কাপ্তান বাজারে ইজারাদারের প্রতিনিধিদের রক্তাক্ত হামলা ও চাঁদাবাজি

প্রকাশঃ Dec 13, 2025 - 13:05
কাপ্তান বাজারে ইজারাদারের প্রতিনিধিদের রক্তাক্ত হামলা ও চাঁদাবাজি

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন কাপ্তান বাজারের রাত্রিকালীন পাইকারি পোলট্রি মার্কেটের নবনিযুক্ত ইজারাদার প্রতিষ্ঠান ঢাকা প্যাসিফিক লিমিটেডের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র কর্তৃক ধারাবাহিক হামলা, অস্ত্রের মুখে চাঁদাবাজি, লুটপাট ও প্রাণনাশের হুমকির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেন ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে ওয়ারী থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন, যা মামলা নম্বর–১৪৭২ হিসেবে নথিভুক্ত হয়। এজাহারে দণ্ডবিধির একাধিক গুরুতর ধারায় অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৯ নভেম্বর ২০২৫ থেকে কার্যকর ইজারা কার্যাদেশ পাওয়ার পর ২৩ নভেম্বর রাত আনুমানিক ১১টায় ডিএসসিসির এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বাজারের দায়িত্ব বুঝে নিতে গেলে ইজারাদার পক্ষ দেখতে পায় যে বাজারটি অবৈধভাবে তালাবদ্ধ এবং সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দখলে। এ সময় ৭০–৮০ জন অস্ত্রধারী ব্যক্তি সংঘবদ্ধভাবে বাজারে অবস্থান নিয়ে প্রবেশে বাধা দেয় এবং ইজারাদারদের প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি প্রদান করে। পরদিন ২৪ নভেম্বর রাতেও একই কায়দায় ইজারা আদায় কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত করা হয়।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ৬ ডিসেম্বর রাতে সিটি করপোরেশনের হাজিরা অফিস সংলগ্ন পশ্চিম অংশে ইজারা আদায়কালে এমদাদ হোসেন পাটোয়ারীর নেতৃত্বে ২০–৩০ জন সশস্ত্র ব্যক্তি পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। হামলার সময় কর্মচারী মিজানুর রহমান বিল্লালকে বেধড়ক মারধর করে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। একই ঘটনায় অপর এক কর্মচারীর কাছ থেকে স্বর্ণের চেইন, হাতঘড়ি ও মানিব্যাগ লুট করা হয়।

সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে ১১ ডিসেম্বর ভোর আনুমানিক ৩টার দিকে। এজাহার অনুযায়ী, ইজারা আদায়কালে এক কর্মচারীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রামদা দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়, অন্যদের ওপর লোহার রড, হকিস্টিক ও জিআই পাইপ দিয়ে নৃশংসভাবে হামলা চালানো হয়। এক কর্মচারী মাথা ও ঘাড়ে গুরুতর রামদার কোপে আহত হন এবং অপর একজনের খুব কাছ দিয়ে গুলি ছোড়া হয়, যা প্রাণঘাতী পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় মোট পাঁচজন গুরুতর আহত হন, যাদের মধ্যে দুজন বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। হামলাকারীরা এ সময় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার বেশি ইজারা আদায়ের অর্থ ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়।

এজাহারে আরও বলা হয়, ২৬ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাজারের প্রায় ৩০০টি দোকানের মধ্যে ২০০টির বেশি দোকান অবৈধভাবে দখলে রেখে সন্ত্রাসী চক্রটি ইজারা আদায় কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অভিযুক্তরা প্রতিদিন ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং চাঁদা প্রদান না করলে বাজারে প্রবেশ করলে প্রাণে হত্যা করা হবে—এমন হুমকি দেয় বলে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।

এজাহারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, চাঁদাবাজি বন্ধ এবং কাপ্তান বাজার এলাকায় স্থায়ী পুলিশি নিরাপত্তা জোরদারের আবেদন জানানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এজাহারটি গ্রহণের পর ওয়ারী থানা ইতোমধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে।