১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ❑ ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি ❑ শনিবার

সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় হোক

অনলাইন ডেস্ক, অধিকরণ ডট কম

অধিকরণ অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

বিজ্ঞাপন

খুবই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হল হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এটি অত্যন্ত আনন্দ ও স্বস্তির বিষয়। নাশকতার আশঙ্কা থাকলেও শেষপর্যন্ত সারাদেশের কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া দূর্গাপূজার অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ দেশের সকল শুভবোধসম্পন্ন শান্তিকামী মানুষ স্বস্তি বোধ করছেন। এরকমটাই তো প্রত্যাশিত। যার যার ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সম্প্রীতির সাথে বসবাস করবে দেশের সকল মানুষ, একটি সভ্য সমাজে সেটিই তো স্বাভাবিক। বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্যও সে কথাই বলে। নানান ধর্ম-বর্ণ ও গোত্রের মানুষেরা পারস্পরিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরস্পরের প্রতি নিবিড় আস্থার অনুভূতি নিয়ে একসাথে বসবাস করবে একে অন্যের স্বজন হয়ে। এটাই বাঙালির সামাজিক চেতনা ও বাস্তবতা।

এদেশের সাধারণ মানুষ মূলত তাদের পূর্বসূরীদের ঐতিহ্য ও কৃষ্টি-কালচার ধারণ করেই বাঁচতে চায়। উৎসব-আনন্দে মাতোয়ারা হতে চায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রতিবেশী একসাথে হয়ে। যেকোনো সামাজিক আয়োজনে বাঙালির এই চিরায়ত ঐতিহ্য ও অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার প্রকাশ দেখা যায়।

বিজ্ঞাপন

অনেক বছর পর এবারই হয়তো প্রথম পুজোর পুরো সময়ে সারাদেশের কোথাও কোনরকম সংঘাত ও নাশকতার ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। পুরো পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গোৎসব কবে এরকম সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কবে সম্পন্ন হয়েছে, তা অনেকেই মনে করতে পারবেন না। কাজেই এটি যে সরকার ও প্রশাসন তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি বড় সফলতা, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। একইসাথে এটিও প্রমাণিত হলো যে, প্রশাসন চাইলে এবং সে অনুযায়ী যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, সংঘাত ও নাশকতা এড়ানো সম্ভব। কেন-না, এদেশের বেশিরভাগ মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনার এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। এদেশের সাধারণ মানুষ প্রতিবেশীর দুঃখে ব্যতীত হয়, প্রতিবেশীর যেকোনো আনন্দ আয়োজনে উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে শরীক হয়। “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” আমাদের সমাজে এটি শুধুই একটি কথার কথা নয়। এটিই বাঙালির চিরায়ত বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য।

এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, প্রশাসনের কঠোরতা ও সদিচ্ছার পাশাপাশি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে কোন সমর্থন না থাকলে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কোন ঘটনার জন্ম দেয়ার সাহস কারো হবে না। বিভিন্ন সময়ে যে অংশটি গুজব ছড়িয়ে ধর্মীয় উস্কানি সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে থাকে, তারা এবার প্রশাসনের কঠোরতা লক্ষ করে মাথা বের করার সাহস করেনি।

যদিও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির চর্চা ও নেতিবাচক রাজনীতির প্রভাব সমাজের একটি অংশকে বিভ্রান্ত করতে সফল হয়েছে, তবুও সে অংশটি নিতান্তই ক্ষুদ্র। শুভবোধ-সম্পন্ন মানুষের ঐক্যবদ্ধ শক্তির কাছে তারা কখনোই মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস করবে না, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। রাষ্ট্রের কঠোরতা ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা এবং শুভবোধের জাগরণ ঘটলে ওইসব নেতিবাচক রাজনীতি ও সম্প্রদায়িক উল্লম্ফন অচিরেই থেমে যাবে, এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়। কেন-না দিনশেষে রাজনীতিকরা সাধারণ মানুষের সমর্থনেরই প্রত্যাশা করে। কাজেই সেই সাধারণ মানুষ যদি সত্যিকার অর্থেই অসাম্প্রদায়িক চেতনার মধ্যে বাঁচতে চায়, তাহলে এদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিরও মৃত্যু ঘটবে।

দেশের সকল প্রান্তে শুধুমাত্র ধর্মীয় আচারের বাইরে অন্যান্য আনন্দ আয়োজনে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষকে উৎসবের আমেজে শরিক হতে দেখা গেছে। ঈদ ও পূজা-পার্বণে আমরা সামগ্রিকভাবে এমন চিত্রই সবসময় প্রত্যক্ষ করি। এই সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধন সবসময় অটুট থাকুক। সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ নিজেদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানগুলি নিস্কন্টকভাবে আয়োজন করতে পারুক। সকল শঙ্কা ও সংশয়কে পেছনে ফেলে নিঃশঙ্ক চিত্তে উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা হোক। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ হয়ে উঠুক সকল ধর্ম-বর্ণের সকল মানুষের সমান অধিকারের শান্তিপূর্ণ এক সমৃদ্ধ জনপদ।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সংবাদটি শেয়ার করুন

নিউজলেটার সাবসক্রাইব

জনপ্রিয়

আপনার জন্য আরো কিছু সংবাদ
সম্পর্কিত