১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ❑ ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১লা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি ❑ শুক্রবার

কালবৈশাখীর ছোবলে প্রাণ গেল ৭ জনের

অনলাইন ডেস্ক, অধিকরণ ডট কম

অধিকরণ অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

বিজ্ঞাপন

কয়েক দিন ধরেই দমবন্ধ গরম ছিল। গতকাল বুধবার কোথাও মধ্যরাত আবার কোথাও ভোরের আলো ফোটার পর শুরু হয় তীব্র কালবৈশাখী। ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে হয় বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি। এতে প্রচণ্ড গরমে ক্লান্ত মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও কালবৈশাখীর ছোবলে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রান গেছে অনেকের বুধবার ভোরে ও বিকালের এই ঝড়ের তাণ্ডবে সারাদেশের মোট ৫ জেলায় ৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া ঘরবাড়ি ও গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক জেলায়।

জানা গেছে, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে শ্বশুর ও পুত্রবধূ, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও ফটিকছড়ি, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর এবং কুমিল্লার মুরাদনগরে একজন করে মারা গেছেন। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরচাপা পড়ে রুস্তম আলী হাওলাদার (৭৫) এবং তার পুত্রবধূ জয়নব বিবি (৩৫) মারা গেছেন। এছাড়া ঝড়ে ১৫-২০টি বসত ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বুধবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে উপজেলার আলিমাবাদ ইউনিয়নের গাগুরিয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহামদু বেপারী জানান, রুস্তম আলী হাওলাদার পরিবার নিয়ে শ্রীপুরের মিয়ারচর এলাকার থাকতেন। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে তিনি পরিবার নিয়ে আলিমাবাদের গাগুরিয়ায় নতুন করে ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন। বুধবার পৌঁনে ৫টার দিকে হঠাৎ করে ঝড় শুরু হলে গাগুরিয়া গ্রামের ১৫ থেকে ২০টি ঘর বিধ্বস্ত হয়। নিজ ঘরেই চাপা পড়েন রুস্তম ও তার পুত্রবধূ জয়নব। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হুমায়ন কবির নামে এক পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। চিকিৎসক পরীক্ষা করে তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া বুধবার সকালে চট্টগ্রামে হঠাৎ বয়ে গেছে কাল বৈশাখী ঝড়। সঙ্গে হয়েছে বৃষ্টিও। ঝড়ে জেলার ফটিকছড়িতে গাছের ডাল ভেঙ্গে রিনা আক্তার (৪০) নামে গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের একটি বাল্কহেড ডুবে গেছে কর্ণফুলীতে। তবে বেশ কয়েকদিনের অসহ্য গরমের পর বৈশাখি ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টিতে কিছুটা স্বস্তিও ছিল নগরবাসীর মধ্যে। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যায়। এরপরই শুরু হয় দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে হিমেল দমকা হাওয়াসহ কালবৈশাখী ঝড়। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে রিনা আকতার (৪০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। সকালে উপজেলার উত্তর কাঞ্চননগর ঝরঝরি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রিনা আকতার ওই এলাকার শাহ আলমের স্ত্রী।

এদিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কালবৈশাখীর কবলে পড়ে একটি স্পিডবোটডুবির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গুপ্তছড়া ঘাটের ইজারাদার মো. আনোয়ার জানান, সীতাকুণ্ড থেকে সন্দ্বীপের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া একটি স্পিডবোট কালবৈশাখীর কবলে পড়ে গুপ্তছড়া ঘাটের কাছাকাছি এসে উল্টে যায়। স্পিডবোটে ২০ জনের মতো যাত্রী ছিল। এখন পর্যন্ত এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কোস্টগার্ডের পূর্ব জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন কাজী শাহ আলম জানান, সন্দ্বীপে গুপ্তছড়া ঘাটের কাছে একটি স্পিডবোট মিসিং আছে শুনে অভিযান চলছে। তবে এ ঘটনায় কতজন নিখোঁজ আছে বা কতজনকে উদ্ধার করা হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি।

কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডবে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়ায় গাছের নিচে চাপা পড়ে রুহুল আমিন (৬২) নামের এক বৃদ্ধের মারা গেছেন। উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়নের মধ্য কেরোয়া গ্রামে বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। তিনি ওই গ্রামের মাঝি বাড়ির মৃত শফি উল্লাহর ছেলে। বৃদ্ধের ছেলে বিল্লাল হোসেন জানান, সকাল আটটার দিকে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে সংলগ্ন দোকানে যান। ঝড়ো হাওয়া শুরু হলে বাড়ির দিকে ফিরতে থাকেন। তাদের বাড়ির পাঞ্জেগানা মসজিদের সামনে পাকা সড়কের কাছে আসলে একটি নারিকেল গাছ পড়লে তিনি তার নিচে চাপা পড়েন। গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। একই ভাবে ঝড়ের তান্ডবে কুমিল্লার মুরাদনগরে কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে গাছের নিচে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা চাপা পড়ে শিশু মিয়া (৬০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুসহ আরও ৫ জন। বুধবার সকালে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন সলফা গ্রামের রামচন্দ্রপুর-শ্রীকাইল সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।ঝড়ের তান্ডবে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় কৃষাণী ফিরোজা বেগম (৫৫) জমিতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে নিহত হয়েছে। বুধবার সকালে খলসী ইউনিয়নের রৌহা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ফিরোজা ওই গ্রামের আবুল হোসেনের স্ত্রী। তিনি ৩ সন্তানের জননী।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ফিরোজা বাড়ি থেকে অর্ধ কিলোমিটার দূরে নিজ জমিতে সকালে ভুট্টা ক্ষেতে কাজ করতে যায়। এ সময় হঠাৎ ঝড়ো বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে তার শরীরের বেশ কিছু অংশ ঝলসে যায়। গুরুত্বর অবস্থায় আশেপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে বাড়ি নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।

বিজ্ঞাপন

সংবাদটি শেয়ার করুন

নিউজলেটার সাবসক্রাইব

জনপ্রিয়

আপনার জন্য আরো কিছু সংবাদ
সম্পর্কিত