১৭টি পণ্য ব্যবহার করার কথা। কিন্তু চালের বস্তা বা চিনির বস্তাসহ হাতেগোণা কয়েকটি পণ্যে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করি। বাকিগুলোতে এখনও কার্যকর করা হচ্ছে না। যদি বাধ্যতামূলক করা হতো, সেক্ষেত্রে দেশে পাটের ব্যবহার বাড়বে। কর্মসংস্থানও বাড়বে।

বহির্বিশ্ব এখন ইকোফ্রেন্ডলি পরিবেশে যাচ্ছে। অথচ আমরা এখনও প্লাস্টিকে আটকে আছি। এখন বাইরে নিজেরাই যদি রফতানি করতে পারি, সেক্ষেত্রে লাভবান হবো আমরা।

দৈনিক অধিকরণ: এজন্য করণীয় কি?

ইসরাত জাহান চৌধুরী: দেশের কাঁচামাল যেনো বাইরে চলে না যায়, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত: বাইরের বায়ারদের কাছে যেহেতু সব শ্রেণির উদ্যোক্তা পৌঁছাতে পারেন না, সেক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে আমাদের দূতাবাসগুলো যদি মানসম্পন্ন পাটপণ্যের প্রদর্শনী কাউন্টার বা কর্ণার রাখেন, যেখানে বায়াররা এসে দেখে, পছন্দসই পণ্য অর্ডার করবেন, সেটা বোধ হয় দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

আরেকটি গুরু্বপূর্ণ বিষয় হলো- যেহেতু আমাদের পণ্য, সেজন্য একটি আন্তর্জাতিক মেলা হওয়া উচিত, বর্তমানের আন্তর্জাতিক মেলার মতো নয়। এখানে কোনো পণ্য বিক্রি হবে না; প্রদর্শনী হবে। এটা আসলে বায়ার-সেলার মিটিং এর মতো হতে পারে। যেখানে বায়াররা আসবেন, পণ্য দেখবেন। পছন্দ মতো অর্ডার করবেন, নিয়ে যাবেন। এতে সেসব উদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন, যারা বাইরে যেতে পারেন না, কিংবা প্রক্রিয়াটাই বোঝেন না। জার্মানি বা হংকং এর মেলায় ক’জন যেতে পারেন বা যাওয়া সম্ভব? এই ধরণের ব্যবসায়ীরা ঘরে বসেই অর্ডার পেয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের পণ্য বাইরে পাঠাতে পারছেন। আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রাও।

দৈনিক অধিকরণ: ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের বাইরের মেলায় যোগদানের জন্য সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা আছে কী?

ইসরাত জাহান চৌধুরী: সরকারী যেটুকু পৃষ্ঠপোষকতা আছে, সেটুকু বাদ দিয়েও বাইরের দেশের একটি মেলায় অংশ নিতে একজন উদ্যোক্তাকে ন্যুনতম ছয় লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়। কিন্তু সারা বছর কর্মী/শ্রমিকদের ব্যয়, কারখানা ব্যয়, পণ্য উৎপাদন খরচ চালিয়ে অনেকের জন্যই এই মেলায় অংশগ্রহণ করার মতো বিলাসিতার সুযোগ থাকে না। আর মেলায় গিয়েও যে তিনি অর্ডার পাবেন তারও নিশ্চয়তা নেই।

তবে এক্ষেত্রে সরকারের একটা উদ্যোগ নেয়া জরুরি। সেটা হলো- বছরে অন্তত পাঁচজন নির্ভরযোগ্য ও সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাকে টানা দু’বছর সরকারী খরচে বিদেশের মেলাগুলোতে পাঠানো উচিত। হতে পারে প্লেন বা যাতায়াত খরচটা তিনি দিয়ে গেলেন, স্টল ভাড়ার খরচটা সরকার দিলো। এই ছোট ছোট উদ্যোগগুলোই বড় প্রভাব ফেলতে পারবে বলে মনে হয়।

দৈনিক অধিকরণ: আপনার এসব পরামর্শ বা এ ধরণের কোনো সুপারিশমালা নিয়ে কি পাট মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন?

ইসরাত জাহান চৌধুরী: আমরা পাঠিয়েছি কিছু সুপারিশমালা। বাকিটা তো তাদের উপর নির্ভর করে।

দৈনিক অধিকরণ: আচ্ছা পার্শ্ববতী দেশ ভারতের সাথে আমাদের পাটের তুলনামূলক চিত্রটা কী?

ইসরাত জাহান চৌধুরী: আসলে ভারতের সাথে তুলনা করা উচিত নয় বলে আমি মনে করি। কারণ ভারত অনেক বড় একটা দেশ। তারপরও ভারতের চেয়ে আমাদের পাটের উৎপাদন এবং গুণগত মান অনেক।

অনেকে বলেন, ভারতের মতো আমরা বিজনেসটা করতে পারি না। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমাদের পাশের দেশে ‘আনঅফিসিয়াল’ভাবে বেশ কিছু পাট চলে গেছে। এবং আমাদের ফেব্রিকটা সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে যায় ভারতে। তারা ডাইভার্সিফাইড পণ্য তৈরি করে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। কিন্তু যদি এই পাচার রোধ করে আমরা নিজেরাই কোয়ালিটি পণ্য তৈরি করে সরাসরি রফতানি করতে পারি, তাহলে আমরা উপকৃত হতে পারি। সেই সাথে পাট ও পাটজাত পণ্যের বাজার শক্তিশালী করতে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার।

দৈনিক অধিকরণ: এতক্ষণ আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

বিজ্ঞাপন

সংবাদটি শেয়ার করুন

নিউজলেটার সাবসক্রাইব

জনপ্রিয়

আপনার জন্য আরো কিছু সংবাদ
সম্পর্কিত