পাকিস্তান শতাব্দীর শেষে অসহনীয় গরমে রূপ নিতে পারে

প্রকাশঃ Jul 30, 2025 - 12:48
পাকিস্তান শতাব্দীর শেষে অসহনীয় গরমে রূপ নিতে পারে

মোঃ তানভীর খান

চলতি বছরের জুলাইতে প্রকাশিত জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট ল্যাবের সর্বশেষ প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, শতাব্দীর শেষে পাকিস্তান অসহনীয় গরমের দেশে পরিণত হবে। আগামী এক দশক-দেড়েকের মধ্যেই দেশের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা বেড়ে ২২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাবে এবং ২১০০ সালের মধ্যে তা ২৬ ডিগ্রি অতিক্রম করবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে বছরে গরম দিন— অর্থাৎ যখন তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকে— ২০৩০ সালের মধ্যে গড়ে ১২৪ দিনে পৌঁছাবে। ২০৯৯ সালের মধ্যে সেই সংখ্যা হবে ১৭৯ দিন। তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপরে গেলে মানুষের দেহ ঘাম ঝরিয়েও স্বাভাবিকভাবে ঠান্ডা হতে পারে না, ফলে তাপঘাত ও মৃত্যুঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়।

মৃত্যুঝুঁকি দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা

ফয়সালাবাদে ২০২০ থেকে ২০৩৯ সালের মধ্যে প্রতি এক লাখে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অতিরিক্ত গরমে গড়ে ৩৬ জনের মৃত্যু হতে পারে। অভিযোজন ব্যবস্থা জোরদার না হলে শতাব্দীর মধ্যভাগে সেই হার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৬৭-তে পৌঁছাবে। এই হার পাকিস্তানে বর্তমানে স্ট্রোকজনিত মৃত্যুহারের সমান বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের পুরনো সতর্কবার্তা এখন বাস্তব

পাকিস্তান আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা নাদিম ফয়সাল জানান, ১৯৬০ সালের পর থেকে তাপমাত্রা ক্রমাগত বেড়েছে। শুধু তাই নয়, ২০১১ সালের পর থেকে দেশজুড়ে গরমের রেকর্ড ভাঙার ঘটনা হঠাৎ বেড়ে গেছে। মে-আগস্ট মাসে অস্বাভাবিক উষ্ণতার ধারা এখন নিয়মিত।

তার মতে, গত ৫৮ বছরে পাকিস্তানের গড় তাপমাত্রা ০.৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

হায়দরাবাদ হতে পারে বিশ্বের সবচেয়ে গরম শহর

জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২১০০ সালের মধ্যে সিন্ধুর হায়দরাবাদ শহর বিশ্বের সবচেয়ে গরম শহরে পরিণত হতে পারে। তখন এর গড় তাপমাত্রা হবে ২৯.৯ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা জেকবাবাদ, বাহাওয়ালনগর ও বাহাওয়ালপুরকে ছাড়িয়ে যাবে।

বসন্ত প্রায় বিলুপ্ত

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. গুলাম রাসুল বলেন, পাকিস্তানে বসন্ত ঋতু কার্যত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। “এ বছরও আমরা কোনো বসন্ত দেখিনি। কড়া শীতের পর সরাসরি ভয়াবহ গরম ও একের পর এক তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে।”

জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও পানির সংকট জটিল করছে পরিস্থিতি

১৯৫১ সালে পাকিস্তানে মাথাপিছু ৫,৫০০ ঘনমিটার পানি পাওয়া যেত। বর্তমানে তা নেমে এসেছে মাত্র ৮৫০ ঘনমিটারে। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও কৃষিজমি শহরে রূপান্তরের ফলে পরিবেশবান্ধব বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়ছে।

জলবায়ু ন্যায়বিচারের দাবি

পাকিস্তানের জলবায়ু মন্ত্রী শেরি রহমান জুলাই মাসে এক বক্তব্যে জানান, চলতি বছরের আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে পাকিস্তান ক্ষয়ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণের প্রশ্নটি জোরালোভাবে তুলবে। তিনি বলেন, “অভিযোজন তহবিল ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব হবে না।