কুমিল্লার বাঁশ ও বেতশিল্প টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা

প্রকাশঃ Jul 2, 2025 - 16:02
কুমিল্লার বাঁশ ও  বেতশিল্প টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা

শত শত বছরের ঐতিহ্য বাঁশ ও বেতশিল্প ধরে রেখেছেন জেলার নমশূদ্র পল্লীর কারিগররা। বাঁশ ও বেত দিয়ে তাদের সুনিপুণ হাতে তৈরি নানা ধরনের জিনিসপত্র দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয় । তবে দিন দিন জৌলুস হারাচ্ছে কুমিল্লার নমশূদ্র পল্লির বাঁশ ও বেত শিল্প। 

কুমিল্লার নমশূদ্র পল্লী ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্পের জন্য বিখ্যাত। বংশগত কারণে নমশূদ্ররা এ পেশা ধরে রেখেছেন। আয় রোজগার যেমনই হোক, কাজটা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে চড়া সুদের ঋণ এবং সহজ শর্তে ঋণ না পাওয়ায় সংকটের মুখে পড়েছেন কুটির শিল্পীরা। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা চান নমশূদ্র পল্লীর মানুষ।   

কুমিল্লার গোমতী নদীর পালপাড়া ব্রিজ। এ ব্রিজ থেকে ৫০ গজ পূর্বে গোমতীর বেড়িবাঁধ ঘেঁষা নমশূদ্র পল্লী। কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার আড়াইওরা গ্রামে অবস্থিত এ পল্লীতে পাঁচ শতাধিক পরিবারের বসতি। বংশ পরম্পরায় বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে চলে এখানকার বাসিন্দাদের সংসার। তাদের এসব পণ্য বিক্রি হয় কুমিল্লার দাউদকান্দি, হোমনা, নগরীর চকবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর বাজারে। সরাসরি পল্লীতে এসেও ব্যাপারীরা পণ্য সংগ্রহ করেন।

জানা যায়, এ পল্লীর অন্তত এক হাজার মানুষ সম্পৃক্ত আছেন এ পেশায়। এর মধ্যে ছয় শতাধিক নারী। প্রতিমাসে খাবার খরচ বাদে একজন কুটির শিল্পী যা আয় করেন তা থেকে সন্তানদের লেখাপড়া, ঋণ পরিশোধ ও আনুষঙ্গিক খরচ মেটান। মানভেদে ১২০ থেকে ২৫০ টাকা দরে কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ি অঞ্চল থেকে তল্লা, মুলি ও বাঁশ সংগ্রহ করেন কুটির শিল্পীরা।

সেই বাঁশ প্রথমে পানিতে ভেজান, তার পর শুকান। শুকনো বাঁশ আবার ভেজানোর পর পুনরায় শুকিয়ে শুরু হয় বাঁশের বেতি তোলা। এ বেতি থেকেই কুলা, খাঁচা, ওরা, ঝুঁড়ি ও ডালা তৈরি হয়। মাছ ধরার ফাঁদও তৈরি হয় বর্ষা ঋতুতে। গড়ে ১২০-১৫০ টাকা দামে বিক্রি হয় এসব পণ্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কাঁচামালের দাম ও পরিবহণ খরচ বেড়ে যাওয়ায় এই শিল্পীরা সংকটে আছেন। 

কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দিন দিন বাঁশ আর বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই কারিগররা। বর্তমানে স্বল্প দামে হাতের নাগালে প্লাস্টিক সামগ্রী পাওয়ায় কুটির শিল্পের চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। এছাড়াও দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে এ শিল্পের কাঁচামাল বাঁশ ও বেত। অনেকেই ভালো পুঁজি খাটাতে না পারায় অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। অনেকেই বাধ্য হয়ে চলে যাচ্ছেন বিদেশে।

এ পল্লীর বাসিন্দা নিতাই চন্দ্র দাস বলেন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আর সংসার চালানো যাচ্ছে না। বাঁশ-বেত ও অন্য সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলেও আমাদের তৈরি পণ্যের দাম আগের তুলনায় খুব একটা বাড়েনি। তাই এখন আগের মতো লাভ হয় না। বাধ্য হয়ে এ পেশার পাশাপাশি অন্য কাজ করে সংসার চালাতে হচ্ছে। 

তিনি বলেন, ‘যেখানে দুবেলা ভাত খাওয়ার টাকাই জোগাড় করতে কষ্ট হচ্ছে সেখানে ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ দিব কেমনে? এ কারণে এ পল্লীর অনেক নারী এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও পুরুষ কুটির শিল্পীর সংখ্যা দিন দিন কমছে।’ 

এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি -বেসরকারি ঋণ সহায়তার আবেদন জানান এখানকার বাসিন্দারা। বিভিন্ন এনজিও থেকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া হলেও নিজেদের জমি না থাকায় সরকারি - বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না বলে তারা জানান।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কুমিল্লার উপমহাব্যবস্থাপক মো. মুনতাসীর মামুন বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ পল্লী পরিদর্শন করে এ শিল্পের সাথে জড়িতদের নানা সমস্যার কথা অবগত হয়েছি। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে তাদের নিবন্ধনের মাধ্যমে ঋণ সহায়তা দেবে বিসিক। এছাড়াও তাদের  ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সাথে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।