বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় ‘সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি

প্রকাশঃ Dec 1, 2025 - 14:51
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় ‘সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি

বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে আরও কার্যকরভাবে এবং পূর্ণরূপে নিশ্চিত করতে ‘সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে অধস্তন আদালতের তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ, ও শৃঙ্খলাবিধানের কাজ সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শাখা থেকে গতকাল অধ্যাদেশটি (অধ্যাদেশ নং ৭২, ২০২৫) প্রকাশ করা হয়।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সংবিধানের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে নির্বাহী বিভাগকে বিচার বিভাগ থেকে পৃথক রাখা রাষ্ট্র পরিচালনার একটি মূলনীতি। এই নীতির আলোকে এবং সংবিধানের ১০৯ ও ১১৬ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হলে অধস্তন আদালতের তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা এবং বিচার বিভাগের সার্বিক কাজ সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রয়োজন।

অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, এই সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ ও চাকরির শর্ত ঠিক করতে আলাদা বিধান করাও প্রয়োজন।এছাড়া আপিল বিভাগের ৭৯/১৯৯৯ নম্বর সিভিল আপিল মামলার রায় বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন সম্পন্ন হওয়া এবং কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হওয়ার পর সরকার সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে অধ্যাদেশের ৭ নম্বর বিধানাবলি গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে কার্যকর করবে।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, অন্য কোনো আইন বা বিধিতে যা-ই থাকুক না কেন, এই অধ্যাদেশের বিধানই প্রাধান্য পাবে। সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় গঠন এবং নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে এ অধ্যাদেশে বলা হয়েছে- (১) সংবিধানের ২২, ১০৯ এবং ১১৬ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণে সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় নামে একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় থাকবে। (২) সচিবালয়ের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রধান বিচারপতির হাতে থাকবে। সচিবালয়ের সচিব হবেন প্রশাসনিক প্রধান। (৩) প্রয়োজন হলে সচিবালয় সরকারী মন্ত্রণালয়ের মতোই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। (৪) সচিবালয়ে একজন সচিবসহ প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হবে। (৫) সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের সচিব সরকারের সিনিয়র সচিব এর সমমর্যাদা ও সুবিধাদি ভোগ করবেন। (৬) সচিবালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী সচিবের সরাসরি তত্ত্বাবধানে কাজ করবেন। (৭) প্রধান বিচারপতি প্রয়োজনে প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করে আদেশ জারি করতে পারবেন।

সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের কার্যাবলি বিষয়ে এ অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, (১) অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেনো, সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের কার্যাবলি হবে-(ক) দেশের বিচার প্রশাসন পরিচালনায় সুপ্রিম কোর্টকে সহায়তা করা এবং অধস্তন আদালত ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের সব প্রশাসনিক ও সাচিবিক দায়িত্ব পালন। (খ) অধস্তন আদালতের প্রতিষ্ঠা বা বিলোপ, সংখ্যা, গঠন ও এখতিয়ার নির্ধারণ। (গ) অধস্তন (নিম্ন) আদালত ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের বিচারক, চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগ এবং তাদের কর্মের শর্ত নির্ধারণ। (ঘ) সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদ সৃজন, বিলোপ, বিন্যাস, নিয়োগ, কর্মের শর্তাবলি নির্ধারণ, পদায়ন, বদলি, শৃঙ্খলা, ছুটি, প্রশাসন ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় নির্ধারণ (ঙ) সুপ্রীম কোর্ট রেজিস্ট্রি, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল ও বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের পদ সৃজন, বিলোপ ও বিন্যাস। (চ) সচিবালয়, রেজিস্ট্রি ও ট্রাইব্যুনালের কাঠামো নির্ধারণ ও হালনাগাদ। (ছ) অধস্তন আদালত, সুপ্রীম কোর্ট রেজিস্ট্রি এবং সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়-সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানসমূহের সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারণ ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে হালনাগাদকরণ। (জ) সংবিধানের ১১৫ অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত কমিটিকে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সহায়তা দেওয়া। (ঝ) বিচারিক কর্মে নিয়োজিত সদস্যদের পদায়ন, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা ও ছুটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

(ঞ) সার্ভিস সদস্যগণের পদায়ন ও বদলি সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন; (ট) অধস্তন আদালত, ট্রাইব্যুনাল এবং সচিবালয় সংক্রান্ত বাজেট তৈরি (ঠ) সুপ্রীম কোর্ট, অধস্তন আদালত, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল এবং সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়-সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়ন বা কারিগরি প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। (ড) প্রধান বিচারপতি, আদালত ও বিচারকদের নিরাপত্তা তত্ত্বাবধান। (ঢ) সার্ভিস সদস্যগণের এবং সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় ও বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের শিক্ষা, বৃত্তি, প্রশিক্ষণ ও এতদসংক্রান্ত অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। (ণ) বিচারিক সেবার মানোন্নয়ন ও বিচার বিভাগের সংস্কারে প্রয়োজনীয় গবেষণা পরিচালনা, প্রকাশনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ। (ত) অন্যান্য দেশের আদালত, বিচার বিভাগ এবং আইনের শাসন ও মানবাধিকার সম্পর্কিত সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা ও চুক্তি সম্পাদন ও বাস্তবায়ন। (থ)প্রাসঙ্গিক আইন ও বিধিমালার অধীনে অর্পিত যে কোনো দায়িত্ব পালন। (দ)অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য প্রধান বিচারপতির আরোপিত দায়িত্ব পালন।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগের কাজ ঠিকভাবে চালাতে আইন ও বিচার বিভাগ সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়কে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দেবে। সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের কার্যপদ্ধতি বিষয়ে বলা হয়েছে- (১) সচিবালয় সরাসরি সরকারের যে কোনো মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। (২) কোনো ব্যক্তি বা সরকারি প্রতিষ্ঠানও সচিবালয়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবে। (৩) প্রধান বিচারপতি চাইলে আদেশের মাধ্যমে সচিবালয়ের কাজের ভাগ-বণ্টন, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা ব্যবস্থা নির্ধারণ করতে পারবেন।

সার্ভিস প্রশাসনের দায়িত্ব পালন বিষয়ে অধ্যাদেশে বলা হয়েছে- (১) সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় সার্ভিস প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হবে। (২) সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সচিবালয় সার্ভিস সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সব প্রশাসনিক দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির পক্ষে পালন করবে। (৩) সার্ভিস সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা সম্পর্কিত কার্যাদির