২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ❑ ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১১ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি ❑ সোমবার

তিতাসের ভালোবাসা

অনলাইন ডেস্ক, অধিকরণ ডট কম

অধিকরণ অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

বিজ্ঞাপন

রুহুল ইসলাম টিপু:

তিতাস চাকুরী করেন বনানীতে। ভালোলাগে তার নদী, বৃক্ষ, পশু, ফুল, পাখি, আকাশ, প্রকৃতি। বাংলাদেশের একটি নদীর নাম তিতাস। নিজেকে নদীর মধ্যে ধারণ করে তিতাস। নদীর প্রবাহমান জলের মতোই তিতাসের জীবন। এখন আর তিতাস সেই ছোট্ট শিশু নয়। একজন পরিপূর্ণ মানুষ। ঢাকায় মেসে থাকেন। এটি মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডে। জনবহুল ঢাকার কোলাহলের মধ্যে একটি অভাব অনুভব করেন তিতাস। নিরিবিলি জেলা শহর থেকে লেখাপড়া সম্পন্ন করেন।

বিজ্ঞাপন

চাকুরি ট্রাভেল এজেন্সির হিসাব রক্ষক। বাবা মোবারক সাহেব তিতাসের জন্মের পূর্বে ব্রাম্মণবাড়িয়া চাকুরি করেন। প্রথম সন্তান জন্মের পর তিতাস নাম রেখে ব্রাম্মণবাড়িয়া জেলার প্রতি ভালোবাসাকে বাবা ধরে রেখেছেন। তিতাসের জন্ম ব্রাম্মণবাড়িয়া নয়। মানিকগঞ্জে মোবারক সাহেবের বাড়িতে। ডিসেম্বর ০৭ তারিখে তিতাসের জন্ম। সাল ১৯৯০। মুক্তিযুক্ত তিতাসের অহংকার। গর্বিত বাংলাদেশের নাগরিক। ডিসেম্বরে অর্জিত হয় মহান বিজয়। স্বাধীন রাষ্ট্র প্রিয় দেশ। একটি মানচিত্র। লাল সবুজ পতাকা। দেশ নিয়ে তিতাসের অন্তহীন আবেগ উচ্ছাস। তিতাসের জন্মের পূর্বদিন দেশ স্বৈরশাসকমুক্ত হয়।

০৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ নয় বছরের গণ আন্দোলন সফলতার দিবস। স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বাংলাদেশে তিতাসের প্রথম নি:শ্বাস গ্রহণ। বাবা মোবারক সাহেবের বয়স মুক্তিযুদ্ধের সময় ১০ বছর। মুক্তিযুদ্ধে দাদার অবদান’কে স্মরণ করে তিতাস। মানিকগঞ্জ শহরের একটি সম্ভ্রান্ত হিন্দু বাড়িতে বাস করে সেই পরিবারের সকল সদস্য’কে রক্ষা করেছিলেন। এটি তিতাসের মনোজগতের গর্বের এবং অহংকারের ধন।

তিতাস নির্ধারিত পথে অফিসে আসেন। অফিসের ঠিক কাছাকাছি এসে একটি দৃশ্য তাকে খুবই অবাক করে। তাদের অফিসের সামনের রাস্তা উত্তর দক্ষিণ লম্বালম্বি। এর সঙ্গে লাগোয়া পূর্ব পশ্চিম একটি সড়ক। এ সড়কেই দেখতে পান এক নারী প্রতিদিন অনেকগুলো কুকুরকে খাবার দিচ্ছেন। কুকুরগুলো রাস্তার। কারো পোষা কুকুর নয়। তিনি সতেজ, সুস্বাদু এবং বিভিন্ন রকমের খাবার কুকুরগুলোকে খাওয়ান। খাবারগুলো বাসি পচা এমন নয়। মেয়েটি’র খাবার পরিবেশনা এবং আন্তরিকতা উপভোগ করার মতো। তিতাস প্রাণ ভরে দৃশ্য দেখেন। চোখ জুড়িয়ে যায়। কুকুরকে আদর এবং খাওয়ানোর মধ্যে মেয়েটির রয়েছে অসীম মমত্ব, যতœ এবং ঐকান্তিক ভালোবাসা।

