২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ❑ ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১২ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি ❑ মঙ্গলবার

নতুন প্রজন্মকে চাকুরী না খুঁজে নিজে কিছু করতে হবে

অনলাইন ডেস্ক, অধিকরণ ডট কম

অধিকরণ অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

বিজ্ঞাপন

আইসিটি সেক্টরের শিল্প উদ্যোক্তা মোঃ মোশারফ হোসেন ঃ

হুমায়ূন মুজিব

বিজ্ঞাপন

‘সমস্যা তোমাকে থামিয়ে দেয়ার জন্য আসেনা , সে আসে যাতে তুমি নতুন পথ খুঁজে পাও’- রবার্ট এইচ মূলার এর এই উক্তির অনুসরণে শিল্পপতি মোঃ মোশারফ হোসেন জীবনের গতিপথ’কে পরিবর্তন করে আজ সফল আইটি ব্যবসায়ী। মোঃ মোশারফ হোসেন জন্মগ্রহণ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের এক বছর আগে ১৯৭০ সালের ২ জুন ফেনীর সোনাগাজীতে, প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত সোনাগাজীতে লেখাপড়া করে পরে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন ফেনী কলেজে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স-মাস্টার্স সহ উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন। কম্পিউটার বিজনেস সেক্টরে মোঃ মোশারফ হোসেন একজন সফল কিংবদন্তী ব্যবসায়ী । দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রিন্টারের কালি উৎপাদন করে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন।

মোঃ মোশারফ হোসেন প্রোপাইটার ইঙ্ক মাস্টার,ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডিসিএটেক লিমিটেড, সভাপতি ফেনী আইটি ফোরাম-ঢাকা, সোনাগাজী সমিতি ঢাকার নির্বাহী সদস্য, সাবেক সভাপতি কনকর্ড এম্পোরিয়াম শপিং সেন্টার কাটাবন-ঢাকা, সাবেক মহাসচিব এসোসিয়েশন ফর কম্পিউটার প্রফেশনাল বাংলাদেশ, অধ্যক্ষ-ঢাকা কম্পিউটার একাডেমী, মহাসচিব-কেন্দ্রীয় কমিটি, শিক্ষা ও চাকুরীতে বৈষম্য প্রতিরোধ সংগ্রাম পরিষদ। কম্পিউটার ব্যবসায় মোঃ মোশারফ হোসেন ঃ এক জীবন্ত কিংবদন্তী, ১৯৯৫ সালে ব্যবসা শুরু করে এ পর্যন্ত আইসিটি সেক্টরে অবদানের জন্য পেয়েছেন-বিসিএস ডিজিটাল আইসিটি ফেয়ার-২০১২ তথ্যপ্রযুক্তি এওয়ার্ড, বিসিএস ডিজিটাল এক্সপো-২০১৩ রাজশাহী এওয়ার্ড, বিসিএস ডিজিটাল এক্সপ্রো-২০১৩ সিলেট এওয়ার্ড, বিসিএস ডিজিটাল এক্সপ্রো-২০১৫-১৬ এওয়ার্ড সহ নানা সামাজিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। মোঃ মোশারফ হোসেন ৯০ এর দশকে লেখাপড়া শেষ করে চাকুরীতে মনোযোগী হননি নিজে উদ্যোক্তা হয়েছেন, নতুন প্রজন্মের প্রতি তাঁর আহবান যাতে চাকুরী না খুঁজে নিজে কিছু করতে হবে। দৈনিক অধিকরণ এর স্টাফ রিপোর্টার হুমায়ূন মুজিবের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় আইসিটি সেক্টরের শিল্প উদ্যোক্তা মোঃ মোশারফ হোসেন এসব কথা বলেন।

আপনার শৈশব কৈশোর কিভাবে কেটেছে যদি বলেন ?

মোঃ মোশারফ হোসেন ঃ – জন্ম শৈশব কৈশোর কেটেছে ফেনীর সোনাগাজীতে, গৃহস্থ কৃষক পরিবারের সন্তান আমি। দূরন্ত শৈশবে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী ছিলাম ফুটবল ছিল প্রিয় খেলা। বাবা কৃষক হলেও যখন যা চাইতাম তা পেতাম। পরিবারে বাবা মা সহ এক ভাই এক বোন ছিলাম সেই হিসাবে আমি একক পরিবারেই বড় হয়েছি। পরিবারের চাচা, ফুফুরা আলাদা থাকলেও আমাকে সবাই পছন্দ করতেন।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষা জীবন নিয়ে আপনার অনুভূতি জানাবেন ?

