টানা বৃষ্টি আর কম সরবরাহে কাঁচা মরিচের দাম চড়া

সারা দেশের বাজারে আবারও কাঁচামরিচের ঝাঁজে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। মাঠে ফলন কম, টানা বৃষ্টি আর সরবরাহের অপ্রতুলতায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম ৪-৫ গুণ বেড়ে গেছে মেহেরপুর ও মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া, নওগাঁসহ বিভিন্ন এলাকায়। দৈনিক বাংলার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত;জুলফিকার আলী কানন, মেহেরপুর থেকে জানান, মেহেরপুরের বাজারগুলোতে সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ২০০ থেকে ২২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত বছরের এই সময়ে কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল বলে চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, চাহিদার চেয়ে বাজারে কাঁচামরিচের সরবরাহ কম। কৃষকদের কাছ থেকেই বেশি দামে কাঁচামরিচ কিনতে হচ্ছে। এতে প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।আর মরিচ চাষিরা বলছেন, এবার বৃষ্টিতে গাছের পাতা কুঁকড়ে যাওয়ায় কাঁচামরিচের ফলন আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে। বেশি দামে কাঁচামরিচ বিক্রি করলেও ফলন কম হওয়ায় লোকসানে পড়েছেন তারাশুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে গাংনী উপজেলা কাঁচামাল আড়তের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে মরিচের সরবরাহ কম। এ কারণে খুচরা বাজারেও কাঁচামরিচ কম। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১৯০ থেকে ২২৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। আর খুচরা বাজারে তা ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমে মরিচের এমন দামে অস্বস্তির মধ্যে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি মরিচ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় কিনেছেন তারা।গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী শাহাবুল ইসলাম শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে কাঁচামরিচ ১৯০ টাকা থেকে ২৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই সময়ে মরিচ প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় কিনছি।
গাংনী কাঁচাবাজারের আড়ত মালিক হাফিজুর রহমান ভিজা বলেন, এখন কাঁচামরিচের সরবরাহ কম, তাই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঠের অধিকাংশ মরিচ ক্ষেত শুকিয়ে গেছে। এখন যে দুয়েক জায়গায় মরিচ ক্ষেত অবশিষ্ট আছে সেগুলোর দাম বেশি।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রবীআহ সামসুল আলম বলেন, অতিরিক্ত খরা ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের কারণে মরিচগাছের পাতা কুঁকড়ে যেতে পারে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ছাড়া ব্যাকটেরিয়ানাশক ওষুধ ছিটানোর মাধ্যমে মরিচগাছের এ রোগ দূর করা সম্ভব।সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় গত এক সপ্তাহে কাঁচামরিচের দাম অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন। মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম প্রায় তিন গুণ বেড়ে গিয়েছে।সরেজমিনে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে কাঁচা মরিচের সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে অন্যান্য সবজির দামেও। এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ২০০-২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।সাটুরিয়ার ইউএনও মো. ইকবাল হোসেন বলেন, পণ্যের দাম অস্বাভাবিক এবং অতিরিক্ত মুনাফার আশায় বেশি দামে ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি বন্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁয় হঠাৎ বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৫ থেকে ৬ গুন দাম বেড়েছে এই কাঁচা পণ্যটির। বর্তমানে খুচরা বাজারে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ। শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে নওগাঁ পৌর খুচরা বাজার ও সিও অফিস ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগেও নওগাঁর বিভিন্ন হাটবাজারে কাঁচামরিচ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা আর খুচরা বাজারে ৩০ থেকে ৪০টাকা কেজি দরে। বর্তমানে সেই কাঁচামরিচ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা আর খুচরা বাজারে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে। এদিকে কাঁচা মরিচের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় অস্বস্থিতে পড়েছেন ক্রেতারা।শহরের সিও অফিস বাজার করতে আসা রায়হান আলম বলেন, যে মরিচ এক সপ্তাহ আগে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে কিনেছি, সেই মরিচ শুক্রবার (১১ জুলাই) ২৪০ টাকা কেজি দরে কিনেতে হচ্ছে। কালকেও ১২০টাকা কেজি নিয়ে গেছি অথচ আজকে দ্বিগুন দাম। বাজারের যে অবস্থা মনে হচ্ছে কাল পর্যন্ত ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি হবে।নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ৯৬৫ হেক্টর জমিতে কাঁচামরিচের চাষ হয়েছে।