ঢাকায় যুদ্ধ বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে অপপ্রচার : অধ্যাপক পারভেজের বিশ্লেষণ

প্রকাশঃ Jul 22, 2025 - 19:20
ঢাকায় যুদ্ধ বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে অপপ্রচার : অধ্যাপক পারভেজের বিশ্লেষণ

তার মতে এটি প্রশিক্ষণ বিমান নয়, এটি একটি যুদ্ধ বিমান এবং পাইলটও প্রশিক্ষণরত নন, তিনি পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষিত পাইলট।ঢাকায় বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে নানা জনে নানা মত প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ এটিকে নিয়ে অপপ্রচারও করছেন বলে মনে করছেন দেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও সামরিক স্টাফ কলেজের অধ্যাপক আহসানুল আলম পারভেজ। তিনি এটিকে যে প্রশিক্ষণ বিমান হিসেবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে সেটারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার মতে এটি প্রশিক্ষণ বিমান নয়, এটি একটি যুদ্ধ বিমান এবং পাইলটও প্রশিক্ষণরত নন, তিনি পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষিত পাইলট।

তিনি বলেন, ২০০৭-২০০৮ সাল থেকে আমি ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ সহ বর্তমানে  AAUB এর যথাক্রমে সিভিল স্পন্সর কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও স্পন্সর কমিটির চেয়ারম্যান  হিসেবে আছি। আমাদের তিন বাহিনীর সামর্থ্য ও যোগ্যতা সম্মন্ধে আমার অনেকটা জ্ঞান আছে। ২১শে জুলাই আমাদের বিমান বাহিনীর F-7 BGI যুদ্ধবিমানের দুর্ঘটনা কবলিত হওয়া নিয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞতা ও ষড়যন্ত্রমূলক উদ্দেশ্যের কারণে অনেকে মারাত্মক ভুল তথ্য ও অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এটা আমাদের বাহিনী গুলোর মরাল, আত্মসম্মান কমানোর অপপ্রয়াস হতে পারে। আমি প্রিয় দেশবাসীকে একেবারে গোমূর্খ ব্যক্তিদের ফেসবুক পোস্ট দেখে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত Flight Safety বিশেষজ্ঞরা তদন্ত করছেন তাই কোন মন্তব্য করা সমচীন নয়।

যে কোনো বিমান দুর্ঘটনার সাথে সাথে একটি প্রশ্ন উঠে।  দুর্ঘটনার কারণ কি  হিউমান অ্যারোর নাকি মেকানিক্যাল  ফল্ট? আমার জ্ঞান থেকে আমার মনে হয়েছে এই দুর্ঘটনার পিছনে হিউম্যান অ্যারোর  বা মেকানিক্যাল ফল্ট দায়ী নয়।

আমার মনে হয়েছে, এই দুর্ঘটনার পিছনে টেকনোলজিক্যাল বা প্রযুক্তিগত ত্রুটি  দায়ী। পাইলট কন্ট্রোল টাওয়ার কে জানিয়েছিলেন হাইট গেইন করতে পারছেন না। নির্ভর যোগ্য সূত্রে হতে জানা গেছে পাইলটের হাতে দুটো অপশন ছিল, তাৎক্ষণিকভাবে ইজেক্ট করা অথবা গ্লাইডিং করে রানওয়েতে ফিরে আসা।

বিমান বাহিনীর বর্তমান প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানের সাথে বিমান বাহিনীর প্রধান হওয়ার আগে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজে একসাথে কাজ করার আমার সৌভাগ্য হয়েছে। তিনি ১২ জুন, ২০২৪ সালে বিমান বাহিনী প্রধান হিসাবে যোগ দেন।

I  found him as one of the finest, meticulous competant and Professional Air Force officer to lead our Air Force.  তার বিরুদ্ধে কখনো সামান্য বিতর্ক উঠে নাই। এবারের F-7 BGI যুদ্ধ বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে এমন সব ব্যক্তি লিখছেন তারা শুধু দেশবাসীকে নয় আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে বিভ্রান্ত করেছে যে F-7 BGI একটি ট্রেনিং এয়ারক্রাফ্ট। F-7 একটি চাইনিজ  যুদ্ধবিমান।  এই F-7 যুদ্ধ বিমানগুলোকে Mig 21 এর আদলে রিফাবিশ করে রাখা হয়েছে। আমাদের যুদ্ধ বিমান বহরে এখনো প্রায় ৩২ টির মতো F-7 যুদ্ধ বিমান সক্রিয় আছে।

