২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ❑ ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি ❑ সোমবার

স্বাধীন দেশে সাড়ে ৩ বছর অতঃপর; নেতৃত্বের এক অপার বিস্ময়

অনলাইন ডেস্ক, অধিকরণ ডট কম

অধিকরণ অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

বিজ্ঞাপন

আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা নিরবিছন্নভাবে দেশ শাসন করছেন ১৫ বছর। এর আগেও তিনি রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় ছিলেন ৫ বছর। তাঁর বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশে বেঁচে ছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। ঘাতকরা তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা, আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। অনেক চাড়াই-উতরাই পার হয়ে শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে পিতার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছিলেন। দেশবাসী আবার স্বপ্ন দেখছেন, বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার। সাধরন মানুষ এখন ভাবতে বসেছেন তিনিই এখন বাংলাদেশ।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে ২০২১ সালে । গত ৫ বছরে দেশ পেয়েছে পদ্মা সেতু, রেল সেতু। ঢাকায় মেট্রোরেল, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অত্যাধুনিক তৃতীয় টার্মিনাল। পারমাণবিক চুল্লি­থেকে কর্ণফুলী টানেল, রূপপুরে গড়ে উঠছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রায় কোনো প্রতিশ্রুতিই অপূর্ণ রাখেননি তিনি। রাস্তা ঘাটের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে, নতুন নতুন সেতু ও সড়ক অবকাঠামোর উন্নতি হয়েছে । সরকার শিক্ষার্থীদের বিনা পয়সায় বই দিচ্ছে। বৃত্তি পাচ্ছে দুস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা। প্রতি জেলায় প্রচুর স্কুল ও কলেজ সরকারিকরণ করে দেয়া হয়েছে। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, মাতৃদুগ্ধ প্রদানকারী কর্মজীবী মহিলাদের ভাতা প্রভৃতি চালু হয়েছে বাংলাদেশে। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের প্রতি সরকারি সাহায্য পৌঁছে দিতে ভুল করেননি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদেরও ভাতা দিচ্ছে সরকার। তাদের জন্য করে দেয়া হয়েছে বীর নিবাস। হিজড়া, বেদে, কুষ্ঠরোগী কেউ বাদ যাচ্ছে না সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি থেকে। ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, সে বছর ২০ জুনে দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৩০টি এবং মুজিববর্ষের সময় তৃতীয় পর্যায়ে ২ ধাপে মোট ৫৯ হাজার ১৩৩টি বাড়ি বিতরণ করা হয়। আরও ২২ হাজার ১০১টি ঘর বিতরণের মাধ্যমে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে মোট সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১টি।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নজাত অর্থনৈতিক মুক্তির পথরেখায় সীমিত সম্পদ সত্তে¡ও তিনি সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করেছেন। বিশেষ করে সামাজিক পাটাতনের সবচেয়ে নিচের অতিদরিদ্রদের জন্য ‘সমতা’, স্বনিয়োজিত খেটে খাওয়া মানুষের জন্য সুরক্ষা এবং প্রবাসে কমব্রত পরিশ্রমী মানুষের জন্য ‘প্রবাসী’র মতো সুদূরপ্রসারী পেনশন কর্মসূচি চালু করে আগামী দিনের প্রবীণদের জন্য জীবনের শেষবেলাকে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করার এক দুঃসাহসী নীতিকৌশল গ্রহণ করেছেন। অস্বীকার করার তো উপায় নেই যে, বিগত ১২-১৩ বছরে আড়াই কোটি গরিব মানুষ দারিদ্র্যরেখার নিচ থেকে ওপরে উঠে এসেছে। দারিদ্র্য নিরসনের এক রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং অন্তর্ভুক্তিকে যুগপৎ গুরুত্ব দিয় এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালকে ভিত্তি বছর ধরে যদি অর্থনীতির কয়েকটি সূচকের তুলনা করি তাহলেই বোঝা যাবে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ‘ল্যান্ডস্কেপ’-এর কী অভাবনীয় পরিবর্তন হয়েছে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের বার্ষিক বাজেটের আকার ছিল ৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩-এ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭.৫ বিলিয়ন ডলারে।

