১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ❑ ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৩রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি ❑ রবিবার

সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে উঠুক

অনলাইন ডেস্ক, অধিকরণ ডট কম

অধিকরণ অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

বিজ্ঞাপন

অনামিকা রায়

দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, পূজাকে কেন্দ্র করে জঙ্গি হামলা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব রটিয়ে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টি করার শঙ্কা রয়েছে। তবে, এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কাজ করছে বলেও জানান তিনি। খুব স্বাভাবিকভাবেই ডিএমপি কমিশনারের এই শঙ্কাকে ঘিরে একধরনের আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিগত কয়েকবছর ধরেই পরিলক্ষিত হচ্ছে দুর্গাপূজা এলেই দেশে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। পূজো শুরুর আগেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুর করে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয়ভীতি ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। পূজোকে কেন্দ্র করে প্রতিমা ভাঙচুর থেকে শুরু করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও আমরা দেখেছি। বিগত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে একদল উগ্র ধর্মান্ধ লোক প্রতিহিংসার বর্শবর্তী হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের আনন্দ আয়োজনে বাধা সৃষ্টি করতে চাইছে। তাই তো পূজো এলেই আনন্দের বদলে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করে মনে। সারাক্ষণই একটা শঙ্কা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মনের মধ্যে ঘুরপাক খায়, এই বুঝি কোনো উগ্র ধর্মান্ধ ব্যক্তির প্রতিহিংসার শিকার হতে হবে।

বিজ্ঞাপন

গত বছর কুমিল্লার একটি মন্দিরে কোরআন শরিফ রাখা নিয়ে সারাদেশে যে ধরনের অস্হিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা সহজে ভুলে যাওয়ার নয়। বিশেষ করে নোয়াখালীতে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছিল যে আতঙ্ক থেকে ভুক্তভুগীরা এখনো বের হতে পারেনি। ওই ঘটনার জেরে ১০টি নিরীহ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছিল তখন। এবছরও ওইরকম কোনো ঘটনা ঘটবে না, এরকম কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং পূজো শুরুর আগেই কয়েকটি স্থানে প্রতিমা ভাঙচুরের যে খবর পাওয়া গেছে তাতে সেই আশঙ্কা তো থেকেই যায়।

প্রশাসন তথা নিরাপত্তাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে এমন সতর্কতা জারি করা হলে সাধারণ নাগরিকদের পক্ষে আতঙ্কিত না হয়ে তো উপায় নেই। আর তা যদি হয় ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য, তাহলে তো কথাই নেই।

দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে করতে এবছর সরকার থেকে নিরাপত্তার নানা শর্ত দেয়া হয়েছে পূজা উদযাপন কমিটিকে। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে – ১. দেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা লাগানোসহ নিরাপত্তার বিভিন্ন শর্ত বাধ্যতামূলক করা। ২. প্রতিটি পূজামণ্ডপের জন্য আয়োজকদের সার্বক্ষণিক স্বেচ্ছাসেবক দল রাখতে হবে এবং তাদের সতর্ক থাকতে হবে যে কোন ধরনের গুজবের ব্যাপারে। ৩. পূজামণ্ডপের স্বেচ্ছাসেবকদের বাধ্যতামূলকভাবে হাতে আর্মব্যান্ড পড়তে হবে। ৪. গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত পূজার আয়োজকদের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি করতে হবে। ৫. আজানের সময় পূজামণ্ডপে বাদ্যযন্ত্রের শব্দ সহনীয় রাখতে হবে।

আর সরকারের পক্ষ থেকেও যে সব ব্যবস্থা নেয়া হবে- ১. প্রতিটি পূজামণ্ডপে ২৪ ঘণ্টায় পালাক্রমে দু’জন করে আনসার মোতায়েন থাকবে। ২. সেজন্য সারাদেশে ৩২ হাজারের বেশি পূজামণ্ডপের জন্য এক লাখ ৯২ হাজার আনসার মোতায়েন করা হচ্ছে। ৩. পুলিশ এবং র্যাব অব্যাহত টহলে থাকবে। ৪. সব পূজামণ্ডপে গোয়েন্দা নজরদারি রাখা হবে এবং মনিটর করা হবে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যম। ৫. পুলিশের সদর দপ্তর এবং জেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে এবং ২৪ ঘণ্টা সেখানে যোগাযোগ করা যাবে। ৬. এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত রাখা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

দূর্গাপূজা উপলক্ষে সরকারের নেয়া পদেক্ষপগুলো অবশ্যই আশাজাগানিয়া। কিন্তু সবচেয়ে লজ্জা এবং সেই সঙ্গে উদ্বেগের বিষয় হলো হাজার বছর ধরে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একে অপরের পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলা আবহমান বাংলার সম্প্রীতির এই দেশে নির্বিঘ্নে উৎসব পালন করতে এখন কয়েক স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হয়। ধর্মীয় লেবাসধারী স্বার্থানেষী একটি মহল প্রতিবছরই ওৎ পেতে থাকে হিন্দু সম্প্রদায়ের এই উৎসব আয়োজনকে ধুলিস্যাৎ করতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে সারাদেশে অস্হিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার পায়তারায় থাকে তারা।

