গাঁজা বিক্রিতে কঠোর বিধিনিষেধে উদ্বেগ থাই দোকান মালিকদের

থাইল্যান্ডে গাঁজা বৈধ হওয়ার তিন বছর পর, নতুন করে বিক্রির নিয়ম কঠোর করার সরকারি পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেছেন গাঁজা ব্যবসায়ী ও অধিকারকর্মীরা। বৃহস্পতিবার তারা বলেন, এখন থেকে গাঁজা বিক্রির জন্য চিকিৎসকের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা অযৌক্তিক এবং তা পুরো খাতের ওপর আঘাত হানবে।
ব্যাংকক থেকে এএফপি জানায়, ২০২২ সালের জুনে গাঁজাকে নিষিদ্ধ মাদকের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে থাইল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে গাঁজা বৈধ করে। উদ্দেশ্য ছিল চিকিৎসা ক্ষেত্রে গাঁজার ব্যবহার অনুমোদন করা, তবে বাস্তবে দেশজুড়ে, বিশেষ করে ব্যাংককে শত শত গাঁজার দোকান গড়ে ওঠে।
যদিও এই শিথিলতার কারণে কিছু পর্যটকের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায় তবুও বাণিজ্যটি যথাযথ নিয়ন্ত্রিত না হওয়ায় যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সোমসাক থেপসুতিন মঙ্গলবার রাতে এক আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যাতে চিকিৎসার উদ্দেশ্য ছাড়া গাঁজা বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলা হয়েছে। তবে এই আদেশ তখনই কার্যকর হবে, যখন তা সরকারি রাজকীয় গেজেটে প্রকাশিত হবে। কবে এটি প্রকাশিত হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
গাঁজা ব্যবসায়ী ও অধিকারকর্মী থানাতাত চোতিওং বলেন, এটা কোনোভাবেই ন্যায্য নয়। একটি পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত খাতের উপর হঠাৎ করে এমন নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া অযৌক্তিক।
তিনি আরও বলেন, এটা শুধু গাঁজা বিক্রির বিষয় নয়। এখানে আলো সরবরাহকারী, নির্মাণ শ্রািমক, কৃষক, মাটি ও সার প্রস্তুতকারী, গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মী—সবাই জড়িত। আমরা অনেকেই গ্রীনহাউস ও অবকাঠামোতে কোটি কোটি বাত বিনিয়োগ করেছি। আর এখন সরকার হঠাৎ এসে সব বন্ধ করে দিতে চায়।
তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, যেন যথাযথ কর এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করে, যাতে রাজস্ব সমাজে অর্থবহভাবে ফিরে আসে।
গাঁজার বিক্রিতে নিয়ন্ত্রণ আনতে থাই সরকার এর আগেও একাধিকবার ঘোষণা দিলেও ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি প্রস্তাব সংসদে পেশ করা ছাড়া তেমন কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, গাঁজা এখন শুধু চিকিৎসক, থাই ঐতিহ্যবাহী ওষুধ চিকিৎসক, লোকজ চিকিৎসক কিংবা দন্তচিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা প্রয়োজনে বিক্রি করা যাবে ।
ব্যাংককের ‘দ্য ডিসপেনসারি’ নামক গাঁজা দোকানের মালিক কাজকানিত সক্দিসুবা বলেন, এখন থেকে বিষয়টা এমন হবে—ক্রেতা এসে বলবে তার কী উপসর্গ এবং চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন কত গ্রাম গাঁজা দরকার এবং কোন জাতটি প্রযোজ্য। এটা আর রেস্টুরেন্টে গিয়ে পছন্দের খাবার বেছে নেওয়ার মতো সহজ হবে না।
তিনি সতর্ক করে বলেন, বহু দোকান এই নতুন নিয়মে মানিয়ে নিতে পারবে না।
তিনি বলেন, বাস্তবতা হলো পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক নেই। আমি মনে করি, উদ্যোক্তারা জানতেন কিছু নিয়ন্ত্রণ আসবে, কিন্তু কেউ জানত না কবে আসবে।
নিয়ম কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায়, ‘দ্য ডিসপেনসারি’ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে গাঁজা বিক্রি বন্ধ রেখেছে বলে জানান ম্যানেজার বুকুরি মাকে।
দোকানের প্রধান বিক্রয়কর্মী বা ‘বাডটেন্ডার’ পরামাত জাইক্লা বলেন, আমি প্রচুর ফোন পাচ্ছি, ক্রেতারাও বুঝে উঠতে পারছেন না যে তারা যা করছেন তা বৈধ কি না।
এই গাঁজাবিষয়ক পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এলো, যখন প্রধানমন্ত্রী পায়টংতার্ন শিনাওয়াত্রার নেতৃত্বাধীন ফেউ থাই পার্টি তাদের প্রধান জোটসঙ্গী ভূমজাইথাই পার্টিকে হারিয়ে রাজনৈতিক সংকটে রয়েছে।
যদিও ভূমজাইথাই রক্ষণশীল দল, তবুও তারা দীর্ঘদিন ধরে উদার গাঁজা নীতির সমর্থক ছিল।
চলতি মাসে পায়টংতার্ন ও সাবেক কম্বোডিয়ান নেতা হুন সেনের মধ্যে ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপকে কেন্দ্র করে ভূমজাইথাই পার্টি জোট থেকে সরে যায়।