অদ্রিতা রহমান অদ্রি
আঠারো সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ সালে দেখা স্বপ্ন আজ স্বার্থক। বিয়াল্লিশ পায়ে মাথা উঁচু করে আজ ঠায় দাঁড়িয়ে বাঙালির গৌরবজ্জ্বল স্পর্ধা ; পদ্মা বহুমুখী সেতু। ৬.১৫ কিলোমিটারের একটি স্থাপনা ঘুঁচিয়ে দিয়েছে নদীপথের শ্রান্তিময় চলাচলের অপার ক্লান্তি, জুড়ে দিয়েছে দুইপাড়ের মানুষের হৃদয়। মাওয়া-জাজিরা পয়েন্ট দিয়ে নির্দিষ্ট পথের মাধ্যমে বাংলাদেশের কেন্দ্রের সাথে দক্ষিণ- পশ্চিম অঞ্চলের সংযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে। এই সেতু বাংলাদেশের আত্মমর্যাদা, সক্ষমতা ও দৃঢ়তার প্রতিক। ‘আমার টাকায় আমার সেতু ‘ স্লোগানে মুখরিত জাতির বহু প্রতিক্ষার সৌকর্যমন্ডিত পদ্মাসেতু আজ স্বগাম্ভির্যে জানান দিচ্ছে বাঙালির সাহসিকতার, বাঙালি চাইলে যে জলেও আগুন জ্বালাতে পারে! তার আজিবন প্রজ্জ্বলিত উদাহরণ হয়ে থাকবে এই অভাবনীয় প্রকল্প। নির্মাণ কাজ শুরুর প্রায় অধযুগ অপেক্ষার পরে ২৫ জুন, ২০২২ মহেন্দ্রক্ষণে বিমান বাহিনীর বর্ণাঢ্য মহড়া ও লাল-সবুজের বর্ণিল আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠে পদ্মা পাড়, উচ্ছ্বাস-উল্লাসে উৎসবে মেতে উঠে গোটা জাতি, উদ্ভোদন হয় পদ্মা বহুমুখী সেতুর। এই উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিতে একসাথে কয়েকধাপ এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ, গোটা বিশ্বের সামনে জানান দিলো নিজেদের সক্ষমতার।
২৬ জুন থেকে জনসাধারণের জন্য সেতু খুলে দেয়া হয়েছে। মাত্র চল্লিশ বছর আগেই, যে খরস্রোতা বিধ্বংসী পদ্মাকে বশে আনা অনেকের কাছে অলিক মনে হতো সেই পদ্মার বুকেই আজ দাড়িয়ে আছে এত বড় স্থাপনা।
পদ্মাসেতু উন্মোচন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ” এটি শুধু ইট-কংক্রিটের কাঠামো নয়, এটি আমাদের সাহস! “
২০১৩ সালে যখন বিশ্ব ব্যাংকের নেতৃত্বে পুরো ডোনার এজেন্সি পিছপা হয়ে গিয়েছিলো তখন প্রকল্পটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলো। এরপরও বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা, করোনা সংক্রমণ, রাশিয়া -ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানান আন্তর্জাতিক ঘটনা ছাপিয়েও ৯ বছরের মাথায় এতোবড় একটি প্রকল্প শেষ করার সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। দৃঢ় নেতৃত্ব ও শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামলানোর যোগ্যতায় প্রকাশ করায় বিশ্বজুড়ে বাহবা কুড়িয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ সরকার তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সাথে পদ্মার মতো প্রমত্তা নদীকে সাঁচে আনায় প্রকৌশলীদেরও গোটা বিশ্ব জানিয়েছে লাল-সালাম।
নান্দনিক ও অপরূপ নির্মাণশৈলীতে অনন্য এই প্রকল্প দূর করবে উভয় পারের মানুষের দুঃখ, দুর্ভোগ, দূর্দশা; চলাচলের সময় দৈর্ঘ্য লাঘব হবে কমপক্ষে ৩-৪ ঘন্টা, দূর হবে ফেরীর জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষার ভোগান্তি। এছাড়াও সেতুর মাধ্যমে শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থাই নয়, বৃদ্ধি পাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং বানিজ্যিক অবকাঠামো যা অপেক্ষাকৃত অনুন্নত অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিল্পবিকাশে অবদান রাখবে।
পদ্মা সেতু উদ্ভোদন এর পরবর্তী সময়ে ১দশমিক ২৩ শতাংশ হারে জিডিপি বৃদ্ধি পাবে এবং দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের জিডিপির হার বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যন্ত, যা বাস্তবায়ন করবে বাঙালির দীর্ঘ ৫০ বছরের স্বপ্ন। দেশি-বিদেশি আলোচনা সমালোচনা, ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে, এই অবিস্মরণীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় আমাদের অবিচল মনোবল ও দূরদর্শী চেতনা সমৃদ্ধ সফল রাষ্ট্র নায়ককে গোটা বাংলাদেশ জানিয়ে চলেছে অফুরন্ত অভিনন্দন।