মোঃ মোশারফ হোসেন ঃ- শৈশবে মক্তবে আরবী শিক্ষার মধ্যদিয়ে লেথাপড়া শুরু করি। মক্তবে যাওয়ার সময় বাড়ি থেকে ৫০ পয়সা পেতাম সেই পয়সা দিয়ে শখের বশে গোপনে আঁচার বিক্রি করতাম এটা এক ধরনের অবুঝ বয়সের অভিজ্ঞতা । পরে সোনাগাজীতে গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা নেই ক্লাস সিক্সে উঠার পর লেখাপড়া বন্ধ করে খেলাধুলায় মনোযোগী হয়ে পড়ি। আত্মীয়রা বাবা মাকে নানা কথা বলতো। বাবা বিরক্ত হয়ে গরু কিনে দিলেন, গরু লালন-পালন করার এক পর্যায়ে দুই-তিন বছরের মাথায় আর ভালো লাগছিলনা। পরে আবার লেখাপড়া শুরু করি সবাই আবার আগের মতো আদর করতে লাগল। সোনাগাজী হাই স্কুল থেকে ১৯৮৫ সালে কয়েকটি লেটার মার্কসহ মাধ্যমিক ও ১৯৮৮ সালে ফেনী সরকারী কলেজ থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক এবং ১৯৮৭-১৯৮৮ সেশনে ভর্তি হয়ে পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্ব্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করি। ছাত্রজীবনে শিক্ষা ও চাকুরীতে বৈষম্য প্রতিরোধ সংগ্রাম পরিষদ এর কেন্দ্রীয় মহাসচিব ছিলাম ১৯৯৪-৯৫ সালে এ সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ গুলোতে ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

চাকরী না করে ব্যবসায় কেন এলেন কিভাবে এলেন ?

বিজ্ঞাপন

মোঃ মোশারফ হোসেন ঃ- লেখাপড়া শেষ করে সরকারী বেসরকারী চাকুরীর জন্য ইন্টারভিউ দিতে শুরু করলে সব জায়গায় চান্স পেতাম কিন্তু সরকারী চাকরিতে ঘুষ চাইতো। বাড়ি থেকে ঋণ করে একলক্ষ টাকা দিলেও চাকরীতে না গিয়ে নিজে কিছু করার তাগিদে তিন বন্ধু মিলে আজিজ সুপার মার্কেটে কম্পিউটার শিখি। ১৯৯৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বন্ধুকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করি ‘ঢাকা কম্পিউটার একাডেমী’। এই একাডেমীর আমি প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ছিলাম এবং এখান থেকেই সূচনা।

সাফল্যের ধারাবাহিকতা কিভাবে এলো জানতে চাই ?

মোঃ মোশারফ হোসেন ঃ- ঢাকা কম্পিউটার একাডেমী দিয়েই সাফল্যের সূচনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের একটি লাম্বা গ্রুপ ছিল। সেই গ্রুপে আমরা ১১ জন ছিলাম। বন্ধুদের পরামর্শেই শুরু করি ঢাকা কম্পিউটার একাডেমী। নো রিস্ক নো গেইন এবিষয়টি মাথায় ছিল। পার্টনার ছিল দুই বন্ধু প্রতিদিন প্রচুর প্রশিক্ষণের জন্য অনেক শিক্ষার্থী আসতে থাকলো। এলিফ্যান্ট রোডে অফিস নিয়ে শুরু হলো কম্পিউটার ব্যবসা। মাসে দুই আড়াই লাখ টাকা আয় হতে থাকলো। জনকন্ঠে একাডেমী নিয়ে লেখালেখি হলো সাংবাদিক মাহফুজ পারেভেজ পরামর্শ দিলো ৫ থেকে ১২ বছরের শিশুদের কম্পিউটার শিখাতে, আগ্রহী সামাজিক কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে আমরা শুক্রবার – শনিবার বাচ্চাদের কম্পিউটার শিখানো শুরু করলাম যাদের অনেকে এখন আন্তর্জাতিক অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। কবি মোহন রায়হানের ছেলে শাশা আমাদের এখানে কম্পিউটার শিখে এখন কানাডার ব্লাকবেরী কোম্পানীতে কাজ করছেন। এক পর্যায়ে বন্ধুরা বেইমানী শুরু করলো। বন্ধুরা ব্যবসার সমান শেয়ার চাইলেন পার্টনাররা সরে গেলো, আসলে তারা মেনে নিতে পারলনা। কম্পিউটার নিয়ে মামলা হলো , মামলায় জিতে তা ফেরত পেলাম।

একক ভাবে কিভাবে শুরু করলেন?

মোঃ মোশারফ হোসেন ঃ- ব্যবসায় একটা জিনিস জরুরি মেনে নেয়ার মাননিকতা,লিখিত সম্পর্কও টেকেনা যদি মানসিকতা বড় না হয়। পার্টনার ভেঙ্গে যাওয়ার পর এলিফ্যান্ট রোডের অফিস বাসা ছেড়ে মিরপুরে চলে গেলাম ২৮০০টাকায় বাসা নিলাম আর কাটাবন কনকর্ড এম্পোরিয়ামে ১৫০০ টাকা ভাড়ায় দোকান নিলাম শুরু হলো একক সংগ্রাম বাসা ভাড়া দিতে পারতাম না কষ্ট হতো,দোকানে ঠিকমতো আসতে পারতাম না, বউ চাকরী করে সংসার চালাতে সহযোগীতা করতো। এভাবে ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকলাম কিছু টাকা জমা হলো। আমার ট্রাভেলিং করার শখ ছিল।

ট্রার্নিং পয়েন্ট কিভাবে এলো ?

