পিরোজপুরে ৭টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

পিরোজপুর জেলার অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা নেছারাবাদের স্বরূপকাঠি। এ উপজেলায় গড়ে উঠেছে কয়েক হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বিসিক শিল্প নগরী। নদীবেষ্টিত এই উপজেলার সড়কপথে প্রধান যাতায়াতের মাধ্যম পিরোজপুর-কাউখালী-নেছারাবাদ সড়ক। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে থাকা প্রায় সব সেতুই এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ শত শত যানবাহনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সেতুগুলো পার হচ্ছেন।
বিশেষ করে গরিয়ারপাড় বানারিপাড়া ছারছিনা স্বরূপকাঠি ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের ওপর থাকা নাপিতখালি, গণমান, মোল্লাবাড়ি, কামারকাঠি, মাগুরা, কুনিয়ারি এবং নেছারাবাদ বন্দর এই সাতটি সেতু দীর্ঘদিন ধরেই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পিরোজপুর-কাউখালী-নেছারাবাদ সড়কের গরিয়ারপাড়-বানারিপাড়া- ছারছিনা-স্বরূপকাঠির ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকার বিভিন্ন অংশে অবস্থিত সাতটি সেতু দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এই সড়কের নাপিতখালি, গণমান, মোল্লাবাড়ি, কামারকাঠি, মাগুরা, কুনিয়ারি ও নেছারাবাদ বন্দর সেতুর কাঠামোতে দেখা গেছে ফাটল, মরিচা পড়া লোহার কাঠামো এবং ক্ষয়ে যাওয়া কংক্রিট। কোথাও কোথাও সেতুর প্লেট ঢিলে হয়ে চলাচলের সময় বিকট শব্দ করছে। যানবাহন চলাচলের সময় স্পষ্টভাবে অনুভূত হয় কাঁপুনি, যা যাত্রীদের আতঙ্কিত করে তোলে। বিশেষ করে নাপিতখালি সেতুটি বাম দিকে কাত হয়ে গেছে। প্রতিটি সেতুতেই ওঠার পূর্বে সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে ৫ টনের অধিক ভাড়ি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড।
আশপাশে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বহু বছর ধরে সেতুগুলোর কোনোরূপ সংস্কার হয়নি। অথচ প্রতিদিন শত শত মানুষ ও যানবাহন এবং পণ্যবাহী ট্রাক এই সড়ক দিয়ে চলাচল করছে, যা যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করছে।
এই সড়কের বাসচালক মজিবর খান বলেন, ব্রিজে ওঠার পর বাসের গায়ে কাঁপুনি ধরে যায়। এত পুরনো ও দুর্বল অবস্থা, মনে হয় ভেঙে পড়বে যেকোনো সময়। আমরা খুব ভয়ে ব্রিজগুলো পার হই।
নেছারাবাদ এলাকার ব্যবসায়ী মো. সোহেল বলেন, আমাদের পণ্য পরিবহন করতে হয় এই সড়ক দিয়ে। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর কারণে অনেক সময় ট্রাক চালকরাও আসতে চান না। ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়ছে। খুব দ্রুতই সেতুগুলো ঠিক করা দরকার।
মোটরসাইকেলচালক হানিফ শেখ বলেন, মোটরসাইকেল নিয়ে ব্রিজে উঠলেই ব্রিজ দুলতে শুরু করে। তাহলে বাস ট্রাক উঠলে কি অবস্থা হয়। যেকোনো সময় ব্রিজ ভেঙে পড়তে পারে।
এই সড়ক দিয়ে শুধু সাধারণ যাত্রী বা পণ্যবাহী ট্রাক নয়, প্রতিদিন চলছে অ্যাম্বুলেন্স, সরকারি-বেসরকারি যানবাহন। যেকোনো মুহূর্তে কোনো সেতু ভেঙে পড়লে বড় ধরনের প্রাণহানি ও যান চলাচলে স্থবিরতা দেখা দিতে পারে। এতে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসহ সামগ্রিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এলাকাবাসীর দাবি, যত দ্রুত সম্ভব ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলো সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। না হলে যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, যা শুধু জানমালের ক্ষতি নয় পুরো উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল করে দিতে পারে।
এ বিষয়ে পিরোজপুর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ বলেন, গরিয়ারপাড়-বানারিপাড়া-ছারছিনা- স্বরূপকাঠি সড়কের ২৭ কিলোমিটার অংশের সেতুগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রিয়ডিক মেইনটেনেন্স প্রোগ্রামের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ যে ব্রিজ বা কালভার্ট রয়েছে সেগুলোকে পর্যায়ক্রমে পুননির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে নাপিতখালি ব্রিজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। পাশাপাশি বাকি ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলো প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।