জাতিসংঘে ফসিল ফুয়েল বন্ধের প্রস্তাব গৃহীত

প্রকাশঃ Jul 8, 2025 - 18:35
জাতিসংঘে ফসিল ফুয়েল বন্ধের প্রস্তাব গৃহীত

দিলশাত জাহান এলিচ
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত ফসিল ফুয়েল ধাপে ধাপে বন্ধের আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব মোকাবিলায় এটি একটি নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রস্তাবটি পেশ করে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ—একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে অস্তিত্বের সংকটে রয়েছে। প্রস্তাবের পক্ষে ৪০টি দেশ ভোট দেয়, বিপক্ষে যায় মাত্র ৭টি এবং ৩ দেশের প্রতিনিধি অনুপস্থিত ছিল।

মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষদে বলেন,

“আমরা নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে চাই। এই ভোট আমাদের জীবনের জন্য ভোট, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভোট।”

সমর্থনকারী দেশগুলোর মধ্যে ছিল জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চিলি, কোস্টা রিকা ও অস্ট্রেলিয়া, যারা জলবায়ু ন্যায়বিচারের স্বার্থে ফসিল ফুয়েল পরিহারকে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে দেখছে।

তেল ও গ্যাস রপ্তানিকারক রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সৌদি আরব, কুয়েত ও চীন প্রস্তাবটির বিরোধিতা করেছে। তারা সরাসরি ফসিল ফুয়েল পরিহারের বদলে “বিকল্প পথ” অবলম্বনের পক্ষে মত দেয়। তাদের মতে,

“প্রতিটি দেশের নিজস্ব অর্থনৈতিক বাস্তবতা রয়েছে। একক দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।”

বিশ্লেষকদের মতে, এই ভোট শুধু একটি প্রস্তাবের গ্রহণ নয়, বরং বৈশ্বিক জলবায়ু রাজনীতিতে একটি স্পষ্ট বার্তা—পৃথিবী ফসিল ফুয়েল নির্ভরতা থেকে সরে আসতে চাইছে।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষ দূত ডঃ সেলিনা হ্যাং বলেন,

“এই ভোট ছিল একটি নীতিগত সূচক—যেখানে পৃথিবীর দেশগুলো দেখিয়েছে, তারা জলবায়ু ন্যায়ের পক্ষে।”

এই ভোট অনুষ্ঠিত হয় ঠিক এমন সময়ে যখন—

  • ২০২৫ সালের UNFCCC বাজেট ১০% বাড়িয়ে ৮১.৫ মিলিয়ন ইউরো নির্ধারণ করা হয়েছে।
  • ২৩ জুলাই আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ) জলবায়ু পরিবর্তনে রাষ্ট্রগুলোর আইনি দায়বদ্ধতা নিয়ে ঐতিহাসিক রায় দিতে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতের নীতিগত রূপরেখা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এই প্রস্তাব আইনি বাধ্যবাধক নয়, তবে আন্তর্জাতিক মতপ্রকাশে এর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মুখভাগে থাকা রাষ্ট্রগুলোর আওয়াজ এখন বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রভাব ফেলছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যৎ জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে ফসিল ফুয়েল ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চাপ বাড়াবে এবং গ্রিন এনার্জির প্রসারে নতুন গতি আনবে।