কুকুরকে তিতাস এক সময় ভীষণ ভয় পেতো। কারণ তার বাবা মোবারক সাহেব’কে অনেক পূর্বে কুকুর কামড়িয়েছিল। সেই থেকে তিতাস কুকুর দেখা মাত্র দূরে দূরে থাকেন। তিতাসের ইচ্ছে করে মেয়েটির নাম জানতে। পরিচিত হতে। কথা বলার সাহস তার হয় না। তিতাস ভাবেন। এখন মানুষ মানুষ’কে ভালোবাসা’র বদলে করছে ঘৃণা, আহত, নির্যাতন, ধর্ষণ। এমন কি হত্যা পর্যন্ত। সেখানে কুকুর’কে ভালোবাসা! তিতাসের মন আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠে। কুকুরের প্রতি একজন নারীর এতো যত্ন এতো প্রেম। এতো রীতিমতো অভিনব।এ প্রেমের উচ্চতা মাপা তিতাসের সাধ্যের বাইরে। মাঝে মাঝে রান্না করা খাবার দিচ্ছেন মেয়েটি। তিতাস অফিসের নির্ধারিত সময়ের এক ঘন্টা পূর্বে রাস্তার এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকেন। খাবারের মধ্যে বিরিয়ানিও থাকে। খবরের কাগজ পেতে, প্লাস্টিকের প্লেট এ খাবার সাজিয়ে দেন। কুকুরগুলো লেজ নেড়ে মূখের বিচিত্র ভঙ্গিমায় মেয়েটির সঙ্গে ভাব বিনিময় করে। খাবার গ্রহণ করে। আবার আহ্লাদে শরীরে উঠে পড়ে। কুকুরগুলোকে মেয়েটি শাসনও করেন। কখনও হাত থেকে বিস্কুট তুলে নিচ্ছেন। তাদের ধমক, ভালোবাসা এবং আদরের মাখামাখি এই যে সম্পর্ক এটির উপর পৃথিবীতে আর কিছু থাকতে পারে না। এর নামই ভালোবাসা। তিতাসের কামনায় এ ভালোবাসা বড়-ই প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

এই তো সেদিন দেখা যায় একটি কুকুর আহত এবং শরীরের অনেকাংশ রক্তাক্ত। কেউ এমনভাবে আঘাত করেছেন, সেটি দেখে মেয়েটি কেঁদেছিল। হাউ মাউ করে কান্না। কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছিলেন না। অনেকে তাকিয়ে দেখছেন মেয়েটির কান্না আর্তনাদ। হয়ত তো বড় বিপদ। কোন দুর্ঘটনা ঘটেছে। রাগে দুঃখে রাস্তায় চিৎকার করে বলছিলেন, যে আঘাত করেছেন, তাকে হাতের কাছে পেলে, এখনই তার বিরুদ্ধে মামলা করে দিবেন। কুকুরকে আঘাত করার জন্য মামলা। এর জন্য বিচার। যেখানে স্বাধীন বাংলাদেশে কত অসহায় মানুষ বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিতাস যেন অন্য এক ভালোবাসার পৃথিবী দেখতে পান। তিতাস মেয়েটিকে আত্মিকভাবে সমর্থন করেন। আপনার সাথে আছি আমি। আমরাও লড়বো নির্যাতনকারী অপরাধীর বিরুদ্ধে। অপরাধীর সাজা হবে না। তা হতে পারে না।

গতমাসে বাড়ি যাওয়া হয়নি। তিতাসের বিয়ের জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে। তিতাস ভাবেন। কামনা করেন তার হবু স্ত্রী এই কুকুরপ্রেমী নারীর মতো হবেন। এমন তো না-ও হতে পারে। আরো দুশ্চিন্তায় পড়ে যান- তার স্ত্রী’র বাবা মা বা পূর্বসূরী কি ’৭১ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? মানুষ, দেশ মাতৃকা এবং প্রাণীকূল প্রেমী কোন এক মানবীকে তিতাস বিয়ে করতে চান। ভালোবাসা’র স্ত্রীকে নিয়েই তিতাস দেশ এবং পৃথিবীর সেবক হবেন। এ-ই তিতাসের ভালোবাসা!

রুহুল ইসলাম টিপু : লেখক ও উন্নয়ন কর্মী।

বিজ্ঞাপন

সংবাদটি শেয়ার করুন

নিউজলেটার সাবসক্রাইব

জনপ্রিয়

আপনার জন্য আরো কিছু সংবাদ
সম্পর্কিত