চলমান প্রকল্পের দুর্নীতি ধরতে ব্যবস্থা চালু: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

কোনো প্রকল্প চলমান থাকা অবস্থায় অনিয়ম হলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) জরিপে ধরা পড়বে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। প্রথমবারের মতো এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ না করে এমন অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে—যার কাজ শেষ করতে দ্বিগুণ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। অনেক প্রকল্প আছে যেখানে বড় বড় দুর্নীতি হয়েছে। আগামীতে এসব দুর্নীতি রুখতে চলমান প্রকল্প জরিপে আইএমইডিকে কাজে লাগানো হবে।’জয়দেবপুর-আশুলিয়া বাস ট্রানজিট প্রকল্পের উদাহরণ টেনে উপদেষ্টা বলেন, এই প্রকল্পের পেছনে ইতোমধ্যে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের পরিকল্পনায় এত ত্রুটি রয়েছে—যা সমাধান করে কাজ শেষ করতে গেলে বাড়তি আরও তিন হাজার কোটি টাকা লাগবে।পায়রা বন্দর প্রকল্পের প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় চীনের যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে, সেই কেন্দ্রে কয়লা পরিবহনের জন্য সক্ষম কোনো চ্যানেল রাখা হয়নি। বারবার ড্রেজিং এর মাধ্যমে বাড়তি অর্থ খরচ করে কয়লা আনতে হচ্ছে। এ বিষয়ে সমাধানে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
রাজধানীর মেট্রোরেল প্রসঙ্গে ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, প্রায়ই মেট্রোরেলে কারিগরি ত্রুটি দেখা যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে হুট করে আধুনিক এসব প্রকল্প আনা হয় চমক দেখানোর জন্য। মেট্রোরেলে প্রযুক্তিগত সহায়তা হস্তান্তরের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। সরকার এখন এসব নিয়ে কাজ করছে।যেসব প্রকল্পে ইতোমধ্যে ঋণচুক্তি হয়ে গেছে সেখান থেকে ফিরে আসা মুশকিল উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা প্রকল্পের নামে জঞ্জাল পরিষ্কার করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এমনকি ঋণচুক্তি হয়ে যাওয়া প্রকল্পও সংশোধন করা যায় কিনা তা নিয়ে কাজ চলছে।’ওয়াহিদউদ্দিন জানান, ইতোমধ্যে সরকারি ক্রয়নীতি আইন সংশোধন করে পাস করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শতভাগ ই-টেন্ডার কার্যকর হবে। কারা প্রকল্পের কাজ পাচ্ছে এবং সেই কাজ প্রতিযোগিতামূলক হচ্ছে কিনা—সে ব্যাপারে স্বচ্ছতা আসবে।তিনি বলেন, ‘আগে দেখা যেতো হাতেগোনা তিন চারটি কোম্পানিই বারবার প্রকল্পের কাজ পাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক নির্মাণে ঘুরে ফিরে পরিচিত কয়েকটি ঠিকাদারি কোম্পানির নাম সামনে আসতো। তখন এমনভাবে টেন্ডার সাজানো হয়েছিল—যাতে করে এই কোম্পানিগুলোই বারবার কাজ পায়।’
দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে স্বীকার করে এ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা পরিসংখ্যান ব্যুরোকে দ্রুত একটি জরিপের জন্য বলেছি। জরিপ হাতে আসলে বোঝা যাবে ঠিক কী কারণে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। পরবর্তীতে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’২০২৫-২৬ অর্থবছরের উন্নয়ন ব্যয় (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় পুরোটাই কাজে লাগানো যাবে আশাবাদ ব্যক্ত করে ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, ‘অনেকে বলছেন বাজেটে খাতোয়ারি উন্নয়নের বরাদ্দ কমেছে। আগের বাজেটে যেসব বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল —তা ছিল বাস্তবতাবিবর্জিত। বছর শেষে দেখা যেতো উন্নয়ন ব্যয়ের বড় অঙ্কের টাকা খরচই হয়নি। এবারের বাজেটে বাস্তবতার নিরিখে এডিপি নির্ধারণ করা হয়েছে।চলমান প্রকল্পের বাইরে নতুন প্রকল্পের বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, নতুন যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সেগুলো আপাতত শুধু নথিভুক্ত করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজ আগামী বছরের আগে শুরু হবে না। তখন নতুন সরকার এসে সিদ্ধান্ত নেবেন—তারা এসব প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হতে চান কিনা।