জনতা ব্যাংকের টাকা লোপাট প্রমাণিত হলেও বহাল তবিয়তে সাজ্জাউল করিম সুজন

প্রকাশঃ May 28, 2025 - 14:44
জনতা ব্যাংকের টাকা লোপাট প্রমাণিত হলেও বহাল তবিয়তে সাজ্জাউল করিম সুজন

আমিন হাসান,কুষ্টিয়া
জনতা ব্যাংক কু‌ষ্টিয়ার কুমারখালী শাখায় কৃ‌ষি ও পল্লী ঋণের সুদ মওকুফের নামে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা লোপাটের ঘটনা তদন্তে প্রমাণিত হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন জড়িতরা। ২০২২ সালে তদন্ত শেষ হ‌লেও এখ‌নো আলোর মুখ দেখেনি সেই রিপোর্ট। অ‌ভি‌যোগ উঠে‌ছে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের তৎকালীন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যাপারটি ধামাচাপা দেন। আওয়ামী লীগ সরকার পত‌নের পর গত ২৭ এপ্রিল জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের একটি টিম টাকা লোপাটে ঘটনাটি আবারও তদন্ত করছে। সেই তদন্ত রিপোর্টকেও ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

২০২২ সালের তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, জনতা ব্যাংক,কুমারখালী শাখার অধিকাংশ কৃ‌ষি ও পল্লী ঋণ ২০০৮ সাল থেকে বিতরণ করা। ঋণ গুলি অনাদায়ী হওয়ায় ২০১২ সালে খেলাপী হয়ে যায়। তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক  ঋণগুলি খেলাপী না দেখিয়ে সুদ ইন্টা‌রেস্ট টাকা আয় খাতে নিতে থাকেন।
জনতা ব‌্যাং‌কের একটি সূ‌ত্র জানায়, ওই সম‌য়ের নারী শাখা ব‌্যবস্থাপ‌কের দেয়া অধিকাংশ ঋণ ভুয়া ছিল। এসব ঋণের বেশীরভাগ জমির দলিলাদি ও কাগজপত্র স্থানীয় কম্পিউটারের দোকান থেকে তৈরী করা। এজন‌্য পরবর্তিতে ঝামেলা হতে পারে ভেবে ব্যবস্থাপক ঋণ গুলি খেলাপী দেখান নাই।
তদন্ত ক‌মি‌টি সূ‌ত্র জানায়,২০১৪-১৫ সালে তৎকালীন শাখা ব‌্যবস্থাপক বদলী হলে কুমারখালী শাখায় ব্যবস্থাপক হয়ে আসেন আলমগীর হোসেন। তিনিও (আলমগীর হোসেন) আগের ব্যবস্থাপকের পথ অনুসরণ করেন। ত‌বে আলমগীর হোসেনের পরের ব্যবস্থাপকগণ খেলাপী ঋণগু‌লো চিহ্নিত করেন। এই শাখায় ২০২০-২১ সালে ব্যবস্থাপক হন সাজ্জাউল করিম সুজন। তিনি সুদ মওকুফের লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের টাকা জমা দিতে প্ররোচিত করেন। পরে ব্যবস্থাপক ঋণ হিসাবের কাল্পনিক একটি ম্যানুয়াল (হাতে লেখা) বিবরণী তৈরী করে সুদ মওকুফের জন্য প্রধান শাখায় পাঠায়। এবং প্রকৃততথ্য গোপন করে সুদ মওকুফ বাবদ ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার দু’শ ৫৯ টাকা বরাদ্দ করিয়ে নেন।
এই টাকা যথাস্থানে, যথারীতি জমা হচ্ছে কিনা, এটা তদন্ত করার জন্য প্রধান কার্যালয় দায়িত্ব দেয় কুষ্টিয়া এরিয়া অফিসকে।
সে সময় তদন্ত দল শাখা ব্যবস্থাপক সাজ্জাউল করিম সুজনের অর্থ আত্মসা‌তের প্রমাণ পান।
এছাড়া শাখাটির ক্যাজুয়াল লেবার রবিউল ইসলামের ব্যক্তিগত হিসাব নং- ০১০০০২৬৪৩৫৯২১ তে ৫২ হাজার ৮০ টাকা জমা দেখান। পরে সেই টাকা অন্য হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।
শাখা ব্যবস্থাপক অর্থ আত্মসাতের দায়ে ফেঁসে যাচ্ছেন ব্যাপারটি জানতে পেরে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের তৎকালীন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জব্বার ব্যাংকের তৎকালীন এরিয়া প্রধান অভিমুন‌্য কুমার মন্ডল‌কে ফোনে কাউকে দায়ি না করে স্বাভাবিক একটা তদন্ত রিপোর্ট দিতে বাধ্য করেন।ব্যাপারটি তখন ধামাচাপা পড়ে।
এ বিষ‌য়ে অ‌ভিমুন‌্য কুমার মন্ডল ব‌লেন,তদন্ত আমার পাঠা‌নো টিম ক‌রে‌ছিল। নাম ম‌নে নেই ত‌বে হেড অফিস থে‌কে একজন কর্মকর্তা আমা‌কে তদন্ত চাপ দি‌য়ে‌ছি‌লেন।