এই বিমানগুলো বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ডেলিভারি পেয়েছে ২০১২-১৩ সালে। চীন নিজেরা এই বিমান উৎপাদন বন্ধ করে দেয় ২০১৪ সাল থেকে।

বাংলাদেশে এই মডেলের বিমান এর আগেও আরও দুইবার দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে টাঙ্গাইলের মধুপুরের রসুলপুরে ফায়ারিং রেঞ্জে মহড়ার সময় বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ দিপু নিহত হন। এরপর ২০২১ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয় F-7 এমবি। এতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ নিহত হন।

আমাদের যুদ্ধবিমানের বহরে এই F-7 BGI যুদ্ধ বিমান ব্যবহার বন্ধ করা, এই F-7 BGI যুদ্ধবিমান গুলোকে অন্য কোন কাজে বা অন্য কোন দেশে  নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক।

এই বিমানগুলোকে নিয়ে আমরা এখন কি করবো তা রাষ্ট্রপতি ( সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ), প্রধান উপদেষ্টা ,ন্যাশনাল সিকিউরিটি এডভাইজার সহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নির্ধারণ করবেন। ঢাকায় পাইলট ট্রেনিং হবে কিনা, যশোরে হবে কিনা, চট্টগ্রামে হবে কিনা এই সিদ্ধান্ত জাতীয়  নিরাপত্তার সাথে জড়িত সিদ্ধান্ত এবং চলমান প্রক্রিয়া। এই দুর্ঘটনা থেকে আমাদের এখন বাস্তবভিত্তিক যুগ উপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পরিশেষে আমাদের বিমান বাহিনীকে দেশীয় আন্তর্জাতিক সমস্ত ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। সবাইকে খেয়াল করতে হবে পাইলট প্লেন থেকে নেমেছে কিনা এই বিষয়ে মিথ্যা প্রচার ও রোমান্টিক  প্রচারণা করা হয়েছে।  ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির একজন সম্পূর্ণ প্রশিক্ষিত পাইলট।  প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে একক ফ্লাইট নেওয়ার জন্য এই যুদ্ধ বিমানে উঠেন এবং জানা-অজানা কারণে তিনি একটি দূর্ভাগ্যবশত দুর্ঘটনা কবলিত হন।

এটি যে যুদ্ধ বিমান তার সারসংক্ষেপ
✈️ ওভারভিউ ও উৎস
• F-7 BGI হল চীনের চেংদু J-7/F-7 সিরিজের সবচেয়ে উন্নত এক্সপোর্ট সংস্করণ, যা সোভিয়েত MiG-21 “ফিশক্যান” ফাইটার জেটের লাইসেন্সপ্রাপ্ত সংস্করণ (উইকিপিডিয়া)।
• এটি চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন দ্বারা উৎপাদিত হয় এবং ২০১৩ সালে প্রবর্তিত হয়, যা ৪৮ বছরের J-7 উৎপাদন কার্যক্রমের সমাপ্তি চিহ্নিত করে।

🛠️ উন্নয়ন ও অ্যাভিওনিক্স
• এতে উন্নত KLJ-6F পালস-ডপলার রাডার সংযুক্ত রয়েছে, যা ৮৬ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে সক্ষম, এবং এটি প্রতিরোধ (interception) সক্ষমতা বাড়ায় (উইকিপিডিয়া)।
• এতে একটি গ্লাস ককপিট রয়েছে, যেখানে তিনটি মাল্টি-ফাংশন ডিসপ্লে (MFDs) এবং সম্পূর্ণ HOTAS (হ্যান্ডস-অন থ্রটল-অ্যান্ড-স্টিক) কন্ট্রোল সিস্টেম আছে, যা পাইলটদের জন্য ব্যবহারবান্ধব (উইকিপিডিয়া)।
• এতে ইলেকট্রনিক যুদ্ধের জন্য উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে—রাডার সতর্কীকরণ রিসিভার, সম্ভাব্য হুমকি শনাক্তকরণ ব্যবস্থা এবং আধুনিক ন্যাভিগেশন সিস্টেম (ওয়ার থান্ডার – অফিসিয়াল ফোরাম)।