সার্বিক দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫১%। তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৮.৭%-এ। কমেছে প্রায় সাড়ে ৩ গুণ। সে সময় ৫৫% মানুষের উপযুক্ত খাবার পানি মিলত। এখন সে হার প্রায় ৯৯%। সে সময় প্রতি হাজারে ৮৪টি শিশুর মৃত্যু হতো। এখন তা কমে হয়েছে হাজারে ২১। ওই সময় সাক্ষরতার হার ছিল ৪৫%। এখন ৭৫.৬%। নারীর শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে ঘটে গেছে অসাধারণ উন্নয়ন। তখন প্রথমিক স্কুলে বালিকাদের অংশগ্রহণ ছিল ৫৪%। এখন ৯৮.২৫%। কারিগরি শিক্ষার ওপরও ব্যাপক জোর দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তখন কারিগরি শিক্ষাশিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের হার ছিল মাত্র দশমিক ৮ শতাংশ। এখন ১৭.২৫%। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষকের অংশগ্রণের হার ছিল ১.৫৩ লাখ। এখন তা ৪.০৩ লাখ। বেড়েছে ৩ গুণের মতো। মাধ্যমিক স্কুলে নারী শিক্ষকের সংখ্যা ছিল ৫৯ হাজার। এখন ৯০ হাজার। আনুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ২০০৬ সালে ছিল ২১.২%। এখন ৪৩.৪৪%। বেড়েছে দ্বীগুণের বেশি।

কৃষি ক্ষেত্রে অগ্রগতিও লক্ষ করবার মতো। ধানের উৎপাদন তো বেড়েই চলেছে। কৃষি গবেষণায় পর্যাপ্ত বাজেট সহায়তা দেওয়ার ফলে নতুন নতুন উচ্চফলনশীল এবং জলবায়ু পরিবর্তন-সহিষ্ণু নতুন ধানের জাত কৃষক পাচ্ছেন। তাই ফসল উৎপাদন বেড়েছে অভাবনীয় হারে। পাশাপাশি গবাদি পশু উৎপাদনের হারও বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। তখন এদের সংখ্যা ছিল ৪ কোটির মতো। এখন ৭ কোটির বেশি। মাছের উৎপাদন তখন ছিল ২১ লাখ টন। এখন ৫৩ লাখ টন। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে তখন উপকার ভোগীর সংখ্যা ছিল ২১ লাখ। এখন ১ কোটি ৮ লাখ। তখন মোবাইলের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৯০ লাখ। এখন ১৮ কোটি ৩৫ লাখ। সংখ্যা দিয়ে আর ভারাক্রান্ত করতে চাই না পাঠকদের। খালি চোখেও আমরা দেখতে পাই অবকাঠামো ও সামাজিক উন্নয়নের পরিবর্তনগুলো। যদি কোভিড এবং ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু না হতো তাহলে এ পরিবর্তনের গতি আরও বাড়ত। তবু এডিবি বাংলাদেশের সর্বশেষ অর্থনৈতিক প্রক্ষপণে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার বরং খানিকটা বাড়িয়ে ৬ শতাংশের বেশিই রেখেছে। প্রবৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই। কিন্তু ম্যাক্রো অর্থনীতির প্রধান দুই সূচক মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হার নিয়ে বেশ খানিকটা দুশ্চিন্তা তো আছেই। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার ক্ষয়ে যাওয়ার ঝুঁকি। তবে এসব ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য আগেভাগেই আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাড়তি সহায়তা লাভের উদ্যোগ, রপ্তানি ও প্রবাস আয় বাড়ানোর প্রচেষ্টা এবং কয়েকটি নিত্যপণ্যের মসৃণ আমদানির জন্য কোটাব্যবস্থা চালুর প্রচেষ্টাসহ ভারতের সঙ্গে উপ-আ লিক সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে ম্যাক্রো অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যার সরকার। তবে এ কথাও ঠিক দেশের সমাজ, রাজনীতিঅর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা ও দুর্যোগ সৃষ্টির অপতৎপর মানুষেরও অভাব নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা এসব অপতৎপরতা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দেশি-বিদেশি শুভশক্তির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

