উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের হাতে ‘জুলাই আর্ট ওয়ার্ক’ গ্রাফিতির শুভ উদ্বোধন

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সার্বিক সহযোগিতায় আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার মেট্রোরেল পিলারের অঙ্কিত গ্রাফিতি ‘জুলাই আর্ট ওয়ার্ক’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আজ রাজধানীর আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, ‘এই গ্রাফিতিগুলো আমাদেরকে আওয়ামী স্বৈরশাসনের ভয়াল দিনগুলো এবং জনগণের সাহসী প্রতিরোধের ইতিহাস বারবার স্মরণ করিয়ে দেবে।’ তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এ দেশে যেন আর কোনো স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে লক্ষ্যে এসব গ্রাফিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সভাপতির বক্তব্যে ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, ফ্যাসিবাদ ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার বিষয়টি মাথায় রেখেই এই গ্রাফিতি কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের উত্থান এবং তার পতনের ইতিহাস তুলে ধরাই ছিল এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। গত এক বছরে অনেক রং ফিকে হয়ে গেলেও জুলাইয়ের চেতনা আজও অমলিন।
‘দেয়ালের ভাষা: স্মৃতি, প্রতিরোধ ও জনতার ইতিহাস’-এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অঙ্কিত জুলাই আর্ট ওয়ার্কে ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতিরোধের এক শক্তিশালী চিত্রমালা উপস্থাপন করা হয়েছে। দেয়ালচিত্রগুলোর মাধ্যমে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক দমন-পীড়নের ভয়াবহ অধ্যায় এবং ২০২৪ সালের ৩৬ দিনের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নানা দৃশ্য, মিছিল, সংঘর্ষ, গ্রেপ্তার, আত্মত্যাগ উপস্থাপিত হয়েছে। গুম, হত্যা, ভোট ডাকাতি, শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্বংস ও নাগরিক অধিকারের হরণ- এসব বাস্তবতার প্রতিবিম্ব যেন ফুটে উঠেছে রং ও রেখার প্রতিটি আঁচড়ে। শহিদ আবরার, ফেলানির মুখাবয়ব আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, স্মৃতি কেবল আবেগ নয়- এটি রাজনৈতিক সংগ্রামের অস্ত্র। এই গ্রাফিতি কার্যক্রমকে বিশ্বব্যাপী জনগণের প্রতিরোধশিল্পের ধারাবাহিকতায় একটি আধুনিক সংযোজন হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। দক্ষিণ আমেরিকার স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন, ফিলিস্তিনের দেওয়ালে প্রতিবাদচিত্র, যুক্তরাষ্ট্রে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার কিংবা মায়ানমারে জান্তা-বিরোধী বিক্ষোভের মতো এই দেয়ালচিত্রও হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের জনগণের প্রতিরোধের প্রতীক। ছাত্রজনতা ও নাগরিক সমাজ নিজেদের শিল্পী, লেখক ও ইতিহাস-নির্মাতা হিসেবে প্রকাশ করেছে এই দেয়ালে। এটি কেবল গ্রাফিতির প্রদর্শনী নয়- একটি সামাজিক, রাজনৈতিক এবং নান্দনিক আন্দোলনের প্রামাণ্য দলিল।