ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে আগামী নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ হয়েছে

প্রকাশঃ Jun 13, 2025 - 23:15
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে আগামী নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ হয়েছে

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকটি সত্যিকার অর্থে একটি টার্নিং পয়েন্টে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।তিনি বলেন, এই বৈঠকে পর একটি যৌথ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সেখানে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে—দুই নেতার বৈঠকটি অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ হয়েছে।শুক্রবার (১৩ জুন) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে উপস্থিতি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।মির্জা ফখরুল বলেন, বৈঠকের আলোচনা বিষয়গুলোর মধ্যে প্রধান ছিল আগামী নির্বাচনের ইস্যু। সেখানে তারেক রহমানের প্রস্তাব ছিল, আগামী এপ্রিলে নির্বাচনের যে তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল, সেটা উপযুক্ত সময় নয় বিধায় এগিয়ে নিয়ে আসা। সেখানে জাতি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে লক্ষ্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা সম্মত হয়েছেন, তারা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আগামী নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারেক রহমান আবারও তার রাষ্ট্রনায়কোচিত গুণের প্রমাণ করেছেন।

তিনি বলেন, বৈঠকটি নিয়ে গোটা জাতি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিল, সেটিতে তিনি (তারেক রহমান) আল্লাহর রহমতে সফল হয়েছেন। আমি আমার দলের পক্ষ থেকে এবং সব নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে এই সভাটি করেছেন। তিনি এবং তারেক রহমান আবার সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, চতুর্দিকে একটা অনিশ্চিয়তা ছিল। অনেকে অনেক কথা বলছিলেন। আজকে দুই নেতা প্রমাণ করলেন যে, বাংলাদেশের মানুষ এখনো প্রয়োজনের সময়ে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে এবং নেতারা নেতৃত্ব দিতে পারেন।

‘জাতীয় ঐক্যকে আরও দৃঢ় করতে হবে’

মির্জা ফখরুল বলেন, অতীতে যেসমস্ত ছোটখাটো কথা-বার্তা হয়েছে সেগুলোকে ভু্লে গিয়ে সামনের দিকে জাতীয় ঐক্যকে আরও দৃঢ় করে আমরা যেন অতিদ্রুত একটা নির্বাচনে যেতে পারি। যাতে আমরা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে… অনুষ্ঠেয় সেই নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে যেতে পারি, জাতির যে আকাঙ্ক্ষা সেটা পূরণ করতে পারি এবং ১৫ বছরের এই ফ্যাসিস্টদের ধবংস করা ধবংসস্তুপের মধ্যে যে কাঠামো সেই কাঠামোকে নতুন করে একটা গণতান্ত্রিক কাঠামোতে রূপান্তরিত করতে পারি।

তিনি আরও বলেন,  এই বিষয়টা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ, আমরা প্রায় ১৫ বছর পরে গণতন্ত্রের উত্তরণে একটা সুযোগ পাচ্ছি… ট্রানজিশন টু ডেমোক্রেসি সেই পথে আমরা নিশ্চিত এগিয়ে যাচ্ছি।

গত ১৫ বছরে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে জীবনদানকারী নেতা-কর্মী ও জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আত্মত্যাগকারীদের সব শহীদ এবং দলের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি তারেক রহমান কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বৈঠকের পর আমাদের সাথে ওনার কথা হয়েছে। উনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

‘গণতন্ত্র একটি দিনের বিষয় নয়’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্র একটা দিনের ব্যাপার নয়। গণতন্ত্র হচ্ছে একটা চর্চার বিষয় …, এটা একটা কালচার সেই কালচার আমাদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। সারাক্ষণ আমাদের মধ্যে বকাবকি, গালিগালজ, সোশ্যাল মিডিয়াতে বকাবকি, ওমুকখানে বকাবকি না করে আসুন আমরা সবাই একসঙ্গে একযোগে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে আমরা দেশকে পুনর্গঠনের জন্য নতুন বাংলাদেশ গঠন করবার জন্য এগিয়ে যাই। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বপ্ন ও আমাদের নেতা তারেক রহমানের স্বপ্ন, যেসমস্ত শহীদরা প্রাণ দিয়েছেন তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি।

এই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মিডিয়া সেলের আতিকুর রহমান রুমন, শায়রুল কবির খান, চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন নসু প্রমুখ।

এদিকে ব্রিফিংয়ের পরে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, এই বৈঠকে আগামী রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে যে ফলপ্রসূ ঐকমত্য হয়েছে, তা অনিশ্চয়তা কাটিয়ে দেশের মানুষের জন্য এনেছে স্বস্তির বার্তা, নতুন আশার আলো।

তিনি বলেন, পুরো বাংলাদেশের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সংযোগ ঘটিয়ে এপ্রিলের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত সময় থেকে সরে এসে নির্বাচনের জন্য একটি যৌক্তিক সময়সীমা নির্ধারণের জন্য প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। তিনি জনগণের প্রত্যাশা উপলব্ধি করে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন — যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সবার আগে বাংলাদেশ— এই নীতিকে হৃদয়ে ধারণ করে  তারেক রহমান বরাবরের মতোই প্রমাণ করেছেন, তার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেশের স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতা।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন,  আমরা বিশ্বাস করি, বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের এই সৌহার্দ্য ও সহমতের মধ্য দিয়ে জয় হবে গণতন্ত্রের, জয় হবে বাংলাদেশের, জয় হবে জনগণের। এখন প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার নিজ অবস্থান অটুট রেখে আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি শুরু করবে।