শেখ হাসিনা বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে আরো বেশি সমাদৃত হচ্ছেন। বাংলাদেশ সদস্য না হয়েও আমন্ত্রণ পেলেন ব্রিকস সম্মেলনে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি যাচ্ছেন ‘আসিয়ান’ সভায় যোগ দিতে। আর উন্নত দেশগুলোর জোট জি২০ সম্মেলনে অংশ নিতে শেখ হাসিনাকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সদ্যঃসমাপ্ত এই জোটের দুই দিনব্যাপী সম্মেলন শেষ হলো গত ১০ সেপ্টেম্বর। শেখ হাসিনা ছাড়াও এই সভায় যোগ দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ উন্নত ও ধনী দেশগুলোর প্রায় ২৫ জন সরকার প্রধানসহ গুরুপূর্ণ ব্যক্তিরা। সবার মাঝে উজ্জ্বল ছিল শেখ হাসিনার উপস্থিতি।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার ওপর সব উন্নত দেশের দৃষ্টির অন্য আরেকটি কারণ হচ্ছে, দেশটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমানে এই অ লের একটি অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠছে। বিশ্বে যার বর্তমান অবস্থা ৩২তম। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশটি বিশ্বের নবম, কারো কারো মতে তৃতীয় ভোক্তা পণ্যের বাজার হয়ে উঠবে। জার্মানি বা যুক্তরাজ্যও পেছনে থাকবে। এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশের বিরাট জনসংখ্যা, যার একটি বড় অংশ অর্থনৈতিকভাবে মধ্যবিত্ত। তারাই হবে এই ভোক্তা পণ্যের ক্রেতা। যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা ভারত কিংবা অন্য যেসব দেশ ভোক্তা পণ্য উৎপাদন করে তাদের তো বাংলাদেশের ওপর নজর থাকাটা স্বাভাবিক।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামসহ বিশ্বের বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রশংসাও করা হয় সে সময়। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়ে যুদ্ধের পর বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ধুঁকছে অর্থনৈতিকভাবে। এমন পরিস্থিতিতেও প্রবিদ্ধি করছে বাংলাদেশ।

কোভিড মহামারির কারণে গোটা দুনিয়ার অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়লেও বাংলাদেশের গায়ে তার আঁচ লাগতে দেননি যা ছিলো নেতৃত্বের এক অপার বিস্ময়।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বের কোনো দেশে (১৪৭৫৯৮ বর্গমাইলের আয়তনে) একসঙ্গে এত বিপুল সংখ্যক মসজিদ নির্মাণ এটাই প্রথম। সরকারি উদ্যোগ ও অর্থায়নে একই সাথে এতগুলো মসজিদ নির্মাণের এই মহতী উদ্যোগ জাতীয় ইতিহাসে শুধুনয় মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। মুসলিম বিশ্বের কোন দেশের মুসলিম শাসক বা সরকার প্রধান একসাথে ৫৬০টি মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই অসাধারণ উদ্যোগ ইতিহাসের অংশ হিসাবে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ জনগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই মহতী উদ্যোগের কথা যুগ যুগ ধরে স্মরণ করবে।

বিজ্ঞাপন

সংবাদটি শেয়ার করুন

নিউজলেটার সাবসক্রাইব

জনপ্রিয়

আপনার জন্য আরো কিছু সংবাদ
সম্পর্কিত