মুক্তিকামী সকল রাজনৈতিক শক্তি ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীদার : নাছির

প্রকাশঃ Jul 6, 2025 - 13:32
মুক্তিকামী সকল রাজনৈতিক শক্তি ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীদার : নাছির

গণঅভ্যুত্থান আমাদের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দল-মত নির্বিশেষে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক এই অভ্যুত্থানের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন। মুক্তিকামী সকল রাজনৈতিক শক্তি ছিল এই অভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীদার। নিজেদের সর্বোচ্চটুকু শক্তি দিয়ে সফল করেছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থান। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে(বাসস) দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জুলাই অভ্যুত্থান সম্পর্কে এ কথা বলেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।

বছর ঘুরে আবারও জুলাই আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায়ের স্মৃতিচারণ করেছেন দীর্ঘ সময় অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হওয়া নাছির। তিনি  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৭-২০০৮ সেশনের স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন ছাত্ররাজনীতির সাথে। গত বছরের মার্চ মাসে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মনোনিত হয়েছেন। ফ্যাসিবাদী শাসনামলের দীর্ঘ লড়াই পেরিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের যে সূচনা, তাতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন নাছির। তারই মুখে অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের অংশগ্রহণের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে। 

বাসস: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কোন পর্যায়ে ছাত্রদল যুক্ত হয়েছেন?

নাছির: জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শুরু থেকেই কোটা বিরোধী আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে গেছে। আন্দোলনের শুরু থেকে আমাদের কৌশল ছিল, ছাত্রদলের যারা পরিচিত মুখ তারা সামনে আসবেনা। কৌশলগত কারণে ছাত্রদল শুরুতে সাংগঠনিকভাবে এই আন্দোলনে যেতে চায়নি। কিন্তু জুলাইয়ের ৮ তারিখে আমরা আন্দোলনের সমর্থনের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলাম। কোটার বিষয়ে আমরা আমাদের অবস্থান জানিয়েছিলাম সেদিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ সারা বাংলাদেশে জুলাইয়ে যে আন্দোলন হয়েছিল সেখানে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অবস্থান করেছিল। আমরা শুরু থেকেই চেয়েছি কোটা আন্দোলন যেন কোন রাজনৈতিক ব্যানারে না হয়। নাহিদ ও আসিফদের সাথে তখন এ বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে। জুলাইয়ের শুরু থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনকে একটি সাংগঠনিক ভিত্তি দেওয়ার চেষ্টা করেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম কমিটিতে ছাত্রদলের দুইজনকে রাখা হয়েছিল। সব ছাত্র সংগঠন থেকেই কয়েকজন করে সমন্বয়ক কমিটিতে রাখা হয়েছিল। পরে আবার ছাত্রদলের ৩ জনকে যুক্ত করেছিল সমন্বয়ক কমিটিতে। মোট ৫ জনকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটিতে দিয়েছে। আন্দোলনের নেতৃত্ব যারা দিয়েছে তাদের পরামর্শ ছিল ছাত্রদলের জুনিয়র কর্মীদের নাম যুক্ত করবে। কেননা সিনিয়র ছাত্র নেতাদের অনেকেই তখন ছাত্রদলের পরিচিত মুখ। 

বাসস: ১৪ জুলাই রাজাকার স্লোগান দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলগুলো থেকে মধ্যরাতে বেরিয়ে পড়ে। আন্দোলনের এই পর্যায়ে ছাত্রদলের প্রতি আপনাদের নির্দেশনা কী ছিল? 

নাছির: জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শেখ হাসিনা আন্দোলকারীদের রাজাকারের নাতিপুতি বলে সম্বোধন করেছিলন। তার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেদিন রাতে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মী তখন হলগুলোতে থাকতেন। অনেকের হলে থাকার সুযোগ ছিলনা। আগে থেকেই আমরা হলে থাকা শিক্ষার্থীদের সাথে যুক্ত ছিলাম। সে মিছিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের প্রতিটি নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেছিল। সেদিন রাতে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানের ‘কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’ অংশটি উপস্থিত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা যুক্ত করেছিল। শেখ হাসিনাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে সর্বপ্রথম ‘রাজাকার’ বলার দুঃসাহস দেখিয়েছিল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

বাসস: শহীদ আবু সাঈদ ও ওয়াসিম আকরাম এর মৃত্যুর খবর কিভাবে পেয়েছেন? 

নাছির: ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেদিন ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মীও আহত হয়। আহত শিক্ষার্থীদের ওপর ঢাকা মেডিকেল গিয়েও হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেদিন রাতে ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতারেরর শিকার হয়। গ্রেফতারের প্রতিবাদে পরদিন ১৬ জুলাই আমরা নয়াপল্টনে মিছিল করি ও একটি সংবাদ সম্মেলন করি। প্রোগ্রামে থাকাকালীন সময়ে আমরা রংপুরে আবু সাঈদ হত্যার কথা শুনতে পাই। এর কিছুক্ষণ পরে চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রদলের ওয়াসিম আকরামকেও খুনি হাসিনার পুলিশ হত্যা করেছে। সেদিন ওয়াসিম ফেসবুকে পোস্ট করেছিল ‘চলে আসুন ষোলশহর’। চট্টগ্রাম শহরে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। এভাবেই ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সারাদেশে আন্দোলনকারীদের ঐক্যবদ্ধ করেছিল। ওয়াসিমের এই পোস্ট পুরো ছাত্রদলকে প্রতিনিধিত্ব করছে। 

ওয়াসিমের শহীদ হওয়ার কথা সর্বপ্রথম আমাকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জানিয়েছে। পুরো বাংলাদেশে যেখানে আন্দোলন হয়েছে, সব জায়গায় ছাত্রদলের সব ইউনিটের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সারাদেশে আমাদের  নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া ছিল, তারা যেন আন্দোলনের শুরু থেকে যুক্ত থাকে। 

বাসস: ১৬ জুলাই রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হল থেকে বের করে দেয় শিক্ষার্থীরা। এই প্রক্রিয়ায় আপনাদের অংশগ্রহণ ছিল কী না? 

নাছির: ১৫ তারিখের হামলার পর আন্দোলন সামগ্রিক আন্দোলনে রূপ লাভ করেছে। এরপরই ঝাঁপিয়ে পড়ে আন্দোলনে যুক্ত থাকার নির্দেশনা দিয়েছি ছাত্রদলের প্রতিটি ইউনিটকে। ১৬ জুলাই রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে বিতাড়িত করা হয়। সেদিন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিব ভাই, আমি ও এখনকার এক ছাত্র উপদেষ্টার সাথে একাদিক মিটিং হয়েছে। মিটিং এর বিষয়বস্তু ছিল কিভাবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হল থেকে বের করে দেওয়া যায়। হলগুলো থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় ছাত্রদলের ব্যাপক অংশীদারিত্ব ছিল। এটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

বাসস: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়ার পর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ে। আপনাদের বেসরকারী ইউনিটকে কিভাবে যুক্ত করেছেন এই প্রক্রিয়ায়? 

নাছির: ১৭ তারিখের পর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনকে আরও বেগবান করেছিল। ছাত্রদলের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির ম