টিউলিপ সিদ্দিকের ১৩ বছরের কর নথি জব্দ

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর এবার তার ভাগ্নি ও যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ রিজওয়ান সিদ্দিকের গত ১৩ বছরের আয়কর নথি জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।আদালতের নির্দেশনায় মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে কর অঞ্চল-৬ এর কর অফিসে অভিযান চালিয়ে এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র জব্দ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তদন্ত কর্মকর্তা উপ-সহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। দুদক ও কর অফিস সূত্রে জানা যায়, দুদক টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ২০০৬-২০০৭ করবর্ষ থেকে ২০১৮-২০১৯ করবর্ষ পর্যন্ত টিউলিপের আয়কর নথি জব্দ করে। যেখানে আয়কর রিটার্নসহ সংশ্লিষ্ট মোট ৮৭ পৃষ্ঠার নথি রয়েছে।
আয়কর নথির মধ্যে ২০১৫-২০১৬ করবর্ষে রাজধানীর গুলশান এলাকার একটি ফ্ল্যাট (ফ্ল্যাট নং-B/201, প্লট নং-NE(A)-11B) তার ছোট বোনের নামে হেবা দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর করার নথিও রয়েছে। তবে তিনি ২০১৮-২০১৯ করবর্ষের পর থেকে আর কোনো আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি বলে জানা গেছে।
জব্দ তালিকা সূত্রে আয়কর নথির বিবরণের মোট ৮৭ পৃষ্ঠা তথ্য জানা যায়। যার মধ্যে রয়েছে-
২০০৬-২০০৭ করবর্ষ : পৃষ্ঠা ১-৭, ২০০৭-২০০৮ করবর্ষ : পৃষ্ঠা ৮-১৪, ২০০৮-২০০৯ করবর্ষ : পৃষ্ঠা ১৫-২০, ২০০৯-২০১০ করবর্ষ : পৃষ্ঠা ২১-২৭, ২০১০-২০১১ করবর্ষ : পৃষ্ঠা ২৮-৩৩, ২০১১-২০১২ করবর্ষ : পৃষ্ঠা ৩৪-৪০, ২০১২-২০১৩ করবর্ষ : পৃষ্ঠা ৪১-৪৬, ২০১৩-২০১৪ করবর্ষ : পৃষ্ঠা ৪৭-৫২,২০১৪-২০১৫ করবর্ষ : পৃষ্ঠা ৫৩-৬০, ২০১৫-২০১৬ করবর্ষ : পৃষ্ঠা ৬১-৭১, ২০১৬-২০১৭ করবর্ষ : পৃষ্ঠা ৭২-৭৮, ২০১৭-২০১৮ করবর্ষ : পৃষ্ঠা ৭৯-৮২ ও ২০১৮-২০১৯ করবর্ষ : পৃষ্ঠা ৮৩-৮৭।
ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ হিসেবে ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগের মামলার তদন্তে আসামি হিসাবে বক্তব্য দেওয়ার জন্য গত ১৪ মে টিউলিপ সিদ্দিককে তলব করেছিল তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
গুলশানের একটি প্লট ‘অবৈধভাবে হস্তান্তরের ব্যবস্থা’ করিয়ে দিয়ে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ হিসেবে একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে এরইমধ্যে টিউলিপের বিরুদ্ধে গত ১৫ এপ্রিল মামলা করে সংস্থাটি। দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে টিউলিপ সিদ্দিকসহ রাজউকের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন সংস্থার সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- রাজউকের সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা শাহ মো. খসরুজ্জামান ও সর্দার মোশারফ হোসেন।
ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯৬৩ সালে তৎকালীন বিচারপতি ইমাম হোসেন চৌধুরী গুলশানে ১ বিঘা ১৯ কাঠা ১৩ ছটাক আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ পান। সরকারি ইজারা চুক্তি অনুযায়ী, ৯৯ বছরের মধ্যে ওই প্লট হস্তান্তর বা ভাগ করে বিক্রি নিষিদ্ধ ছিল। তবে ১৯৭৩ সালে তিনি মো. মজিবুর রহমান ভূঁইয়া নামে এক জনের কাছে আমমোক্তার মাধ্যমে প্লটটি হস্তান্তর করেন। এরপর প্লটটি ভাগ হয়ে বিক্রি হয় এবং ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলামের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ শুরু হয়। জহুরুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার সন্তানদের মধ্যে বিরোধ শুরু হলে মামলা হয়। মামলার চলমান অবস্থায় এবং হস্তান্তর নিষিদ্ধ থাকা অবস্থায় রাজউকের সংশ্লিষ্ট আইন উপদেষ্টারা ইস্টার্ন হাউজিংকে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের অনুমোদন দেন, যা অবৈধ ছিল। কারণ কোম্পানিটি লিজ হোল্ডার বা বৈধ প্রতিনিধি ছিল না।
রাজউকের রেকর্ড অনুযায়ী, ৯৯ বছরের ইজারার শর্তে নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে প্লট হস্তান্তর করার সুযোগ নেই। তবুও ইস্টার্ন হাউজিংকে আমমোক্তার করে ওই প্লট ভাগ করে ৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণ ও হস্তান্তরের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়, ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে ‘অবৈধভাবে’ হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা হয় এবং এর বিনিময়ে টিউলিপ সিদ্দিকী অবৈধ পারিতোষিক হিসেবে ইস্টার্ন হাউজিং থেকে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট গ্রহণ করেন। এজাহারে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে ইস্টার্ন হাউজিংকে আমমোক্তার অনুমোদনপূর্বক ও ফ্ল্যাট বিক্রয়ের অনুমোদন করিয়ে অবৈধ সুবিধা দিয়ে ও নিজে অবৈধ সুবিধা নিয়ে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট গ্রহণ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে দাবি করা হয়।
এদিকে দুদকের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্ব ৭ সদস্যদের টিম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা পরিবারের বিভিন্ন অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগে পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতির এক মামলায় টিউলিপকে আসামি করেছে দুদক। ওই মামলায় সহযোগী আসামি হিসেবে গত ১৪ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেন আদালত।
গত ১০ মার্চ পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার পরিবারে সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক ৬টি অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দিয়েছে সংস্থাটি। যা আমলে নিয়েই মূলত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।