জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটি ২০২৪ সালের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ

মিয়াদ হোসেন
বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘ কান্ট্রি টিম (UNCT)আজ জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির (জেএসসি) দ্বিবার্ষিক বৈঠকেজাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সহযোগিতা কাঠামোর (ইউএনএসডিসিএফ) (UN Sustainable Development Cooperation Framework)বাস্তবায়ন মূল্যায়ন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের জাতিসংঘকান্ট্রিরেজাল্টরিপোর্ট(2024 UN Country Results Report) প্রকাশ এবং আগামী বছরের জন্য কৌশলগত অগ্রাধিকার অনুমোদনকরেছে।
জেএসসিরাজনৈতিকপটপরিবর্তন, জলবায়ু-কেন্দ্রিক দুর্যোগএবং সংস্কারপ্রক্রিয়াগতিশীলতাবিবেচনায়রেখে অভিযোজনক্ষমতা এবং শাসনব্যাবস্থা সংস্কার, মানবাধিকার ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতেজাতিসংঘের সহায়তার বিষয়গুলো তুলে ধরেছে।
জাতিসংঘ ২০২৪ সালে উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২১৫ মিলিয়নমার্কিন ডলার প্রদান করেছে। উল্লেখযোগ্য কাজগুলোহচ্ছে, বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য মসৃণ উত্তরণ কৌশল তৈরিতেসহায়তা,বেসরকারি খাতের সঙ্গে অংশীদারিত্বে ৪,০০০ এর বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ১১৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টার্নওভার উন্নত করতে সহায়তাপ্রদান এবং ১১,০০০ এর বেশি তরুণ-তরুণীকেডিজিটাল দক্ষতা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।
জাতিসংঘেরসহযোগিতার ফলে ৪ কোটি মানুষ সামাজিক সুরক্ষা সেবায় প্রবেশাধিকারপেয়েছে। এরমধ্যে, ৫৮০,০০০ শিশু সুরক্ষা কর্মসূচি থেকে উপকৃত হয়েছে। সারাবাংলাদেশে, ৫৬ লক্ষ কিশোরীকে জরায়ুমুখের ক্যান্সার থেকে রক্ষা করার জন্য হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়েছে, যেখানেসংশ্লিষ্টবিভাগগুলোর ১০-১৪ বছর বয়সী মেয়েদের ৯৩শতাংশঅন্তর্ভুক্তহয়েছে।
জাতিসংঘ বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ৪৪ মিলিয়নমার্কিন ডলার সহায়তাপ্রদান, এবং১৭. ২ লক্ষ দুর্যোগ-কবলিত মানুষকে মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে। এরপাশাপাশি, ২০ লক্ষ বাংলাদেশীর জন্য জলবায়ু ঝুঁকি বিষয়কসচেতনতাও বৃদ্ধি করেছে। জাতিসংঘ তাদেরশাসন ও জেন্ডার বিষয়ক কাজের মাধ্যমে ৬ কোটি ১০ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছানো ৬৬শতাংশ ইউনিয়নপরিষদকে সেবা প্রদানের জন্য গ্রাম আদালতকেকার্যকরকরা, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা বিলকে সমর্থন করেছে এবং পারিবারিক সহিংসতা আইন সংশোধনেরজন্য সমর্থন জুগিয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব জনাব মোঃ শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিস গোয়েন লুইসের যৌথ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘ সংস্থাগুলোরসিনিয়র প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণকরেন।সরকারিসিদ্ধান্তেরআলোকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এক বছরেরজন্যবর্ধিতকরণ, এবংজাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখার জন্য জেএসসি আনুষ্ঠানিকভাবে ইউএনএসডিসিএফ (২০২২-২০২৬) এক বছরের সম্প্রসারণের অনুমোদন দেয়।
সভায়মিস গোয়েন লুইস বলেন, “বাংলাদেশেরজন্যবিগত বছরটিচ্যালেঞ্জিং ছিল, যদিওএইসময়েবাংলাদেশের মানুষআত্মমর্যাদাবোধ ও দৃঢ়তা প্রদর্শনকরেছে। বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘেরঅংশীদারিত্ব নিয়ে আমি গর্বিত: এটি অভিন্ন মূল্যবোধ ও আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে অটল রয়েছে,”। “বাংলাদেশএকটিস্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এবং আমরা স্থায়ীভাবে সংস্কার, জলবায়ু অভিঘাতসহিষ্ণুতা, অর্থনৈতিক রূপান্তর, জেন্ডার সমতাএবংসমাজের কেউযেন পিছিয়ে না পড়েসেজন্যসহায়তাদিতে প্রস্তুত।
আজকেরআয়োজনেভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিষয়ক ঘোষণাপত্র (Declaration on Future Generations) ও যুব সম্পৃক্ততায় জাতিসংঘের কার্যক্রম নিয়ে একটি বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।এইঅধিবেশনের অংশগ্রহণকারীরা তরুণদেরমতামত জোরদার করাএবং জাতীয় নীতিগত অগ্রাধিকারগুলিতে আন্তঃপ্রজন্মগত সাম্যকে একীভূত করার প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করে, যা ২০২৪ সালের ‘সামিটঅবদাফিউচার’- এরধারাবাহিকতাহিসেবে বিবেচিত হয়।
জনাব সিদ্দিকী জাতিসংঘের অব্যাহত অংশীদারিত্বের জন্য সরকারেরপক্ষথেকে কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, সম্প্রসারিত ইউএনএসডিসিএফ এই পরিবর্তিতপরিস্থিতে সহযোগিতা আরও সুদৃঢ় করতে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিববলেন, “বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপের মতো জলবায়ু অর্থায়ন প্ল্যাটফর্মে অগ্রগতিকে আমরা স্বাগত জানাই, এবং জাতিসংঘ ও উন্নয়ন সহযোগীদেরধারাবাহিক সহায়তা প্রয়োজন,”।জনাবসিদ্দিকীআরওবলেন, “যুব কর্মসংস্থান, সামাজিক উদ্যোগ এবং ইমপ্যাক্ট ফান্ডিং-কে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যেনমাননীয় প্রধান উপদেষ্টার ‘তিন শূন্য’-র ভিশন বাস্তবায়িত হয়। আসন্ন সংস্কার ও নির্বাচন সামনে রেখে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় সরকার এবং জাতিসংঘ সহায়তার ওপরও মনোযোগদেয়া প্রয়োজন,”।
পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোতে একমতহওয়ারমধ্যদিয়েবৈঠকেরসমাপ্তিহয়। যার মধ্যে২০২৫ সালের শেষ দিকে ইউএনএসডিসিএফ-এর চূড়ান্ত বর্ষের মূল্যায়ন শুরু করা এবং বাংলাদেশেরটেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো (এসডিজি) অর্জন ও স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার অঙ্গীকাররয়েছে।
সহযোগিতা কাঠামোটি (Cooperation Framework)বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনেরজাতিসংঘের পাঁচটি কৌশলগত অগ্রাধিকারের নির্ধারণ করে:
- অন্তর্ভূক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন
- সমতার ভিত্তিতে মানব উন্নয়ন ও কল্যাণ
- টেকসই, সহনশীল ও উপযোগী পরিবেশ
- রূপান্তরমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভূক্তিমূলক সুশাসন
- জেন্ডার সমতা ও জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা নির্মূল
জেএসসিপরবর্তী বৈঠক ২০২৫ সালের নভেম্বর/ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে।