অর্থায়ন সংকটে রোহিঙ্গা সংকট আরও গভীর হচ্ছে

মোঃ আহছান উল্লাহ
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য জাতিসংঘ ও সহযোগী সংস্থাগুলোর মানবিক সহায়তা কার্যক্রম মারাত্মক অর্থসংকটে পড়েছে। কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে খাদ্য, চিকিৎসা, সুরক্ষা ও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে ২০২৫–২৬ সালের জন্য ৯৩৪.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা আহ্বান করেছে জাতিসংঘ, যার বড় একটি অংশ এখনো অনুদান হিসেবে নিশ্চিত হয়নি।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (IOM)-এর যৌথ নেতৃত্বে ২০২৫ সালের মার্চে ‘Joint Response Plan’ (JRP) চালু করা হয়। এই পরিকল্পনায় কক্সবাজার এবং ভাসানচরে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও স্থানীয় হোস্ট কমিউনিটির জন্য মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। তবে, প্রয়োজনীয় তহবিলের বড় অংশ এখনও অনিশ্চিত।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সম্প্রতি কক্সবাজার সফরে এসে বলেন, “এই মানবিক সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে তা হবে এক ধরনের অপরাধ। এটি শুধু মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার হরণ নয়, বরং বৈশ্বিক মানবাধিকারের পরাজয়।”
বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু উন্নত দেশ এই সংকটে আংশিক সহযোগিতা দিলেও তহবিল সংকটের কারণে ইতোমধ্যে অনেক কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) রোহিঙ্গা পরিবারপ্রতি খাদ্য ভাতা কমিয়েছে, যার ফলে শিশুদের অপুষ্টি এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। জন্মদানের সময় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ওষুধ না পাওয়ায় মাতৃমৃত্যু হারও উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।
এদিকে, বাংলাদেশ সরকার অব্যাহতভাবে মিয়ানমারে স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। সম্প্রতি মিয়ানমার সরকার ১.৮ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার প্রস্তুতির কথা জানালেও নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চয়তার অভাবে অধিকাংশ রোহিঙ্গাই ফিরতে আগ্রহী নন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মানবিক সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ায় স্থানীয় হোস্ট কমিউনিটিতেও ক্ষোভ বাড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সীমিত ভূমিতে অবস্থান করায় পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক চাপে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
জাতিসংঘ এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, যদি অতিরিক্ত ৮১ মিলিয়ন ডলার দ্রুত সরবরাহ না হয়, তবে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই খাদ্য সহায়তা বন্ধ করে দিতে হবে। যা এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।
রোহিঙ্গা সংকট আজ আর শুধুমাত্র মানবিক নয়, এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং মানবাধিকারের প্রশ্নে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত সহযোগিতা ছাড়া এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।