কিছুদিন পরপরই দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবেশী কোন হিন্দু ব্যক্তির নামে ধর্মীয় উস্কানিমূলকমূলক পোস্ট দিয়ে একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও প্রার্থনালয়ে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। এই সবগুলো ঘটনার ক্ষেত্রেই পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে হয় অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নামে সৃষ্ট আইডিটি ভুয়া অথবা আইডিটি হ্যাক করা হয়েছে। অথচ দুঃখজনক যে, প্রতিটি ঘটনায় প্রমাণিত হওয়ার আগেই অভিযুক্ত ব্যক্তির নামে জামিন অযোগ্য আইসিটি আইনে মামলা দেয়া হচ্ছে এবং দিনের পর দিন বিনা অপরাধে ওই ব্যক্তিকে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয় অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণিত না হলেও নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে আটক রাখা হয়েছে। অথচ একটি ঘটনায়ও প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করতে দেখা যায়নি, এমনকি সচরাচর গ্রেপ্তার হতেও দেখা যায় না। প্রকৃত অপরাধীর বিচার নিশ্চিত করতে পারলে এই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি হতো না বলেই সচেতন নাগরিকরা মনে করেন। কেন এমন হয়? এ ধরনের অপরাধগুলোর ক্ষেত্রে আমাদের সরকারগুলো রাজনৈতিক লাভ লোকসানের হিসেব-নিকেশ করে থাকেন বলে অভিযোগ আছে। অথচ একটি আদর্শ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক তো আইনের চোখে সমান। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাষ্ট্র কঠোর না হলে, এসমস্ত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস রোধ করান সম্ভব নয়। সাম্প্রদায়িক মনস্ক মহলটি যখন নিশ্চিত থাকে যে, ধর্মের নামে সন্ত্রাস করলে, এর কোন বিচার হয় না বা রাষ্ট্র কোন ব্যবস্থা নিতে সাহস করবে না, তখনই সাম্প্রদায়িকতা সমাজ ও রাষ্ট্রে আরও শক্তপোক্তভাবে শেকড় গাড়তে সুযোগ পায়, অপরাধীরা ভয় পাওয়ার বদলে উৎসাহ পায়।

এর মধ্যে আমরা দেখেছি, শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে হেনস্তা করা হয়েছিল তার ছাত্রদের দ্বারা। হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে হেনস্থা করল তাঁর ছাত্ররা, স্বপন বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করা হলো তাঁর ছাত্রদের দ্বারা। উৎপল কুমারকে পিটিয়ে মেরে ফেলল তাঁরই এক ছাত্র। এরকম আরও অনেক ঘটনা আছে। উপরোক্ত ঘটনাগুলো লক্ষ্য করলে, এক ভয়ঙ্কর সময় চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কেন-না, আজকের এসব ছাত্র-ছাত্রীরাই এদেশের ভবিষ্যত নাগরিক হিসেবে সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করবে। মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় নেমে আসছে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে। আমরা কি এখনো সতর্ক হবো না?

বিজ্ঞাপন

১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের পরবর্তীকাল থেকেই এদেশে হিন্দু সম্প্রদায় একধরনের চাপের মধ্যে রয়েছে। পাকিস্তান আমলে এই সম্প্রদায়ের লোকেরা ছিল রাষ্ট্রের কাছে সন্দেহভাজন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। রাষ্ট্রীয় নানা চাপ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হয়ে অনেক পরিবারকে ওই সময় দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। ১৯৫০ ও ১৯৬৪ সালে বিভিন্ন উসকানিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করে অগণিত মানুষের প্রাণনাশের মতো লজ্জাকর ও নৃশংস ঘটনা আমরা সকলেই জানি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদেরকে ভারতের দালাল বলে অভিহিত করা হয়েছে। নানা অজুহাতে তাদের বাড়িঘরে হামলা করে জিনিসপত্র লুট করা হয়েছে। অনেক এলাকায় তাদেরকে জোর করে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে, যা এখনো চলমান। অথচ ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র গঠনে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছে তারাও।

