১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ❑ ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৫ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি ❑ মঙ্গলবার

সহিংসতার জন্য রাজনীতি নাকি রাজনীতির জন্য সহিংসতা?

অনলাইন ডেস্ক, অধিকরণ ডট কম

অধিকরণ অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

বিজ্ঞাপন

রাজনীতির জন্য সহিংসতা, নাকি সহিংসতা পরাজিত করতে রাজনীতি? এই প্রশ্নের সমাধান করতে পারেনি আমাদের রাজনীতি। স্বাধীনতার ৫১ বছর পার হতে চলল, কিন্তু এখনো একটা ধারণা শক্ত করে রাজনীতির মনোজগতে বসে আছে যে, সরকারক হটাতে হয় রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে এবং সেটাও অত্যন্ত সহিংস উপায়ে।

আবার যে দল ক্ষমতাসীন থাকে তারও প্রচেষ্টা বিরোধীকে শক্তি দিয়েই শায়েস্তা করতে হবে। আমাদের নির্বাচনী প্রথাটাই এমন যে, এখানে যে জিতে সব তার, যে হারে তার কিছু নেই। মানসিকতার বদলই একমাত্র পথ এই দুরবস্থা থেকে মুক্তির। কিন্তু মানসিকতা কীভাবে বদলানো যায়, সেটা বরাবরই এক অজানা পথ।

বিজ্ঞাপন

আমাদের নির্বাচনী প্রথাটাই এমন যে, এখানে যে জিতে সব তার, যে হারে তার কিছু নেই…নিজেদের অবস্থান থেকে রাজপথের বড় বিরোধী দল বিএনপি মনে করছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত আছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস।

লোডশেডিংসহ গ্যাস সংকটে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। ডিজেল ও সারের দাম বাড়ায় কৃষক দিশেহারা। সাধারণ মানুষের এই ক্ষোভ কাজে লাগাতে তারা তৎপর। তাদের এই ভাবনা হয়তো তাদের জায়গা থেকে ঠিকই আছে। কিন্তু তারা কি সত্যি সত্যি জনমত জরিপ করেছে যে, মানুষ কীভাবে প্রতিবাদ জানাতে চায়? সেটা রাজপথের সহিংস আন্দোলন, নাকি অন্য কোনো উপায়?

যে কয়টি ইস্যুর কথা বলা হয়েছে, সেগুলো সবই জনগণের জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট। কিন্তু সেই মানুষকে কি আনা গেল রাজপথে? এই কথা সত্য বিএনপির ইদানীংকার প্রতিটি মিছিলে, সমাবেশে জনসমাগম বাড়ছে এবং এই কারণে দলের নেতৃত্ব কিছুটা হলেও আশান্বিত।

রাজনৈতিক দল হিসেবে ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে আছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। জন্মের পর থেকে এত দীর্ঘদিন কখনো ক্ষমতার বাইরে থাকেনি দলটি। ক্ষমতার ঘরে জন্ম নেওয়া দলের জন্য, বিশেষ করে এর নেতাদের জন্য এটি এক বড় পরীক্ষা। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, মানুষ বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির কাছে কর্মসূচি চায়। বিএনপির সমস্যা হয়েছে এখানেই। এই ১৫ বছরের বেশিরভাগ সময় মানুষের জন্য বিএনপির কোনো কর্মসূচি ছিল না।

বিজ্ঞাপন

বড় সময় গেছে প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত জিয়াউর রহমানের পরিবারের দুই সদস্য—চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আর তার বড় ছেলে তারেক রহমানের ইস্যু নাড়াচাড়ায়। মামলার রায়ে বেগম খালেদা জিয়া জেলখানা থেকে বেরিয়ে এখন গৃহবন্দি আছেন, আর ছেলে লন্ডনে বসে দল চালাচ্ছেন।

