মিরপুরে ডাকাতি, মাইক্রোবাসের সূত্র ধরে গ্রেফতার ৬

প্রকাশঃ Jun 19, 2025 - 11:56
মিরপুরে ডাকাতি, মাইক্রোবাসের সূত্র ধরে গ্রেফতার ৬

রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে মানি এক্সচেঞ্জের টাকা ডাকাতির ঘটনায় অস্ত্রসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।ডিবি বলছে, পেশাদার চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে টাকা ও স্বর্ণালংকার ডাকাতি করে আসছিলো। চক্রটি দীর্ঘদিন নজরদারির মাধ্যমে মানি এক্সচেঞ্জের মালিকের ওপর নজরদারি করে। এরপর সুযোগ বুঝেই ছিনিয়ে নেওয়া হয় ব্যবসায়ীর ২২ লাখ টাকা। ঘটনার পর ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের সূত্র ধরেই গ্রেফতার করা হয় আসামিদের।বুধবার (১৮ জুন) রাজধানীর মিন্টুরোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ‘মিরপুরে প্রকাশ্যে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর ২২ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় লুণ্ঠিত অর্থ, বিদেশি অস্ত্র ও গাড়িসহ গ্রেফতার’ প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান তিনি।গ্রেফতাররা হলেন- চক্রের মূলহোতা জলিল মোল্লাসহ মোস্তাফিজ (৫০), পলাশ (২৮), দিপু (৫০), সোহাগ (৩৫) ও জাফর (৩৩)।

এ ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস, তিনটি মোটরসাইকেল, পিস্তল, গুলি, জাল টাকা ও লুণ্ঠিত টাকা-বিদেশি মুদ্রাও উদ্ধার করা হয়েছে।মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, গত ২৭ মে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাহমুদ মানি এক্সচেঞ্জের মালিক রাসেল ও তার ভগ্নিপতি জাহিদুল হক চৌধুরী মিরপুর-১১ সি-ব্লকের বাসা থেকে ২১ লাখ টাকা ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা নিয়ে পায়ে হেঁটে মিরপুর-১০ নম্বরের অফিসে যাচ্ছিলেন। শেরেবাংলা স্টেডিয়াম ও ফায়ার সার্ভিসের মাঝামাঝি গলির মুখে পৌঁছালে মোটরসাইকেলযোগে ওৎ পেতে থাকা ৭ থেকে ৮ জন মুখোশধারী ডাকাত তাদের গতিরোধ করে।ডাকাতদের একজন পিস্তল ঠেকিয়ে টাকা ভর্তি ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। বাধা দিলে আরেকজন গুলি ছোড়ে এবং একজন ধারালো চাপাতি দিয়ে জাহিদুলের কোমরে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় জাহিদুল রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। ডাকাতরা চারটি মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।ঘটনার ভিডিও একজন পথচারী মোবাইল ফোনে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে তা দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।এ ঘটনায় আহত জাহিদুল হক চৌধুরী বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন।ঘটনার পরপরই ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে ডিবির একাধিক টিম মাঠে নামে। গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিবি প্রথমে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি হাই-এস মাইক্রোবাস শনাক্ত করে। মাইক্রোবাসের চালক জাফর (৩৩) কে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাফর ডাকাতির ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা স্বীকার করে।পরে তথ্য বিশ্লেষণ করে একযোগে ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ ও যশোরে অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের মূল পরিকল্পনাকারী জলিল মোল্লাসহ চক্রের আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, হত্যা ও অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।গ্রেফতারদের কাছ থেকে ডাকাতির ৫ লাখ ৩ হাজার টাকা, ১০৬টি বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, ২ লাখ ১২ হাজার টাকার জাল নোট, একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি গুলি, একটি চাপাতি এবং তিনটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়।তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এই ডাকাত চক্র এর আগেও ভয়াবহ কয়েকটি ঘটনায় জড়িত ছিল। গত ২৪ জানুয়ারি কামরাঙ্গীরচর এলাকায় গুলি করে ৫০ ভরি স্বর্ণ ছিনতাই এবং ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোডে গুলি চালিয়ে ৫২ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় এই চক্রের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে আসামিরা।ডিবি সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ ডাকাতি চালাতে এই চক্র আধুনিক প্রযুক্তি, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিভিন্ন ছদ্মবেশে কার্যক্রম পরিচালনা করতো।বাকি অপরাধীদের গ্রেফতার ও লুণ্ঠিত সম্পদ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি।