২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ❑ ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১১ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি ❑ সোমবার

পর্যটন শিল্পকে বৃহৎ শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা

অনলাইন ডেস্ক, অধিকরণ ডট কম

অধিকরণ অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

বিজ্ঞাপন

একান্ত সাক্ষাৎকারে ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের

শামসুল হক বসুনিয়া/ জি আর পারভেজ

বিজ্ঞাপন

পর্যটন শিল্পকে বৃহৎ শ্ল্পি হিসেবে গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এ লক্ষ্যে আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে যে জাতীয় শিল্পনীতি ঘোষণা করা হবে তাতে এই শিল্পের কথা অন্তর্ভূক্ত থাকবে। সেই ঘোষণায় ১০টি অগ্রাধিকার শিল্প স্থান পাবে সেখানে পর্যটন শিল্প হবে তৃতীয়। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে আরো পরিচিত করে তোলার জন্য শুরু হয়েছে এই শিল্পের মাধ্যমে নয়া উদ্যোগ। উদ্যোগের অংশ হিসেবে ‘মুজিব বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডিং চালু করা হয়েছে।স্বাধীনতার প্রতীক , মুক্তির প্রতীক ও সমৃদ্ধির প্রতীক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিই জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের প্রধান; সে কারণে তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অংশ হিসেবে বহির্বিশ্বে তার নামের এই ব্র্যান্ডিং ধারণ করেছি আমরা। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, অতিরিক্ত সচিব জনাব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের দৈনিক অধিকরণকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারের বিষয়টি পাঠকদের উদ্দেশ্যে নিচে তুলে ধরা হলো:

অধিকরণ: পর্যটন শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে সরকার গৃহীত পরিকল্পনা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে?

সিইও: পর্যটন শিল্পের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি যে মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছিল তা কোভিড-১৯ ধেয়ে আসায় থেমে গিয়েছিল। কোভিডের তীব্রতা কমে যাবার পর আবার মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু হয়। আগামী ২০২৩ সালের ৩০ জুন এই মহাপরিকল্পনার কাজ শেষ হবে। যেখানে স্ট্রকচারাল, আর্কিটেকচারাল, ইনভেস্টমেন্ট ও মার্কেটিং বিভাগ কাজ করবে।

অধিকরণ: এ্যাকশন প্লান কিভাবে কার্যকর করা হবে?

বিজ্ঞাপন

সিইও: এই মহাপরিকল্পনায় ১ হাজার ৫১টি আকর্ষণীয় স্থানকে পর্যটন স্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে ৫০টি আকর্ষণীয় স্থান বা স্পটকে অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই মহাপরিকল্পনার আওতায় নেয়া হবে এ্যাকশন প্লান যেখানে রয়েছে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা।

অধিকরণ: বাংলাদেশে পর্যটকদের আগমন ও অবস্থানকে সহজতর ও নিরাপদ করার বিষয়ে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন?

সিইও : পর্যটন শিল্প সুশৃঙ্খল শিল্প হিসেবে গড়ে তোলা হলে পর্যটকদের আগমন ও অবস্থান সহজতর ও নিরাপদ হবে।

বিজ্ঞাপন

অধিকরণ: কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এই শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলবে?

সিইও: কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এই শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব রাখবে। পর্যটন শিল্প সুশৃঙ্খল শিল্প হিসেবে গড়ে ওঠলে ২০৩০ সাল থেকে এদেশে প্রচুর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। সরকারের কর্মসংস্থানের কৌশলপত্রের অধীনে এই কর্মসংস্থান হবে। বিশ্ব পর্যটন সংস্থা ও অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি স্টেকহোল্ডারদের সুপারিশের ভিত্তিতে এই শিল্পে ১২টি উপখাতে ১০৮টি কর্মকান্ড পরিচালিত করা হবে যা কর্মক্ষেত্র সৃষ্টির ব্যাপারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে।

অধিকরণ: বেসরকারি ও সরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে সরকার কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে?

সিইও: ২/৩ বছরের মধ্যে যে জাতীয় শিল্প নীতি ঘোষণা করা হবে সেই ঘোষণায় বেসরকারি ও সরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে সরকার কয়েকটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ১০টি অগ্রাধিকার ও ৩৪টি সেবা খাতকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই ৩৪টি খাতের মধ্যে পর্যটন শিল্প ১০ম স্থান অধিকার করেছে।

অধিকরণ: পর্যটন শিল্পের আন্তর্জাতিক স্ট্যন্ডার্ড স্থাপন করতে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে?

