১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ❑ ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি ❑ শনিবার

নিঃশঙ্ক চিত্তে উদযাপিত হোক এবারের দুর্গাপূজা

অনলাইন ডেস্ক, অধিকরণ ডট কম

অধিকরণ অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

বিজ্ঞাপন

আজ দেবী দুর্গার বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। প্রতিবছরের মতো এবারো বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনায় দুর্গোৎসবের আয়োজন করেছে। এবার সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উদযাপন হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে মন্ডপের সংখ্যা ২৪১টি। এবার সারা দেশে মন্ডপের সংখ্যার হিসাবে গেলবারের চেয়ে বেড়েছে ৫০টি। গত বছর সারা দেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি। রাজধানী ছাড়াও প্রত্যন্ত গ্রামের মণ্ডপগুলোতেও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে।

বাঙালি সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে শারদীয় দুর্গাপূজা সবচেয়ে বড় পূজা উৎসব। এ পূজায় সর্বজনীনতা দেখা যায়। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাত, কুল নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষের অংশগ্রহণে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সবারই যেমন অংশ গ্রহণ তেমনই মিলনও হয় মানুষে মানুষে। তাই দুর্গাপূজা হয়ে ওঠে দুর্গোৎসবে। আর আবাহন হয় অসুরের বিনাশে সুরের জাগ্রত করার আহ্বানে।

বিজ্ঞাপন

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রূপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হলেও বাংলাদেশে দুর্গাপূজা ধর্মীয় গণ্ডি পেরিয়ে বাঙালির আবহমান কালের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বত্তায় পরিগণিত হয়েছে। এ উৎসবের আয়োজন, ব্যপ্তি, আঙ্গিক, পদ্ধতি, উপাচারই এর মূল কারণ। পুরোহিত থেকে শুরু করে কুমার, নট্ট, মালাকার, মালী, ধোপা, নাপিত সকল শ্রেণির মানুষেরই প্রয়োজন এ পূজাতে। তাই দুর্গোৎসব একটি মহামিলনের ক্ষেত্র, বিশ্ব ভাতৃত্বের মিলনভূমি ও প্রেরণার উৎস। তবে সম্প্রীতির বিষয়টি কেবল বিশেষ উপলক্ষ বা পর্বে সীমাবদ্ধ থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। সর্বসময়ে সব ধর্মাবলম্বীর নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্নে ধর্ম পালন যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সদ্ভাব ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীর পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষও সার্বজনীন দুর্গোৎসবের আনন্দ ভাগ করে নেয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।” তাঁর এই উক্তির প্রতিফলন আমরা দেখেছি এবং এবারো দেখব এমনই প্রত্যাশা। এ দেশে শত শত বছর ধরে বিভিন্ন সম্প্রদায় পারস্পরিক সহাবস্থান ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে। এক ধর্মাবলম্বী অন্য সম্প্রদায়ের বিপদে-আপদেও পাশে দাঁড়ায়। এটা বাঙালির চিরন্তন ঐতিহ্য ও সম্প্রীতির পরিচায়ক। মাঝেমধ্যে অশুভ শক্তি এ পরিচয় মুছে ফেলতে তৎপর হলেও সাধারণ মানুষ কখনোই একে প্রশ্রয় দেয়নি। সম্মিলিত প্রতিরোধ ও শুভ শক্তির উত্থানের মধ্য দিয়েই অশুভকে পরাস্ত করতে হবে। সার্বজনীন দুর্গোৎসব সেই শিক্ষাই দেয়।

বিগত বছরের বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার সৃষ্টি করে কিছু ধর্মান্ধ গোষ্ঠী আমাদের এই সম্প্রীতির বন্ধনে ফাটল ধরাতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা তা পারেনি। গত বছরের তুলনায় এবার সারা দেশে আয়োজিত পূজার সংখ্যা তেমনই ইঙ্গিত করে। এ বছর দুর্গোৎসবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের। ইতোমধ্যে, সরকারের পক্ষ থেকে সারা দেশের মণ্ডপগুলোতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আশা করি শান্তিপূর্ণ ও আনন্দমুখর পরিবেশেই এবছর দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে। সর্বত্রই ভীতিমুক্ত পরিবেশে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে এমনটাই কামনা। নিঃশঙ্ক চিত্তে এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় যেন এবারের পূজা উদযাপন করতে পারে সে দিকে খেয়াল রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের।

দুর্গোৎসবের সঙ্গে বাংলার প্রকৃতিরও রয়েছে নিগূঢ় সম্পর্ক। শরতের শুভ্র কাশফুলের মতো মানব হৃদয়েও পুণ্যের শ্বেতশুভ্র পুষ্পরাশি প্রস্ফুটিত হোক। অসুরকে বধ ও অশুভকে বিনাশ করে মানব মনে সঞ্চারিত হোক শুভ চেতনা- এটাই প্রত্যাশা। দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল।

বিজ্ঞাপন

সংবাদটি শেয়ার করুন

নিউজলেটার সাবসক্রাইব

জনপ্রিয়

আপনার জন্য আরো কিছু সংবাদ
সম্পর্কিত