পেশাদারিত্ব ও সততায় বদলে গেছে বিমানবন্দর থানা এলাকার চিত্র
বিমানবন্দর থানা এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই একটি চ্যালেঞ্জপূর্ণ ক্রাইম জোন হিসেবে পরিচিত। দেশের প্রধান কেপিআই এলাকা হওয়ায় এখানে অপরাধ দমন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবসময়ই একটি কঠিন দায়িত্ব। তবে দক্ষ নেতৃত্ব, পেশাদারিত্ব ও সাহসী উদ্যোগের মাধ্যমে বিমানবন্দর থানায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
এই সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন বিমানবন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ তাসলিমা আক্তার। তাঁর সততা, নিষ্ঠা ও কর্মদক্ষতায় বিমানবন্দর থানা এলাকা মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখা হয়েছে। অপরাধ দমন, ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটন, উদ্ধার অভিযান পরিচালনা এবং কেপিআই এলাকার নিরাপত্তা জোরদারে তিনি প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
নিয়মিত অভিযান, গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে এলাকায় অপরাধীদের দৌরাত্ম্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীদের মতে, আগে যেখানে চুরি, ছিনতাই ও মাদকের উৎপাত ছিল, সেখানে এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্পষ্ট উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাসলিমা আক্তারের নেতৃত্বে বিমানবন্দর থানা পুলিশের এই কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিরাপত্তাবোধ জোরদার করেছে এবং একটি নিরাপদ কেপিআই এলাকা হিসেবে বিমানবন্দরের ভাবমূর্তি আরও সুদৃঢ় হয়েছে।
বিমানবন্দর থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ দমনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে থানা পুলিশ। ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ০৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে অফিসার ইনচার্জ তাসলিমার নেতৃত্বে পরিচালিত বিভিন্ন অভিযানে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এসেছে দৃশ্যমান পরিবর্তন। বিমানবন্দর থানা এলাকায় ছিনতাই ও অপরাধ প্রবণতা রোধে নেওয়া হয়েছে একাধিক কার্যকর উদ্যোগ। ছিনতাইপ্রবণ কাউলা এলাকায় সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাউলা কবরস্থান সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়াও FDEE এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যা এলাকাটির নিরাপত্তা বহুগুণ বাড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও জোরদার করতে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের অনুমোদনে থানার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হচ্ছে প্রায় ৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা, যার কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। কাউলা বনরূপা এলাকায় স্থানীয় জনগণের সহায়তা ও সিভিল এভিয়েশনের অনুমতি নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি গার্ড রুম, যা ডিউটি ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
এই সময়ে বিমানবন্দর থানা এলাকা থেকে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত মোট ১ হাজার ৭০৪ জন আসামিকে গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ১ নম্বর সেক্টর এলাকা থেকে হকার উচ্ছেদ, ইজি বাইকের উৎপাত বন্ধসহ জনসাধারণের চলাচল নির্বিঘ্ন করা হয়েছে। থানা এলাকায় পরিচালিত নিয়মিত অভিযানে হোটেলগুলোতে অসামাজিক কার্যকলাপ রোধ করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের মাধ্যমে কেপিআই এলাকায় হিজড়া উৎপাত ও ভিক্ষাবৃত্তি সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
নিষিদ্ধ সংগঠনের মিছিল ও সমাবেশ ঠেকাতে সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে বিদেশগামী যাত্রীদের প্রতারণাকারীদের ধরেও নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। পাশাপাশি থানা এলাকায় নিয়মিত বিট ক্রাইম মিটিং ও সমন্বয় সভার মাধ্যমে জনগণকে মাদক, ইভটিজিং, নারী নির্যাতন, মানবপাচার ও যৌতুক বিরোধী সচেতনতা প্রদান করা হয়েছে।
২০২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দ্রুত পুলিশ মোতায়েন করে কেপিআই এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। অপরাধ দমনে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে— ক্লুলেস অপহরণ মামলার ভিকটিম উদ্ধার, ডাকাতির ঘটনায় ৮ জন পেশাদার ডাকাত গ্রেফতার এবং তাদের ব্যবহৃত একাধিক গাড়ি উদ্ধার। এছাড়াও উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ৬ কোটি ৩২ লাখ টাকার জাল নোট, ২ কেজি ৫০০ গ্রাম স্বর্ণ, ১৪ কেজি ১৫০ গ্রাম গাঁজা, ইয়াবা ও হেরোইন। বিমানবন্দর থানা পুলিশের এই ধারাবাহিক কার্যক্রম এলাকাবাসীর মধ্যে নিরাপত্তাবোধ জোরদার করেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।