মুক্তিযুদ্ধে যে দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি হয়েছিলো, তার মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের মা-বোনেরাও ছিলো, এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে এসে অত্যন্ত বেদনার সাথে দেখতে হচ্ছে এদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন, তাদের হাহাকার আজও থামেনি। অথচ যে চারটি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম তার একটি হলো ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ সমান অধিকারে মাথা উঁচু করে এদেশে বসবাস করবে এমনটাই কথা ছিল। কথা ছিল, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষতার অঙ্গীকার নিয়ে আবির্ভূত এ রাষ্ট্রে সকল ধর্মের মানুষ নির্বিঘ্নে, শান্তিতে, স্বস্তি নিয়ে যার যার ধর্মীয় উৎসব পালন করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, স্বাধীন বাংলাদেশেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে হিন্দুদের এই দুর্ভোগ থামেনি। নানা অজুহাতে তাদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়, আগুন দেয়া হয় তাদের ঘর, দোকান এমনকি তাদের ধর্মীয় উপসানলয়ে। বাংলাদেশে প্রায় স্বাধীনতার পর থেকেই একশ্রেণির উগ্র ধর্মান্ধ ব্যক্তি গুজব রটিয়ে সারাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালিয়ে দেশে এক অস্হিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করে আসছে। এদের সাথে আরেক শ্রেণির পরধনলোভী বেপরোয়া মানুষের দেখা পাওয়া যায়, যাদের মূল লক্ষ্য থাকে প্রতিবেশী হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পদের উপর। যেন যেকোন অজুহাতে একবার প্রতিবেশীকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে পারলেই তার সমস্ত সম্পত্তি হাত করা যাবে। এসব ধর্মান্ধ, পরধনলোভী মানুষরূপি অমানুষের জন্য বারবার অবিচার-অন্যায়ের শিকার হতে হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের।

সকল ধর্মেরই মূল বার্তা শান্তি প্রতিষ্ঠা। কোন প্রকৃত ধর্মপ্রাণ মানুষ তার প্রতিবেশীর প্রতি নির্দয় আচরণ করে শান্তি পেতে পারে না। কিন্তু আমাদের এ অঞ্চলে সেটি প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে।

যুগ যুগ ধরে এদেশে আমরা পরস্পরের সহযোগিতায় ও পারস্পরিক নির্ভরতার মাধ্যমেই বেঁচে থাকি। আমাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনে প্রজন্মের পর প্রজন্ম আমরা একে অপরের উপর নির্ভর করেই জীবন ধারণ করি। দোকানি, যানচালক বা ব্যবহার্য পণ্যের আমদানিকারক ও ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে কত ধর্মের, কত জাতের, কত সংস্কৃতির মানুষের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে, তার হিসেব কে দিবে? না, তার হিসেব আমরা কেউ করতে যাই! ভালোমানের মিষ্টি খেতে হলে তো সেই হিন্দু ময়রার দোকানেই ভিড় করতে হয় আমাদের, আবার বিরিয়ানি খাওয়ার জন্যে মুসলমানের দোকানে পা না দিয়ে উপায় নেই।

আধুনিক চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে মুঠোফোন ও ইন্টারনেট বা কম্পিউটার, একালের এসব আবশ্যিক হয়ে ওঠা প্রয়োজনীয় অধিকাংশ সামগ্রীর আবিষ্কারক বা উৎপাদক কিন্তু মুসলিম নন। এদেশের অনেকেই দেশের তুলনায় ভারতের হিন্দুধর্মাবলম্বী চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিতে ভালোবাসেন। তাছাড়া দেশেও প্রচুর হিন্দু ডাক্তার আপন মেধা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বাস্তবে আমরা এক বিশ্ব সম্প্রদায়ের অংশ, তাকে অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। এর কোনো অংশের ক্ষতিসাধন মানেই নিজেরই অনিষ্ট ডেকে আনা। ক্ষণিকের সামান্য লাভের আশায় দীর্ঘদিনের বহু মানুষের অবদানে তৈরি সম্প্রীতির এই বন্ধন নষ্ট করা মানে নিজেদেরই ধ্বংস ডেকে আনা।

ধর্ম আর রাজনীতি একাকার হয়ে গেলে সমাজে প্রকৃত ধর্ম টিকিয়ে রাখা যায় না। ধর্ম তো শান্তির কথা বলে, নীতি-নৈতিকতার কথা বলে। সেই ধর্মের নামে অরাজকতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আর তৈরি না হোক। প্রতিটি সম্প্রদায় স্বাভাবিক পরিবেশে নিঃশঙ্ক চিত্তে আনন্দের সাথে তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব পালন করুক। ক্ষমতা, সম্পদ আর অর্থের মোহের কাছে ধর্ম খুবই তুচ্ছ হয়ে যায়। একটি গোষ্ঠীর কাছে ধর্ম তখন কেবলই স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে ব্যবহারের উপকরণে পরিণত হয়। রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্তে আসতে হবে, এ অবস্থা থেকে তারা পরিত্রাণ চান কি-না। নাগরিকদের ভাবতে হবে, ঠিক কীধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে তারা বসবাস করতে চান। হিংসা-বিদ্বেষের বিপরীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে উঠুক। মনে রাখতে হবে, “নগরে আগুন লাগলে দেবালয় এড়ায় না”।

লেখক : সংস্কৃতিকর্মী

বিজ্ঞাপন

সংবাদটি শেয়ার করুন

নিউজলেটার সাবসক্রাইব

জনপ্রিয়

আপনার জন্য আরো কিছু সংবাদ
সম্পর্কিত