সরকারের প্রতি মানুষের হয়তো অনেক ক্ষোভ আছে, সরকারের সমালোচনাও ব্যাপকভাবে হচ্ছে। কিন্তু বিএনপি কি মানুষকে কানেক্ট বা সংযুক্ত করতে পেরেছে? এই প্রশ্নটি যখন উঠল তখন দেখা গেল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার ঘোষণা দিয়েছে তার দীর্ঘ সময়ের সাথী জামায়াতে ইসলামী। ফলে আগের আন্দোলনগুলোয় রাস্তায় পেশি প্রদর্শনের জন্য যে জামায়াতকে কাজে লাগাতে পারত বিএনপি, সেটাও এখন আর সম্ভব হচ্ছে না।

সরকারের প্রতি মানুষের হয়তো অনেক ক্ষোভ আছে, সরকারের সমালোচনাও ব্যাপকভাবে হচ্ছে। কিন্তু বিএনপি কি মানুষকে কানেক্ট বা সংযুক্ত করতে পেরেছে?
মানুষ যখন কোনো দলের কর্মসূচি নিজস্ব বলে মনে করে তখন সেটা তারা গ্রহণ করে, আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। আর তখনই রাজনৈতিক সফলতার প্রশ্ন আসে। বিএনপি সেটা পারছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

তবে, প্রশ্ন উল্টো দিক থেকেও আছে। বিএনপি মাঠে নামছে, মাঠ গরম হচ্ছে বলেই সরকার পক্ষকে অতি প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে, সেটাও মনে হচ্ছে না সুবিবেচনা প্রসূত কোনো কাজ। উত্তেজনা ও অস্থিরতা এবং ভোলা ও নারায়ণগঞ্জে গুলিতে তিনজনের মৃত্যু প্রমাণ করে রাজনৈতিক মিছিল নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কৌশলী থাকছে না।

কোনো অবস্থাতেই অতিমাত্রায় অস্ত্র নির্ভর হওয়া সঠিক নয়। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে একজন ডিবি পুলিশ সদস্যের গুলি করার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং উঠাটাই স্বাভাবিক।

প্রশ্ন উঠবে, ভোলা এবং নারায়ণগঞ্জ—দুই জায়গাতেই কি গুলি করার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল? নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে। পুলিশ রেগুলেশনস, বেঙ্গল কিংবা পুলিশ অ্যাক্ট ১৮৬১, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স এগুলোর কোনোটিতেই ইউনিফর্ম ছাড়া বিক্ষোভ সমাবেশের শৃঙ্খলা রক্ষার সুযোগ আছে বলে জানা নেই। সেটা কেন হলো তাও বোঝা দরকার।

প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করা নাগরিকের স্বীকৃত অধিকার। এই কথা সরকারও স্বীকার করে। সেটা শৃঙ্খলার সাথে হবে সেটাই প্রত্যাশিত। যদি তাই হয়, তাহলে শৃঙ্খলা আনতে অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে তা ভেঙে দিতে হবে সেটা কাম্য নয় এবং মানুষের মৃত্যু হওয়া আরও বেশি দুঃখজনক। পুলিশের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটেছে কি না তা দেখা দরকার।

বাংলাদেশের বাস্তবতায় রাজনীতিতে পথে পথে আন্দোলন থাকবেই। কিন্তু সেটা কীভাবে হবে আর কীভাবে শৃঙ্খলায় থাকবে সেটা বড় ভাবনা। বিবাদের পথ ছেড়ে বড় দলের শান্তির পথ খুঁজতে হবে।

মানুষ চায় শান্তির বাতাবরণে যুক্তির বিরোধিতায়, চিন্তার বিরোধিতায় গণতান্ত্রিক লড়াই। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা সহজেই ভোটকে যুদ্ধ বানিয়েছি, রাজনীতির বিতর্ক থেকে সরে গিয়ে খুনাখুনির পথ বেছে নিয়েছি। ব্যক্তি, দল নির্বিশেষে শুভচিন্তার উন্মেষের মধ্য বন্ধুত্বের, সম্প্রীতির বাতাবরণ হয়তো আমরা আর দেখব না।

বিজ্ঞাপন

সংবাদটি শেয়ার করুন

নিউজলেটার সাবসক্রাইব

জনপ্রিয়

আপনার জন্য আরো কিছু সংবাদ
সম্পর্কিত