সিইও: পর্যটন শিল্পের আন্তর্জাতিক স্ট্যন্ডার্ড মেইনটেইন করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা ও কর্মী গড়তে পর্যটন ও আতিথেয়তা খাতে উচ্চতর ট্রেনিং দেয়ার কর্যক্রম চালু হয়েছে।

অধিকরণ: এই লক্ষ্যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে কিনা?

সিইও : আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করে সেখানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ৫০ জন মহিলাকে এ পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

অধিকরণ: করোনা মহামারীতে পর্যটন শিল্পের যে বিপর্যয় নেমেছিল তা উত্তরণের জন্য কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?

সিইও: করোনা মহামারীতে পর্যটন শিল্পের যে বিপর্যয় নেমেছিল তা উত্তরণের জন্য ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে তাদের কল্যাণার্থে

৬শ’ বিলিয়ন টাকা দেয়া হয়েছে। ২০টি গাইড লাইন তৈরি করে ৮টি সেক্টরে সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হয়। গড়ে তোলা হয় এই মরণব্যাধির হাত থেকে মানুষকে বাঁচানোর দুর্ভেদ্য দেয়াল।

অধিকরণ: পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য নেয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়@া হয়েছে কি?

সিইও: হাঁ ব্যাপক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। নৃ-জাতিভুক্ত জাতিসমূহের ৬৫ হাজার মহিলা কর্মিকে নিয়ে কাজ করছে ”ভ্রমণ কণ্যা” নামে এক সংগঠন। তাদের দক্ষ জনবল হিসেবে তৈরি করার কাজ চলছে।

অধিকরণ: ইকো-ট্যুরিজম নিয়ে পর্যটকদের ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে কেমন প্রভাব ফেলছে?

সিইও: ইকো-ট্যুরিজম নিয়ে পর্যটকদের ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এ কারণে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা সুন্দরবন, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন , জাফলং, খুলনার কয়ড়া, পটুয়াখালির কুয়াকাটা ও কলাপাড়ার মতো স্থান সমূহের প্রতি যথেষ্ট আগ্রহ দেখাচ্ছে। মাস্টার প্লান তৈরি সম্পন্ন শেষে এ্যাকশন প্লান কার্যকর হবার সাথে সাথে এই আগ্রহের বাস্তব প্রতিফলন ঘটবে।

অধিকরণ: মহিলা ও নৃ-জাতির সদস্যরা কর্মসংস্থানে স্থান পাচ্ছে কিনা?

সিইও: হাঁ, মহিলা ও নৃ-জাতির সদস্যদের পর্যটন শিল্পে বিপুলভাবে কর্মসংস্থান হবে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের সহায়তায় আগামী ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর ১শ৫০ জন পর্যটক আসছেন। এদের সাথে ডিসেম্বরে এসে যুক্ত হচ্ছেন আরো ১ হাজার পর্যটক।পর্যটকরা যাতে কম সময়ে ও কম পরিশ্রমে আকর্ষণীয় স্থানসমূহ ভ্রমণ করতে পারেন সেজন্য নৌ, বিমান, ও সড়ক যোগাযোগের উত্তম ব্যবস্থা করা হবে। হোটেল-মোটেলের উৎকর্ষ সাধন, ও তাদেও গাইড দিতে উচ্চমান সম্পন্ন্ গাইড পরিবেশন করা হবে যা তাদের আরো আকৃষ্ট করবে।

অধিকরণ: পর্যটকদের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ কি ভূমিকা পালন করছে?

সিইও: পর্যটকদের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ গুরুযত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ একই সাথে পর্যটক ও স্থানীয়দের সাথে বন্ধু প্রতিম আচরনের মাধ্যমে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে। তারা প্রচার ও উন্নয়ন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন। পাশাপাশি উচ্চস্বরে গান গাওয়া ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করা থেকে সকলকে সংযত রাখেন।

অধিকরণ: মহাপরিকল্পনার আওতায় বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশমান পরিস্থিতি কবে দৃশ্যমান হবে?

সিইও: মহাপরিকল্পনার অধীনে দক্ষিাঞ্চলের বরিশাল ও খুলনায় পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে।

পদ্মা সেতু চালু হবার পর এই সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত হয়েছে। এক সময় এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী মহাত্মা পরম চাঁদ গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আকৃষ্ট করতো বলে তারা সেখানে ভ্রমণ করেছেন।পর্যটন শিল্প কর্তৃপক্ষ বিষয়টির প্রতি নজর দিয়েছেন এবং এতদঞ্চলের উন্নয়নে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। মহাপরিকল্পনা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চুড়ান্ত হবে এবং আগামী জুলাই থেকে শুরু হবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের এ্যাকশন কার্যক্রম।

বিজ্ঞাপন

সংবাদটি শেয়ার করুন

নিউজলেটার সাবসক্রাইব

জনপ্রিয়

আপনার জন্য আরো কিছু সংবাদ
সম্পর্কিত