মিরপুরের পিচ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়

ক্রিকেটের ২২ গজের মঞ্চে যে তিনটা ফরম্যাট রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-টোয়েন্টিতে। তবে সম্প্রতি এ ফরম্যাটে বেশ ভালো সময়ই কাটাচ্ছে লিটন দাসের দল। দেশ ও দেশের বাইরে- সব মিলিয়ে টানা দুই সিরিজ জয় করেছে টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে পিছিয়ে পড়েও দাপুটে জয়ে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে। এরপর ঘরের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করেছে লিটন দাসের দল। টেস্ট খেলুড়ে দুই দেশের বিপক্ষেই প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ।তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সামগ্রিক পরিসংখ্যান ঘাঁটলে বের হয়ে আসবে হতাশার প্রতিচ্ছবি। এমনই হাতে গোনা কয়েকটা সাফল্য ছাড়া বড় কিছু নেই বাংলাদেশের ঝুলিতে। বরং তিন ফরম্যাট মিলিয়ে টাইগারদের সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্স এই টি-টোয়ন্টিতে। আইসিসি আয়োজিত যেকোনা ইভেন্টে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ। এসব ব্যর্থতার পেছনে দায়ী করা হয় মিরপুরের স্লো আর লো উইকেটে খেলা। সাকিব আল হাসান একবার বলেছিলে মিরপুরে খেললে যেকোনো ব্যাটারের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলে অধিনায়ক লিটন দাসও সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন।যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ২০২১ বিশ্বকাপ। সে বার বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি হিসেবে ঘরে মাঠে অস্ট্রেলিয়ার, নিউজিল্যান্ডের মতো দলের সঙ্গে সিরিজ খেলেছিল। লো স্কোরিং ম্যাচে রীতিমতো দাপটের সঙ্গে সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা। তুমুল আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাংলাদেশ খেলতে যায় বিশ্বকাপ। কিন্তু ফল সেই পুরোনো বাংলাদেশ, ব্যর্থ বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের বিপক্ষেও বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছে এই মিরপুরের মাঠে। উইকেট নিয়ে রীতিমতো সমালোচনা হচ্ছে। পাকিস্তানের কোচ মাইক হেসন তো বলেই দিয়েছেন এটা কোনো আন্তর্জাতিক মানের পিচ হতে পারে না। তবে খেলা দেখে মনে হয়েছে পিচ খারাপ হলেও খুব বেশি খারাপ নয়। উইকেটে সময় কাটালে ভালো করা সম্ভব।
বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট মনে করেন এ ধরনের উইকেটে খেলে কোনোভাবেই বিশ্ব ক্রিকেটের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। সময়ের আলোকে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের এই উইকেটে আমরা ম্যাচ জিতেছি, সিরিজ জিতেছি, আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছি সব ভালো। কিন্তু এটা দিয়ে আবার বিচার করলে হবে না যে আমরা বিশ্ব মঞ্চে ভালো দল হয়ে গেছি। উইকেটে আপনাকে অনেক হেল্প করেছে। কোচ বলেছে আমি তার সঙ্গে এই জায়গায় একমত। তবে আমি মনে করি বর্ষাকালে এর চেয়ে ভালো উইকেট আর হবে না। এখানে ১৫০-এর ওপওে রান হওয়াটা অস্বাভাবিক। ১৫০ হলে আপনি তো সেভাবেই খেলবেন। পাকিস্তান তেমন খেলতে পারছে না, বাংলাদেশ দল কিন্তু সেভাবে খেলেছে। বিশ্ব ক্রিকেটে কিন্তু এখন ২০ ওভারে ২২০ থেকে ২৫০ রান এমনিতেই হয়ে যায়। সেই কথা চিন্তা করলে আমাদের বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে।’বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মনে করেন পাকিস্তান দলও পরিকল্পনা ছাড়াই ক্রিকেট খেলেছে। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় পাকিস্তান দল পরিকল্পনা ছাড়াই ক্রিকেট খেলেছে। বড় দল হলেই তো হয় না, অনেক টিম আছে যারা গোছায়ে ওয়ান টু ওয়ান পরিকল্পনা করে। পাকিস্তান একটু অগোছালো বোলিং করেছে।’টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার হিটিংয়ে বড় সমস্যায় পড়ে বাংলাদেশ। জাকের আলী সেই চাহিদা পূরণ করলেও এমন আরও ক্রিকেটার দরকার। খালেদ মাসুদ পাইলট মনে করেন রিশাদ হোসেন, তানজিম সাকিবকে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি পাওয়ার হিটিংয়ে মনযোগী হওয়া প্রয়োজন। পাইলট বলেন, রিশাদকে ভবিষ্যতের পাওয়ার হিটিংয়ে তৈরি করা উচিত। তানজিম সাকিবও ভালো ব্যাটিং করতে পারে। তাকে ভালো অলরাউন্ডার তৈরি করায় যেতে পারে। ব্যাটিং কোচের উচিত তাদের দিকেও ভালোভাবে নজর দেয়া।