২০২২ সালের তদন্ত কমিটির প্রধান ও জনতা ব্যাংক কুষ্টিয়া এরিয়া অফিসের সাবেক সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আসলাম শেখ বলেন, তৎকালীন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জব্বার ব্যাংকের তৎকালীন এরিয়া অফিস প্রধানকে ফোনে ধমক দিয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া স্থগিত এবং কাউকে দায়ি না করে স্বাভাবিক একটা তদন্ত রিপোর্ট দিতে বাধ্য করেন। তিনি আরো বলেন, জনতা ব্যাংকের কুমারখালী শাখাটি লাভজনক ছিল। কিন্তু বিভিন্ন আওয়ামী ব্যবস্থাপকের অসদুপায় অবলম্বন করার কারণে শাখাটি লোকসানে পরিণত হয়েছে।
সূ‌ত্রে জানা গে‌ছে,আওয়ামী সরকা‌রের পত‌নের পর সাজ্জাউল ক‌রি‌মের অর্থ আত্মসা‌তের বিষ‌য়ে ব‌্যবস্থা নেওয়ার লি‌খিত অ‌ভি‌যোগ ক‌রেন ভুক্ত‌ভোগী এক ব‌্যক্তি। এরপর জনতা ব্যাংক প্রশাসন নতুন ভাবে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ এপ্রিল ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় থেকে একটি টিম তদন্তে আসে। বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে। আবারও তদন্তের বিষয়টি জানতে পেরে বর্তমানে কুষ্টিয়া এরিয়া অফিসে কর্মরত স্বাধীনতা ব‌্যাংকার্স প‌রিষ‌দ কু‌ষ্টিয়া এরিয়া ক‌মি‌টির সভাপ‌তি সাজ্জাউল করিম সুজন তদন্ত কার্যক্রম থামানোর চেষ্টা করছে বলে জনতা ব্যাংকের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
এব্যাপারে সাজ্জাউল করিম সুজন ব‌লেন,তদন্ত ক‌মি‌টির রি‌র্পোট অনুযা‌য়ি ৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। এরপর তি‌নি প্রতি‌বেদক‌কে সংবাদ প‌রি‌বেশন না করার জন‌্য অনু‌রোধ ক‌রেন। 
এ ব‌্যাপা‌রে প্রধান কার্যালয়ের তৎকালীন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জব্বা‌রের সা‌থে যোগা‌যোগ করার চেষ্টা করলে তার মু‌ঠো‌ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষ‌য়ে জনতা ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক(প্রশাসন) আব্দুল আলিম বলেন,কুষ্টিয়ার কুমারখালী শাখায় তদন্তের বিষয়ে আমি অবহিত না।
বর্তমান তদন্ত ক‌মি‌টির প্রধান জনতা ব‌্যাং‌কের সহকারী মহাব্যবস্থাপক না‌সির উদ্দিন মাহমুদ প্রতিবেদককে ব‌লেন,তদন্ত এখ‌নো চল‌ছে। রি‌র্পোট জমা দেওয়া হয়‌নি। সত‌্যতা পে‌য়ে‌ছেন কিনা জান‌তে চাইলে সব কথা ‌ফো‌নে বলা সম্ভব নয় জানান এই তদন্ত কর্মকর্তা।