থাইল্যান্ডে আবারও ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী বদল : নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিতে প্রস্তুত

থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বৃহস্পতিবার নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিতে চলেছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশটি তৃতীয়বারের মতো একজন নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর মুখ দেখছে।
ব্যাংকক থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, সাম্প্রতিক এই অস্থিরতার সূচনা হয় মঙ্গলবার, যখন দেশটির সাংবিধানিক আদালত প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে একটি নৈতিকতা তদন্তের জন্য বরখাস্ত করে। ধারণা করা হচ্ছে, এই তদন্ত শেষ হতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
তার অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পান পরিবহন মন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুংরুংগ্রেয়াংকিত, যিনি মাত্র একদিন দায়িত্বে ছিলেন। ওইদিনই একটি বোমা হামলা ঘটে যা সরকার পরিবর্তনের এই সংবেদনশীল সময়কে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।
এবার ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই, যিনি নতুন মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে শপথ নেবেন। তিনি একইসঙ্গে উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদও গ্রহণ করবেন এবং সুরিয়ার চেয়ে উচ্চপদস্থ হওয়ায় তিনিই হবেন নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী।
পেতংতার্ন বরখাস্ত হওয়ার আগে নতুন মন্ত্রিসভায় নিজেকে সংস্কৃতি মন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছিলেন, যার ফলে তিনি ক্ষমতার উচ্চ স্তরে থেকে যাচ্ছেন।
এই নেতৃত্ব পরিবর্তনের ঘূর্ণিপাকে পড়ে থাকা অবস্থায় থাইল্যান্ড হিমশিম খাচ্ছে টালমাটাল অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি সুরক্ষিত করতে, যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছেন।
ফুমথামকে বরখাস্ত হওয়া প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন ও তার প্রভাবশালী পিতা থাকসিন শিনাওয়াত্রার ঘনিষ্ঠ অনুগামী হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যিনি ২১ শতকের থাই রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারকারী এক রাজনৈতিক বংশের কর্ণধার।
থাকসিন-ঘনিষ্ঠ দলগুলো ২০০০ সালের গোড়ার দিক থেকে সেনাবাহিনীঘেঁষা রক্ষণশীল শক্তির সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আসছে, যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন এই পরিবারের রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা এখন হ্রাস পাচ্ছে।
৭১ বছর বয়সী ফুমথাম ১৯৭০-এর দশকের বামপন্থি ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে "বিগ কমরেড" উপাধি পেয়েছিলেন। পরে থাকসিনের টেলিকম সাম্রাজ্যের মাধ্যমে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
পূর্ববর্তী মন্ত্রিসভাগুলোতে তিনি প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং গত বছর যখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংকট দেখা দেয়, তখন কিছুদিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
পেতংতার্ন এক দীর্ঘস্থায়ী সীমান্ত বিরোধ নিয়ে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে উত্তেজনার শিকার হন, যা মে মাসে সীমানা সংঘর্ষে রূপ নেয় এবং এতে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হয়।
তিনি যখন কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনকে কূটনৈতিক ফোনকল করেন, তখন তাকে ‘চাচা’ বলে সম্বোধন করেন এবং এক থাই সেনা কর্মকর্তাকে প্রতিপক্ষ বলেন। এই ফোন কলের ফাঁস হওয়া রেকর্ডিং ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করে।
এর ফলে, একটি রক্ষণশীল দল তার জোট ত্যাগ করে এবং মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের দাবিতে জানায়, পেতংতার্ন কম্বোডিয়ার প্রতি নতি স্বীকার করেছেন এবং সেনাবাহিনীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন।
সাংবিধানিক আদালত জানায়, কূটনৈতিক ঘটনাটিতে পেতংতার্ন মন্ত্রীসভার নৈতিকতা লঙ্ঘন করেছেন বলে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ’ রয়েছে।