কপ৩০ সম্মেলনে আবারো আদিবাসীদের বিক্ষোভ

প্রকাশঃ Nov 15, 2025 - 15:13
কপ৩০ সম্মেলনে আবারো আদিবাসীদের বিক্ষোভ

ব্রাজিলে চলমান জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (কপ৩০)-এর প্রবেশপথ শুক্রবার আবারও অবরোধ করেন কয়েক ডজন আদিবাসী বিক্ষোভকারী। আমাজন অঞ্চলে তাদের অধিকার ও জীবনযাত্রার সংগ্রামকে বিশ্বের নজরে আনতেই তারা এই বিক্ষোভ করেন। ব্রাজিলের বেলেম থেকে এএফপি জানায়, শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত করতে উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা এই কর্মসূচির ফলে কপ৩০ সম্মেলনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়। এর আগে মঙ্গলবারও আদিবাসী কর্মীরা জোর করে সম্মেলনস্থলে ঢুকে পড়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। শুক্রবার ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও মাথায় পালকের সাজ পড়ে, কেউ কেউ কোলে শিশু নিয়ে প্রায় ৬০ জন নারী-পুরুষ প্রধান প্রবেশপথে মানব প্রাচীর তৈরি করেন। এই সময়ে হাজারের প্রতিনিধি সম্মেলনস্থলে প্রবেশের অপেক্ষায় ছিলেন।

প্রবেশপথে সশস্ত্র সেনা ও সামরিক পুলিশ মোতায়েন ছিল। তবে জাতিসংঘ অংশগ্রহণকারীদের জানায়, ‘কোনো বিপদ নেই।’ তপ্ত রোদে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভকারীরা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার সঙ্গে সাক্ষাতের দাবি জানান। এসময় কূটনীতিকদের পাশের ফটক দিয়ে ভেতরে নেওয়া হলেও তারা নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকেন। আদিবাসী নেতা আলেসান্দ্রা কোরাপ স্লোগান দেন, ‘লুলা, বেরিয়ে আসো, নিজেকে দেখাও!’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের কথাও শোনা হোক, আমরাও আলোচনায় অংশ নিতে চাই। আমাদের সমস্যার শেষ নেই।’

এরপর, কপ৩০-এর সভাপতি আন্দ্রে কোরিয়া দো লাগো সকালের একটি অনুষ্ঠান বাতিল করে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি এক বিক্ষোভকারীর সঙ্গে হাত মেলান এবং এক পর্যায়ে পালকের পাগড়ি পরা একটি শিশুকে কোলে তুলে নেন। বিক্ষোভকারীর সঙ্গে আলোচনার পর কোরিয়া দো লাগো বলেন, তাদের ‘উদ্বেগ শক্তিশালী এবং খুবই যৌক্তিক’। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে খুব ইতিবাচক ও গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।’ দীর্ঘ আলোচনার পর কোরিয়া দো লাগো বলেন, ‘আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন যে এই সরকার কপ৩০-এ আপনাদের পক্ষে কথা বলবে।’

তিনি আরও বলেন, আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে কোনো ‘হুমকি’ নেই। বিক্ষোভকারীরা মুনদুরুকু সম্প্রদায়ের। তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী ভূমির সীমানা চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে চান। একই সঙ্গে তারা বিরোধিতা করছেন প্রায় ‘১ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ফেরোগ্রাঁও রেল প্রকল্পের, যা পশ্চিম থেকে পূর্বে শস্য পরিবহনের জন্য নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। মুনদুরুকুু সম্প্রদায়ের এক বিক্ষোভকারীর হাতে থাকা ব্যানারে লেখা ছিল, ‘আমাদের ভূখণ্ডের জন্য লড়াই মানে, আমাদের জীবনের জন্য লড়াই।’

এদিকে, লুলাও নিজেকে আদিবাসী অধিকারের একজন মিত্র বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বিভিন্ন উপজাতি গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দিয়েছেন, আমাজন অঞ্চলে বন উজাড় কমিয়েছেন এবং দেশের প্রথম আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একজন অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তিকে প্রধান হিসেবে নিয়োগ করেছেন। কিন্তু অনেক আদিবাসী নেতা মনে করেন, আদিবাসী ভূমির সীমানা নির্ধারণের প্রক্রিয়া খুব ধীর গতিতে চলছে। গত অক্টোবরে আমাজন নদীর মোহনার কাছে তেল অনুসন্ধান শুরু করার বিষয়টিও তাদের ক্ষোভের কারণ। বুধবার খ্যাতনামা আদিবাসী নেতা রাওনি বলেন, তেল প্রকল্প এবং ফেরোগ্রাঁও নিয়ে তিনি লুলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে আমি তাকে কড়া কথা শোনাব।’ প্রায় দুই ঘণ্টা পর বাইরে অপেক্ষমাণ হাজারো প্রতিনিধি প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে সক্ষম হন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আদিবাসী বিক্ষোভকারী ও তাদের সমর্থকরা সম্মেলনস্থলে ঢুকে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে এমন ঘটনা বিরল। অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা এএফপি’র এমন প্রশ্নের জবাবে কোরিয়া দো লাগো বলেন, ‘প্রয়োজন নেই, সত্যি বলতে এটি ছিল একটি ছোট ঘটনা ।’