মালয়েশিয়ায় লা লিগা ইয়ুথ টুর্নামেন্টে খেলবে অনন্ত দাস

প্রকাশঃ Jul 10, 2025 - 14:13
মালয়েশিয়ায় লা লিগা ইয়ুথ টুর্নামেন্টে খেলবে অনন্ত দাস

 আন্তর্জাতিক কিশোর ফুটবল আসর ‘লা লিগা ইয়ুথ টুর্নামেন্ট ২০২৫’-এ অংশ নিতে যাচ্ছেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ী কলেজপাড়া ফুটবল একাডেমির তরুণ ফুটবলার অনন্ত দাস (১৬)। মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এই টুর্নামেন্টে তিনি বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে জাফরানী স্পোর্টিং ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করবেন।‘হ্যালো সুপারস্টারস’-এর তত্ত্বাবধানে অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যায়ের প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের মধ্য থেকে বাছাই করে গঠন করা হয়েছে জাতীয় এই দল। অনন্ত দাস কুড়িগ্রামের রাজাহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের আচার্য গ্রামের ছেলে। পিতা সন্তোষ দাস একজন মাছ ব্যবসায়ী। এক ভাই এক বোনের মধ্যে অনন্ত ছোট। তিনি পাঙ্গা রানী লক্ষী প্রিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।বাসস-এর সঙ্গে একান্ত আলাপে অনন্ত দাস বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি গভীর টান ছিল। আজ লা লিগা ইয়ুথ টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এটা আমার স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ।’এই সাফল্যের পেছনে বড় অবদান রেখেছে বড়বাড়ী কলেজপাড়া ফুটবল একাডেমি। অনন্ত বলেন, ‘এই একাডেমির অনুপ্রেরণাতেই আমি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার সুযোগ পেয়েছি। বিশেষ করে একাডেমির পরিচালক ও হেড কোচ এবিএম ফিরোজ সিদ্দিকী আপেল স্যারের অবদান কখনও ভুলব না।জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন পোষণ করা এই কিশোর বলেন, “আমি জাতীয় দলের হয়ে খেলতে চাই, চাই আমার মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে।”পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে শুরুতে খুব একটা উৎসাহ না পেলেও মায়ের অবিচল সাহসই তাঁকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। অনন্ত বলেন, “আমার মা আমার প্রেরণা। তিনি সবসময় আমার পাশে থেকেছেন।”অনন্তের বাবা সন্তোষ দাস বলেন, “ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলায় আগ্রহ ছিল অনন্তের। তার এই অর্জনে আমরা গর্বিত। এলাকাবাসী তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে, মিষ্টিমুখ করাচ্ছে। ছেলের জন্য দোয়া চাই যেন সে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে।”

মা অর্চনা দাস বলেন, “ভগবানের ইচ্ছায় আমার ছেলে তার লক্ষ্যে পৌঁছাক, এটাই আমার প্রার্থনা। অনেক কষ্ট ও পরিশ্রম করে সে আজ এ জায়গায় এসেছে। আমি চাই সে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করুক।”বড়বাড়ী কলেজপাড়া ফুটবল একাডেমির পরিচালক ও হেড কোচ এবিএম ফিরোজ সিদ্দিকী আপেল বলেন, ‘অনন্ত খুবই প্রতিভাবান খেলোয়াড়। তার নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও স্বপ্ন দেখে আমরা গর্বিত। আমি বিশ্বাস করি, সে একদিন জাতীয় দলের হয়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে।’তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের একাডেমির খেলোয়াড়রা শহীদ আবুল কাশেম মহাবিদ্যালয় মাঠে কঠোর পরিশ্রম করে। সেই ঘামে জড়িয়ে থাকে তাদের স্বপ্ন আর সম্ভাবনার গল্প।’গত ১৬ জুন বিকেএসপির এ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে আয়োজিত মাঠ পর্যায়ের বাছাইয়ে অংশ নেন অনন্ত। অনলাইন বাছাইয়ের পর আয়োজিত এই ক্যাম্পে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিকেএসপির সাবেক মহাপরিচালক লে. কর্নেল (অব.) এমএ লতিফ খান এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক কায়সার হামিদ, মামুনুল ইসলাম ও জাহিদ হাসান এমিলি। এই বাছাইপর্ব থেকেই চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয় ১৬ সদস্যের দল।আগামী ১১ থেকে ১৩ জুলাই মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এই টুর্নামেন্টের আয়োজক লা লিগার অফিসিয়াল পার্টনার শ্যামবিল পার্ক। গত বছর টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইন্দোনেশিয়ায়। এ বছর মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডে তিনটি পর্বে অনুষ্ঠিত হবে এই প্রতিযোগিতা।অনন্তের সঙ্গে একাডেমির আরও তিনজন খেলোয়াড় এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। অনন্তের বিশ্বাস, এই যাত্রা তার স্বপ্নের পথকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। একদিন হয়তো সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ ফুটবল দলে অনন্ত দাসের নাম গর্বের সাথে উচ্চারিত হবে।