মোঃ মোশারফ হোসেন ঃ- সবাই ইমপ্রোর্ট করে আমার কিছু টাকা জমা হলে সাভারে ২০০৬ সালে একটা জমি কিনলাম। ইমপ্রোর্ট করার মতো টাকা ছিলনা, প্রতিদিন ব্যবসায় অগ্রগতি হতে থাকলো। ট্রাভেল শুরু করলাম, গেলাম কোরিয়াতে পরে ২০০৬ সালে জার্মানীর হ্যানয়ে কম্পিউটার মেলা ছিল। বিভিন্ন দেশে ঘুরতে থাকলাম কিন্তু টাকা অনুযায়ী কিছু করতে পারছিলাম না । তখন প্রিন্টারের কালির বিষয়টি মাথায় আসলো । ভাবতে থাকলাম কিভাবে সহজে কালি উৎপাদন করা যায়। তখন কার্টিজ কিনে প্রিন্ট করতে হতো ৪ হাজার টাকা দিয়ে কার্টিজ কিনে প্রিন্ট হতো ৬০-৭০ পিস। এরপর আমি চায়না থেকে কালি কিনে এনে বিক্রি করতাম। তখন চিন্তা করলাম এটাকে কিভাবে সহজ করা যায়,খুঁজতে খুঁজতে আমেরিকা থেকে ২ কোটি টাকা দিয়ে প্রযুক্তি কিনে সাভারে ফ্যাক্টরী চালু করে প্রিন্টারের কালি উৎপাদন শুরু করলাম। নিজে মার্কেটিং করলাম প্রথম দিকে লোকজন হাসাহাসি করতো কিন্তু এখন বাস্তবতা হচ্ছে এক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে গেছে ২০০ টাকার কালি দিয়ে ৪ হাজার কপি প্রিন্ট হচ্ছে।

ব্যবসা নিয়ে আপনার মানসিক সন্তুষ্টি কেমন, আপনি তো সামাজিক স্বীকৃতিও পেয়েছেন ?

মোঃ মোশারফ হোসেন ঃ- ২২ বছরে তিলে তিলে এককভাবে এই ব্যবসা গড়ে তুলেছি।এখন আমার মূলধন ৫ কোটি টাকা, ৫০ জন কর্মী কাজ করছেন, ডিসিএটেক এখন আইসিটি সেক্টরে একটি পরিচিত নাম। আমি মনে করি জীবনে সফলতা ব্যার্থতা সবই থাকবে, সাহস হারালে চলবেনা অদম্য সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। নতুন প্রজন্মের উদ্দ্যেশে বলতে চাই চাকুরী না খুঁেজ নিজে কিছু করতে হবে।

যেমন ব্যবসার স্বীকৃতি হিসেবে আইসিটি সেক্টরে অবদানের জন্য পেয়েছি-বিসিএস ডিজিটাল আইসিটি ফেয়ার-২০১২ তথ্যপ্রযুক্তি এওয়ার্ড, বিসিএস ডিজিটাল এক্সপো-২০১৩ রাজশাহী এওয়ার্ড, বিসিএস ডিজিটাল এক্সপ্রো-২০১৩ সিলেট এওয়ার্ড, বিসিএস ডিজিটাল এক্সপ্রো-২০১৫-১৬ এওয়ার্ড সহ নানা সামাজিক স্বীকৃতি পেয়েছেন।

এছাড়া বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ফর কম্পিউটার প্রোফেশনাল- এসিপি নামে কম্পিউটার প্রোফেশনালদের নিয়ে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে যারা আইটি সেক্টরে নামকরা ব্যাক্তিত্ব তখন তাঁরা এই সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন, যেমন প্রিয়ডটকমের এবং আইপের মালিক জাকারিয়া স্বপন,রিভ সিস্টেমের মালিক রেজাউল হাসান,বেসিসের গোপাল দেবনাথ,মুন নেটওয়ার্কের মালিক এজাজজুর রহমান সুমন এবং তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিশেষজ্ঞ মনোজ সহ প্রমুখ। এসিপি সংগঠনের সবচেয়ে বড় উল্লেখযোগ্যক কাজের মধ্যে অন্যতম ১৯৯৭ সালের মে মাসে প্রশিক্ষা নেটের সৌজন্যে বাংলাদেশে প্রথম আইসিএম অডিটোরিয়ামে ইন্টারনেটের লাইভ শো। একদিনের শো শেষে দর্শকদের ব্যাপক আগ্রহের কারনে দ্বিতীয় দিনেও শো হয়। কারন তখনকার সরকারী আমলা,সরকারী বেসরকারী ব্যাংক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপ্রদস্থ্য কর্মকর্তাদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। এসিপি‘র মহাসচিব সহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছি।

দৈনিক অধিকরণকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনাকেও ধন্যবাদ

বিজ্ঞাপন

সংবাদটি শেয়ার করুন

নিউজলেটার সাবসক্রাইব

জনপ্রিয়

আপনার জন্য আরো কিছু সংবাদ
সম্পর্কিত